• facebook
  • twitter
Wednesday, 10 December, 2025

গোপনে ঢাকা সফরে আইএসআই-এর শীর্ষ চার প্রতিনিধি, উদ্বেগ ভারতের

২০২৩ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে বুলেট আমদানির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার রাউন্ড। এবার সেটি ৪০ হাজার রাউন্ড আমদানি করা হয়েছে।

ফাইল চিত্র

হাসিনা সরকারের পতনের পর গত কয়েকমাসে বাংলদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। সেখানকার নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একদিকে দেশের মৌলবাদী শক্তির দৌরাত্ম্যের যেমন বাড়বাড়ন্ত হয়েছে, ঠিক তেমনি ভারত-বিরোধী রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলিকেও ক্রমশ কাছে টানার চেষ্টা করা হচ্ছে। একসময় যে পাকিস্তানের থেকে রেহাই পেতে ভাষা আন্দোলন ও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মতো রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে সামিল হতে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষকে, সেই পাক শক্তিকে পুনরায় বুকে টেনে নিয়ে আলিঙ্গন করছেন মুহাম্মদ ইউনূস। অনেকটা খাল কেটে কুমির নিয়ে আসার মতো পাকিস্তানের সেনা ও শীর্ষ গোয়েন্দা আধিকারিকদের ঢাকায় সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা।

সম্প্রতি ছয়দিনের পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শীর্ষ কর্তা। ১৩-১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তান সফরে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় জন সেনাকর্তা। তাঁরা সেই সফর সেরে ঢাকায় ফিরতেই মঙ্গলবার পাকিস্তান সেনা বাহিনীর চার সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকায় পৌঁছেছে। আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিকের নেতৃত্বে এই পাক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। তাঁদের তিন দিনের এই সফরে ইতিমধ্যে ঢাকায় একাধিক গোপন বৈঠক হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে। যা ভারতের পক্ষে যথেষ্ট উদ্বেগ কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সেনা কর্তাদের এই সফরের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়। পাক সেনার তরফে সেই ছবি প্রকাশ্যে আনা হয়। এরপরই বিষয়টি স্বীকার করে নেয় বর্তমান বাংলাদেশ সরকার। যদিও আইএসআই প্রধান-সহ পাক সেনাকর্তাদের পাল্টা ঢাকা সফর নিয়ে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।

Advertisement

চার সদস্যের এই পাক প্রতিনিধি দলে আইএসআই প্রধান ছাড়াও রয়েছেন আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল অ্যানালিসিস (ডিজি এ) মেজর জেনারেল শহিদ আমির আফসার, মেজর জেনারেল আলম আমির আওয়ান এবং এসএসজি-র কর্তা মহম্মদ উসমান লতিফ। একটি বিশেষ বিমানে চেপে গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টা নাগাদ ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছন তাঁরা। তাঁদের স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন বাংলাদেশ সেনার গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মেহদি।

সূত্রের খবর, বাংলাদেশের যুব সমাজকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আইএসআই-কে কাজে লাগাচ্ছে ইউনূস সরকার। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য, জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিয়ে মৌলবাদী আধিপত্য বিস্তার ও ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া। ইতিমধ্যে পাকিস্তান থেকে প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। গতবারের তুলনায় যার পরিমাণ সাড়ে তিনগুণ। ২০২৩ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে বুলেট আমদানির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার রাউন্ড। এবার সেটি ৪০ হাজার রাউন্ড আমদানি করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জামাত পরিচালিত ইউনূস সরকার প্রথম থেকেই ভারত বিরোধিতায় কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে পাকিস্তান। ইতিমধ্যে ইসলামাবাদ ইউনূস সরকারকে ‘শাহীন’ সিরিজ়ের ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশে গাজীপুরের সমরাস্ত্র নির্মাণের কারখানায় এই ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের হাতে পাকিস্তানি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকলে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম— দুই সীমান্তেই ভারতকে চাপে রাখা যাবে।

প্রসঙ্গত সম্প্রতি বাংলাদেশে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি মুহূর্তে কট্টরপন্থীদের ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে তারা। উদ্দেশ্য, শিলিগুড়ি করিডোর দখল করে ভারতকে দুই টুকরো করে দেওয়া। পাক সেনাবাহিনী উত্তর-পূর্ব ভারতকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করতে বাংলাদেশকে দাবার বোড়ের মতো ব্যবহার করছে। কারণ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দীর্ঘদিনের সুপ্ত বাসনা রয়েছে পাকিস্তানের। যাতে ভারতকে দুর্বল করে দেওয়া যায়। এমনটাই ধারনা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement