ইরানের সেনাঘাঁটি, পরমাণু কেন্দ্র সহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালাল ইজরায়েল। অন্তত ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে ইরানের বিভিন্ন এলাকায়। ইরানের রাজধানী তেহরানে তো বটেই, সংলগ্ন এলাকাতেও আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। হামলার পর তেহরান-সহ একাধিক শহরের বিমান বন্দরে উড়ান ওঠানামা বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ইজরায়েলি হানায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরির।
ইজরায়েলের হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের প্রধান কমান্ডার জেনারেল হোসেন সালামি এবং ডেপুটি কমান্ডার জেনারেল ঘোলামালি রশিদের। ইজরায়েলি হানায় প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের ছ’জন পরমাণু বিজ্ঞানীও। নিহত বিজ্ঞানীদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ফেরেউদুন আব্বাসি। ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ প্রত্যেকের মৃত্যুর খবরই স্বীকার করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় হামলার সম্মুখীন ইরান। এদিকে ইজরায়েলের এই হামলার সঙ্গে আমেরিকার কোনও যোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ইজরায়েলের হামলার পরেই প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই একটি বিবৃতি দিয়ে ইজরায়েলকে ‘কঠোর শাস্তি’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খারাপ পরিণতির জন্য ইজরায়েল যেন প্রস্তুত থাকে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে অন্তত ১০০টি ড্রোন ছুঁড়েছে ইরান। তবে সেগুলি আপাতত নিষ্ক্রিয় করছে ইজরায়েলি সেনা। অন্যদিকে জর্ডনের জাতীয় মিডিয়া জানিয়েছে, ইরানের বেশ কিছু ড্রোন এসেছে তাদের আকাশসীমাতেও। সেগুলি গুলি করে নামানো হয়েছে। বিধ্বংসী হামলার আশঙ্কায় ভুগছে ইজরায়েলও। ইতিমধ্যেই ইজরায়েলে ‘স্টেট অফ ইমার্জেন্সি’ বা জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ শুরু করেছে।
শুক্রবার সকালে অপারেশন রাইজিং লায়ন শুরু করে তেল আভিভ। ইরানের সামরিক ঘাঁটি এবং পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালানো হয়। এই আক্রমণ আসলে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তেহরানের তরফ থেকে লাগাতার পরমাণু হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেটা যতদিন পর্যন্ত না নির্মূল করা যায় ততদিন চলবে এই হামলা। আপাতত আগামী কয়েক ইরানের উপর হামলা চলবে বলেই জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। তীব্রতর এই হামলার কারণে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও, সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও স্পষ্ট নয়। ইজরায়েলের এক সেনা কর্তা জানিয়েছেন, ‘এই হামলায় ইরানের এক ডজনেরও বেশি সেনা ঘাঁটি-সহ পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্তজ বলেন, ‘ইরানের হামলা রুখতে আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।’ এদিকে দু’পক্ষের এই সংঘাতের মধ্যে জড়াতে নারাজ আমেরিকা। আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইরানে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। আমরা এই হানার সঙ্গে যুক্ত নই। ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সেনাবাহিনীকে সুরক্ষিত রাখাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। ইজরায়েল জানিয়েছে, আত্মরক্ষার স্বার্থে এই বিমানহানা জরুরি ছিল। আমাদের বাহিনীকে রক্ষা করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসন সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে।’ এদিকে এই হামলার পর ইরান এবং ইরাক নিজেদের আকাশসীমা পুরোপুরি বন্ধ দিয়েছে। এর ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বিমান পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ। একাধিক উড়ান সংস্থা নিজেদের বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে।
ইজরায়েলি হামলার প্রত্যাঘাতের পরেই রাষ্ট্রসংঘের দ্বারস্থ হয়েছে ইরান। শুক্রবার তেহরানের তরফে দাবি তোলা হয়েছে, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইজরায়েলি হামলা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হোক। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ইরানে থাকা ভারতীয়দের একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে ভারতীয় দূতাবাস। এক্স হ্যান্ডলে দূতাবাসের তরফে লেখা হয়েছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ইরানে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সতর্ক থাকার এবং দূতাবাসের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলের উপরে নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী সুরক্ষাবিধি মানতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’