• facebook
  • twitter
Wednesday, 13 August, 2025

‘আস্তারা সীমান্তেই আছি, কীভাবে কলকাতা পৌঁছব জানিনা’

আমার অভিজ্ঞদের শুরু থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ম্যাডাম শান্তা দত্ত এবং পর্বতারোহী দেবাশীষ বিশ্বাস আমাকে সমস্তরকম সাহায্য করে আসছেন।

নিজস্ব গ্রাফিক্স চিত্র

ফাল্গুনী দে, আস্তারা ইরান-আজারবাইজান সীমান্ত

গতকাল থেকে ইরান-আজারবাইজান সীমান্তের আস্তারা চেকিং পয়েন্টে আটকে রয়েছি। তেহরানের হোটেলে থাকতেই খবর নিয়ে জেনেছিলাম, আজারবাইজানে ঢুকতে গেলে ই-ভিসা লাগবে। সেইমতো ২৫ হাজার টাকা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করে ই-ভিসা পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আস্তারা চেকিং পয়েন্টে এসে জানতে পারলাম, এই ই-ভিসা নিয়ে আমি আজারবাইজানে ঢুকতে পারব না। আমাকে বলা হল, এই ভিসায় শুধুমাত্র বিমানে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া যায়। কিন্তু সড়কপথে সীমান্ত পেরোতে হলে আজারবাইজান সরকারের ইমিগ্রেশন অফিসের দেওয়া একটি ‘মাইগ্রেশন কোড’ প্রয়োজন।

এটা জানার পরেই আমি সেই মাইগ্রেশন কোডের জন্য আবেদনও জানিয়েছিলাম। ইরান সরকার বলছে, ইরান থেকে আমি যেতে পারব। কিন্তু আজারবাইজান থেকে বলা হচ্ছে, ওই ‘মাইগ্রেশন কোড’ পেতে ১৫ দিন সময় লেগে যাবে। ভেবেছিলাম, মঙ্গলবার সন্ধ্যেয় আজারবাইজানে ঢুকতে পারব। সেখানে বাকুতে আমার হোটেল ঘর ভাড়া করা ছিল। আজারবাইজানে বাকু থেকে মুম্বই পর্যন্ত আমার বিমানের টিকিটও কাটা ছিল। তাও বাতিল হয়ে গিয়েছে। অনেকগুলো টাকা অহেতুক নষ্ট হল। এমনিতেই আমার টাকা-পয়সা কমে এসেছে। ফলে যদি আরও ১৫ দিন আমাকে এখানে অপেক্ষা করতে হয়, সেকথা ভেবে খুব দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। তেহরান থেকে চলে আসতে পেরে একদিকে যেমন শান্তি পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম, এবার আগুন, বোমা ও বারুদের হাত থেকে বাঁচা গেল। কিন্তু সেখান থেকে আসতে পারলেও এখানে এসে নতুন সমস্যার মধ্যে পড়লাম।

উল্লেখ করা দরকার, আমার অভিজ্ঞদের শুরু থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ম্যাডাম শান্তা দত্ত এবং পর্বতারোহী দেবাশীষ বিশ্বাস আমাকে সমস্তরকম সাহায্য করে আসছেন। এখন থেকে কীভাবে বেরোতে পারব, তাঁরাই সেসব খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং আমাকে জানাচ্ছেন। তেহরানে ভারতের দূতাবাসে রুদ্র গৌরব শ্রেষ্ঠার সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন। তাঁদের সাহায্যেই আজারবাইজান সরকারের কাছে আবেদন করেছি, যাতে কিছুটা গুরুত্ব দিয়ে আমার সমস্যাটা বিবেচনা করা হয়। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কিছুটা দ্রুত ‘মাইগ্রেশন কোড’ কি দেওয়া যায় না?

এর আগে জানিয়েছি, কীভাবে তেহরান থেকে লম্বা জার্নি করে রাস্তায় থামতে থামতে এখানে এসে পৌঁছেছি। ফলে শারীরিক ধকল গিয়েছে প্রচুর। দামাভান্দ পর্বত থেকে নেমে এসে শুধু টেনশনের মধ্যেই কেটেছে। তার জেরে শরীর ক্রমশ ভেঙে পড়তে চাইছে। হাজার হাজার মানুষ এখানে অপেক্ষা করছেন সীমান্ত পেরোবেন বলে। শুনেছি, আর্মেনিয়া সীমান্ত পেরিয়েও ভারতে ফেরা যায়। কিন্তু আর্মেনিয়া সীমান্তে পৌঁছতেও প্রায় দশ ঘন্টা লেগে যাবে। তার উপর সেখানেও কী নিয়ম কানুনের মধ্যে যেতে হবে জানিনা। তাই আপাতত আস্তারা সীমান্তেই থাকব। কবে কলকাতা পৌঁছতে পারব জানি না। ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছি।

(প্রতিবেদক পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামের বাসিন্দা। পেশায় দক্ষিণ কলকাতার উইমেন্স ক্রিশ্চান কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক। পর্বতারোহণ তাঁর নেশা।)