• facebook
  • twitter
Monday, 28 July, 2025

গাজায় ইজরায়েলি হামলায় ৯০ জনের মৃত্যু, হামাসকে হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইজরায়েলি হামলায় ৯০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের তালিকায় রয়েছে মহিলা এবং শিশুও।

যুদ্ধ থামানোর কোনও প্রশ্নই নেই। হামাসকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করা পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাবে ইজরায়েল। এই সুরেই হুঁশিয়ারি দিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ফলে যুদ্ধ বন্ধের কোনও সম্ভাবনাই আপাতত রইল না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গত সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন প্রস্তাব দেয় ইজরায়েল। কিন্তু সেই প্রস্তাবের পাল্টা বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে হামাস। বিষয়টি একেবারেই ভালোভাবে নেননি নেতানিয়াহু। তাই তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, খুনিদের কাছে আত্মসমর্পণ করার কোনও প্রশ্নই নেই।

এই পরিস্থিতিতে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইজরায়েল। শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইজরায়েলি হামলায় ৯০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের তালিকায় রয়েছে মহিলা এবং শিশুও। বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরও ইজরায়েলি হানা থেকে রক্ষা পায়নি। খান ইউনিস, রাফার মতো শহরগুলিতেও হামলার প্রভাব পড়েছে। ক্রমাগত হামলার জেরে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর রাস্তাও বন্ধ হতে বসেছে। প্রাণ বাঁচাতে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পালাচ্ছেন অনেকে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, উপত্যকাটিতে অন্তত ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত কর্মীরাও হামলা থেকে বাঁচছেন না। ইজরায়েলের হামলা শুরুর পর অর্থাৎ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ৪০০ জনের বেশি সাহায্যকারী কর্মী ও ১ হাজার ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। মূলত সেই কারণে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে যুদ্ধকবলিত অঞ্চলেও মানবিক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে গাজা উপত্যকায় হামাসের পাল্টা প্রতিরোধে এক ইজরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছে আরও পাঁচজন, যাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।

শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় হামসাকে ‘খুনি’ বলে সম্বোধন করেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘হামাস পণবন্দিদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। ওদের দাবি মানার কোনও প্রশ্নই নেই। ওদের দাবি মানলে দেশ এবং দেশবাসী বিপদে পড়বেন। গাজায় হামাসকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হলে, তা ইজরায়েলের কাছে বড় পরাজয় এবং ইরানের বড় জয়।’ হামাসকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি ইরানকেও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকার বার্তা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি খুনিদের কাছে আত্মসমর্পণ করব না। যদি আমরা তাদের দাবির কাছে মাথানত করি তবে, আমাদের অর্জিত সব কৃতিত্ব হারিয়ে যাবে। হামাসকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করা পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাবে ইজরায়েল।’ গত কয়েকদিন ধরে গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইজরায়েল। কখনও আকাশপথে, কখনও আবার স্থলপথে হামলা চালানো হচ্ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

গত সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় ইজরায়েল। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী, মাস যদি ১০ পণবন্দি ইজরায়েলিকে মুক্তি দেয়, তবে বিনিময়ে কয়েকশো প্যালেস্টাইনি বন্দিকে মুক্তি দেবে তেল আভিভ। ৪৫ দিন হামলা বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। হামাস এই সব প্রস্তাব মেনে নিলেও পাল্টা শর্ত চাপায় ইজরায়েলের ওপর। গাজা শহর পুনর্গঠনের পাশাপাশি প্যালেস্টাইনি বন্দিদের মুক্তি ও ইজরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি তোলে তারা। স্থায়ীভাবে হামলা বন্ধেরও দাবি তোলা হয়। তবে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধ থামানোর কোনও প্রশ্নই নেই।