সাল ২০১৫। ইরাকের মসুলের পর সিরিয়ার রাকাতেও তখন কোণঠাসা ইসলামিক স্টেট। লাগাতার বিমান হানা চলছে। ভয়ঙ্কর আকাশযুদ্ধে ছিন্নভিন্ন সিরিয়া। একটি অডিও বার্তায় আইএস জানায়, জর্ডন বিমানবাহিনীর হানায় প্রাণ গেছে মার্কিন মানবাধিকার কর্মীর। নাম কায়লা জেন মুলার। ২০১৩ সালের সিরিয়া সীমান্ত থেকে যাঁকে অপহরণ করেছিল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্টের জঙ্গিরা। নিজের ডেরায় আটকে রেখে তাঁকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছিল আবু বকর আল-বাগদাদি। যৌনদাসী করে বারবার হাতবদল হয়েছিল আইএস-র ডেরায়। আইএস প্রধানের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর এই অভিযন উৎসর্গ করা হয় সেই তরুণীর নামেই।
অ্যারিজোনার প্রেসকটের বাসিন্দা কায়লা মুলার নর্দান অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক। তুখাের ফল করা এই মেধাবী ছাত্রী কলেজে থাকতে থাকতেই নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অ্যারিজোনার মানবাধিকার সংগঠনের হয়ে বিশ্বের নানা দেশে কাজ করেছেন কায়লা। ভারত ও তিব্বতে তাঁর অভিযান বেশি। মূলত ঘরহারা উদ্বাস্তুদের জন্যই তিনি কাজ করতেন। সিরিয়া ও আফ্রিকার আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল সক্রিয়।
Advertisement
২০১০ সাল। মধ্যপ্রাচ্যে নিজের টিম নিয়ে পৌছন কায়লা। তাঁর স্লোগান ছিল, বােমা নয়, খাবার চাই, আশ্রয় চাই। দক্ষিণ তুরস্কে সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের নিয়ে কাজ শুরু করেন ২০১২ সালে। সিরিয়া তখন রক্তাক্ত। আকাশ-বাতাসে বারুদের গন্ধ। অনাহার-অপুষ্টিতে মৃত্যু হচ্ছে শত শত শিশুর। গণধর্ষণে রক্তাক্ত হচ্ছে পাঁচ বছরের শিশু থেকে কিশােরীরা। সিরিয়ার আলেপ্পোতে এই মৃত্যুপথযাত্রীদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেন কায়লা।
Advertisement
২০১৩ সাল সিরিয়ার কজন ডাক্তারকে নিয়ে আলেপ্পোর হাসপাতাল ঘুরে তুরস্কে ফিরে আসছিলেন কায়লা। আলেপ্পোতে তখন লাগাতার বােমা বিস্ফোরণ হচ্ছে। বেশিক্ষণ সেখানে থাকা বিপজ্জনক। রাস্তাতেই তাদের গাড়ি ঘিরে ধরে জঙ্গিরা। অপহরণ করা হয় দু’জনকেই। পরে অবশ্য শােনা গিয়েছিল ডাক্তারকে নাকি ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু কায়লার কোনাে খবর মেলেনি। মার্কিন মানবাধিকার কর্মী কায়লা মুলারকে অপহরণ করে পরােক্ষে মার্কিন বাহিনীকে রম হুঁশিয়ারি দিয়ে চেয়েছিল আইএস। তাদের তরফেই নাকি বিবৃতি দিয়ে জানানাে হয় কায়লাকে বিয়ে করেছে আইএস-প্রধান। তবে এই খবরের সত্যতা জানা যায়নি। গােয়েন্দা সূত্র মারফত যে তথ্য সামনে এসেছিল তা আরও মারাত্মক। বছর ছাব্বিশের এই তরুণীকে নিজের যৌনদাসী বানিয়েছিল বাগদাদি। ডেরায় বেঁধে রেখে দিবারাত্র চলতাে ধর্ষণ।
কায়লার বাবা কার্ল মুলার ও মা মার্সার আবেদনে তখন সিরিয়া তােলপাড় করে কায়লাকে খুঁজছে মার্কিন ডেল্টা ফোর্স ও নেভি সিল। কিন্তু তরুণীর খােজ নেই। বারবারে ডেরা বদল করে কায়লাকে আড়াল করেছে আইএস। শর্ত রাখা হয়েছে, আইএস জঙ্গি ৮৬ বছরের আফিয়া সিদ্দিকিকে ছেড়ে দিলেই মুক্তি মিলতে পারে কায়লার। তবে আইএস-র এই শর্ত মানতে চাননি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
Advertisement



