গ্রীষ্মকালে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে ইউরোপ জুড়ে। কার্যত এই মহাদেশের বড় অংশের নাগরিকদের নাজেহাল অবস্থা। গোটা মহাদেশ যেন একটি আগ্নেয়গিরির উপর দাঁড়িয়ে আছে। এমনটাই উপলব্ধি সেখানকার বাসিন্দাদের। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেকে। ফলে দিনের বেলায় অধিকাংশ ব্যক্তিরা তাঁদের কাজে যোগ দিতে পারছেন না। ইতিমধ্যে গরমের দাপটে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। চেক প্রজাতন্ত্রের নদীতে ভেসে উঠেছে মরা মাছ। পচা সেই মাছের গন্ধে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। ফলে ভুক্তভোগীরা এই গ্রীষ্মে ইউরোপে কাউকে বেড়াতে যেতে নিষেধ করছেন।
এই গরমের দাপটে পশ্চিম ইউরোপের পরে হাঁসফাঁস অবস্থা মধ্য ও পূর্ব ইউরোপেও। বসনিয়ার মস্টার শহরে শুক্রবার তাপমাত্রা পৌঁছয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জার্মানিতে সপ্তাহের মধ্যভাগে দিনের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সপ্তাহান্তে তা বেড়ে হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিসিলি দ্বীপে ২০২১ সালে তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সপ্তাহের মধ্যভাগে প্যারিসে দিনের তাপমাত্রা ৩৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে সবচেয়ে বেশি মাছের মৃত্যু লক্ষ্য করা গিয়েছে। গরম এবং অক্সিজেনের অভাবে এই ঘটনা ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রাগে ব্যাহত হয়েছে মেট্রো চলাচল। সেই সময় বেশ কয়েকজন যাত্রী লিফটে আটকে পড়েন। যদিও দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, গরমের কারণে এসি বেশি করে চালানো হচ্ছে বলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। আলবানিয়াতেও গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। অবাক করা বিষয় হল– এলবাসানে পুরসভার ফেলা আবর্জনায় আগুন লেগে গেলেও দমকলকর্মীরা সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। আলবানিয়া, বসনিয়া, মন্টেনেগ্রো, সার্বিয়া, হারজেগোভিনায় গরমের জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মন্টেনেগ্রোতে দিনের বেলা খাঁ খাঁ করছে রাস্তা, রেস্তরাঁ, ক্যাফে। ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, এ ভাবে গরম পড়লে লাটে উঠবে ব্যবসা। প্রজাতন্ত্রে উষ্ণতা বাড়তেই নদীতে মাছের মড়ক লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে থায়া নদীতে ভেসে উঠেছে মরা মাছ। গত সপ্তাহে এই নদী থেকে ৩০ টন মৃত মাছ সরানো হয়েছে।
ইতালিতে গরমের কারণে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। দুপুরবেলা বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না কেউই। নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডামে একটি ঐতিহাসিক বাড়ির এক তলায় গৃহহীনদের জন্য সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। জার্মানিতে গরমের জন্য কাজ কামাই করার আইন নেই। তবে সংস্থার কর্তারা কর্মীদের কথা ভেবে সময়ে ছাড় দিচ্ছেন। অনেক অফিসেই পাখা ছিল না। সেখানে ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মাণস্থলে ছায়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্পেনে তাপপ্রবাহ চলেছে গত সপ্তাহে। উদ্বেগ বাড়িয়েছে দাবানল। সে দেশে গরমে প্রাণ হারিয়েছেন চার জন। ক্যাফে, রেস্তরাঁয় কোনও ক্রেতা আসছেন না। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েক জন।