• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বিপজ্জনক ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ লাহোর, দূষণ সূচকে শীর্ষে পাকিস্তানের শহর

স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান পরিষ্কার বাতাস। কিন্তু লাহোরবাসীর সেই অধিকার আজ চরম সংকটে।

ছবি: এএনআই

পাঞ্জাবের আকাশ ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। পাকিস্তানের লাহোর ফের বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক বায়ুমান সূচক এই উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশের পর গোটা অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে দূষণের মাত্রা লাগামছাড়া, যার ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য দৈনন্দিন জীবনযাপন যথেষ্ট কঠিন হয়ে পড়েছে।

পাঞ্জাবের প্রাদেশিক দপ্তর জানিয়েছে, শহরের বিভিন্ন অংশে বায়ু সূচক কয়েক দফায় বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষত শাহদারা, গুলবার্গ, মল রোড, বাগবানপুরা এবং শহরের শিল্পাঞ্চল ঘন ধোঁয়ায় প্রায় সারাদিন ঢাকা থাকছে। সেখানকার বায়ু সূচক ৪০০–এর কাছাকাছি পৌঁছনোর ঘটনাও ঘটেছে, যা ‘খুবই বিপজ্জনক’।

Advertisement

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, একাধিক কারণে লাহোরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। শিল্পাঞ্চল থেকে নির্গত ধোঁয়া, ইটভাটার ধুলো, ক্রমবর্ধমান যানবাহনের ধোঁয়া, কৃষিজমিতে খড় পোড়ানো এবং শুষ্ক শীতকালীন আবহাওয়া— সব মিলিয়ে ধোঁয়া ঘনীভূত হচ্ছে। পাঞ্জাবে শীতের শুরুর দিকে বাতাসের গতি কমে যায়। ফলে দূষিত কণাগুলি নিচু স্তরে আটকে থাকে এবং শহরের উপরে ধোঁয়ার চাদর তৈরি হয়।

Advertisement

লাহোরের হাসপাতালগুলিতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডাক্তারদের মতে, চোখে জ্বালা, গলায় অস্বস্তি, তীব্র কাশি, হাঁপানির আক্রমণ এবং ফুসফুসে সংক্রমণের মতো সমস্যা হু হু করে বাড়ছে। শিশু, প্রবীণ এবং যাঁদের আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্র–সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘বাড়ির বাইরে বেরোতেই চোখ জ্বালা করছে। মনে হচ্ছে যেন সারাক্ষণ ধোঁয়ার আস্তরণের মধ্যে হাঁটছি।’

পাঞ্জাব প্রশাসন এই ধোঁয়া থেকে বাঁচতে জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে। স্কুল–কলেজ আংশিকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে, খোলা জায়গায় বড় সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং জরুরি বিভাগ ছাড়া অধিকাংশ অফিসে কর্মী সংখ্যার উপস্থিতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এদিকে শিল্পাঞ্চলে আচমকা তল্লাশি শুরু হয়েছে। নিয়মভঙ্গের অভিযোগে কয়েকটি ইটভাটা ও বর্জ্য–প্রক্রিয়াকরণ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কৃষিজমিতে খড় পোড়ানো আটকাতে স্থানীয় প্রশাসন গ্রাম পর্যায়ে নজরদারি বাড়িয়েছে।

পরিবেশ–বিশেষজ্ঞদের মতে, সমস্যার মূলে রয়েছে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব। তাঁদের বক্তব্য, ‘পাঞ্জাবের বড় শহরগুলিতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কোনও স্থায়ী পরিকাঠামো নেই। প্রতি বছর শীতের শুরুতে এই সংকট তৈরি হয়। কিন্তু শীত শেষ হতেই সমস্ত উদ্যোগ থেমে যায়।’ তাঁরা আরও বলেন, যানবাহনের ধোঁয়া নির্গমন নিয়ন্ত্রণ, শিল্প–খাতে দূষণ কমানোর কৌশল, সবুজায়ন এবং শহর পরিকল্পনার সংস্কার ছাড়া লাহোরকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।

এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান পরিষ্কার বাতাস। কিন্তু লাহোরবাসীর সেই অধিকার আজ চরম সংকটে। শহরজুড়ে মনের ভিতর ক্ষোভ জমছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধোঁয়া-সঙ্কট বারবার দেখা দিলেও প্রশাসন স্থায়ী সমাধানে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এক পরিবেশ কর্মী বলেন, ‘প্রতিবছর একই ছবি। দূষণে মানুষ অসুস্থ হয়, শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না, শিল্পাঞ্চল বন্ধ হয়। কিন্তু সমস্যা কমানোর মতো কোনও পরিকল্পনা নেই।’

পাঞ্জাব প্রশাসন বলছে, পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আবহাওয়ার পরিস্থিতি একই রকম থাকলে আরও কয়েক সপ্তাহ ধোঁয়ার দাপট একইরকম থাকতে পারে। তাই সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে লাহোরের দূষণ এখন পাকিস্তানের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যাওয়া শুধু এই শহরের নয়, বরং গোটা দেশের পরিবেশ সঙ্কটের একটি বড় ইঙ্গিত বহন করছে।

Advertisement