ইরান-ইজরায়েল সাম্প্রতিক সংঘাতের পরে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে দেখা গেল ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে। শনিবার তেহরানের একটি প্রেক্ষাগৃহে শিয়াপন্থী ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বার্ষিক এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায় তাঁকে। বহুদিন পর পরিচিত পোশাকে ও মেজাজে তাঁর এই প্রকাশ্যে আগমন ঘিরে অনুগামীদের মধ্যে দেখা যায় উচ্ছ্বাসের চিত্র। ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম এই দৃশ্য সম্প্রচার করে।
গত ১৩ মে শুরু হওয়া ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের সময় এবং যুদ্ধবিরতির পর দীর্ঘ সময় খামেনেইকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তাঁর অনুপস্থিতি ঘিরে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছিল দেশে ও বিদেশে। যদিও একাধিক ভিডিও বার্তায় আমেরিকা ও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন তিনি, তবে সরাসরি কোনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। সূত্রের খবর, সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় রাজধানীর বাইরে একটি গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। নিরাপত্তার স্বার্থে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রও ব্যবহার করেননি বলেই জানা গিয়েছে।
শনিবারের অনুষ্ঠানে অবশ্য কোনও ভাষণ দেননি খামেনেই। সরকারি ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁকে দেখে অনুগামীরা মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে স্লোগানে মুখরিত হন। তাঁদের একাংশের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, ‘আমাদের রক্তে বইছে নেতা খামেনেই-এর আদর্শ।’ ইরানের রাজনৈতিক কাঠামোয় খামেনেই সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী। ধর্মীয় ও প্রশাসনিক সকল সিদ্ধান্তই তাঁর অনুমোদন সাপেক্ষে গৃহীত হয়। দেশের সামরিক বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তিনিই। যদিও তাঁর শাসনকালে দেশে মৌলিক অধিকার, বিশেষত নারীদের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার অভিযোগ তুলেছে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
ইজরায়েলের সঙ্গে চলা সাম্প্রতিক সংঘাত ইরানে এক নতুন জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নিয়ে যাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাও এখন ‘বহির্শত্রু’র বিরুদ্ধে সরকারের পাশে। এই আবহেই শনিবার খামেনেই এক প্রবীণ ধর্মগুরুকে অনুরোধ করেন, জাতীয় সঙ্গীত ‘ও ইরান’ পরিবেশন করতে। সঙ্গীতে গলা মেলান উপস্থিত সকলে।
প্রসঙ্গত, আয়াতোল্লা কোনও নাম নয়। এটি একটি পদ। ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া দেশ ইরানের সুপ্রিম লিডার হলেন ‘আয়াতোল্লা’। আসলে ইরানে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী থাকলেও গোটা দেশটি পরিচালনা করে সুরা কাউন্সিল। তার সদস্য ১২ থেকে ২৫ জন মৌলবী। আর তাঁদের মাথায় থাকেন ‘আয়াতোল্লা’। তাঁর ছাড়পত্র পেলে তবেই দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী কিংবা সেনাপ্রধান পদে মনোনয়ন মেলে। তারপর হয় নির্বাচন।
সাড়ে তিন দশক ধরে এই ‘আয়াতোল্লা’ পদে রয়েছেন আলি খামেনেই। আর এই ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে নিজের ক্ষমতার শিঁকড় গেঁড়েছেন ইরানের মাটিতে। সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনেছেন প্রশাসন, বিচারবিভাগ এবং সামরিক বিভাগের উপর।