এল কূটনৈতিক সাফল্য। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের জন্য অনুমোদন দিল আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট। ফলে তাহাউরকে ভারতে নিয়ে আসতে আর কোনও বাধা রইলো না। ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলায় তাঁর যোগ পেয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ২০০৯ সালে শিকাগোয় রানাকে গ্রেপ্তার করেছিলো এফবিআই। পাক-আমেরিকান জঙ্গি ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাহাউর। তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণের ফলে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে মনে করা হচ্ছে।
তাহাউর হুসেন রানা ৬৩ বছর বয়সী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন চিকিৎসক রানা ১৯৯০-এর দশকে কানাডায় চলে যান। সেখানে তিনি নাগরিকত্বও লাভ করেন। পরে তিনি আমেরিকায় গিয়েছিলেন। শিকাগোতে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস নামে একটি সংস্থাও চালু করেছিলেন। এই রানার বন্ধু ডেভিড হেডলি । হেডলি মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী। ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় হেডলিকে আমেরিকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
Advertisement
মুম্বইয়ে ওই নারকীয় জঙ্গি হামলার নেপথ্যে ছিল পাকিস্তানের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবা। ২০০৯ সালে, হেডলি এবং লস্কর জঙ্গি গোষ্ঠীকে সহায়তা করার জন্য আমেরিকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রানা।
Advertisement
এই প্রসঙ্গে বলা যায়, তাহাউর রানা ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় ধরেই সওয়াল করে আসছিল নয়াদিল্লি। ভারতের দাবি, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার এই নাগরিকই হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার ঘটনায় অন্যতম চক্রী। তাই ভারতের বিচারব্যবস্থার অধীনেই তাঁর বিচার হওয়া উচিত। তবে তাহাউর রানা প্রথম থেকেই ভারতের এই প্রত্যর্পণের দাবি অস্বীকার করে এসেছিলেন। এমনকী, ভারতে প্রত্যর্পণ ঠেকাতে আমেরিকায় একের পর এক আইনি লড়াইয়েরও করেছিলেন তিনি।
২০১১ সালে বিচার শুরু হয়েছিলো এবং ডেনিশ সংবাদপত্রে হামলার ষড়যন্ত্রে লস্কর-ই-তইবাকে সহায়তার কারণে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিলো। তবে, মার্কিন বিচারকরা তাকে মুম্বই হামলায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস করে দেয় । রানাকে ফেডারেল কারাগারে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো, তারপরে ৫ বছর পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। রানার আইনজীবী যুক্তি দেন যে হেডলি রানাকে প্রতারিত করেছিলেন, তার মক্কেল জানতেন না সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্রে জড়ানো হচ্ছে। যাই হোক, হেডলি একটি আপিল চুক্তির অংশ হিসাবে রানার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার ফলে তিনি মৃত্যুদণ্ড এড়াতে সক্ষম হন। এরপর ২০২০ সালের জুন মাসে মুম্বই নাশকতার ঘটনাতেই ফের রানাকে গ্রেপ্তার করে আমেরিকার পুলিশ। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে রানার তরফে জামিনের আবেদন জানানো হলেও বছর দেড়েক আগে তা খারিজ হয়ে গিয়েছিলো। ২০২১ সালে, বাইডেন প্রশাসন ভারতের অনুরোধকে সমর্থন করে। ফলে তাঁর প্রত্যর্পণের পথ প্রশস্ত হয়। অবশেষে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টও রানাকে প্রত্যর্পণের অনুমতি দিল।
Advertisement



