রাতভোর দফায় দফায় ছাত্র সংঘর্ষের জেরে ঢাকার জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। বিক্ষোভকারীদের উপরে হামলা, উত্তেজনা। পাল্টা ইউনূস সরকারকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সোমবার সকালেই আন্দোলনকারীরা হুমকি দিয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য মামুন আহমেদের পদত্যাগ সহ ৬ দাবি পূরণ করতে হবে। এর জন্য ৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দাবি পূরণ না হলে, আরও চরম পথে এগোবে বলেই হুঁশিয়ারি ছাত্রদের। অশান্তি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ-বিজিবি-সেনার যৌথ বাহিনী। এমনকী উপাচার্য, সহ-উপাচার্যদের বাংলো নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। রবিবার রাতভর পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় সোমবার বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত ৭টি কলেজের ক্লাস, পরীক্ষা সবই স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে ।
ঘটনার সুত্রপাত রবিবার রাতে। বেশ কয়েকদিন ধরেই ঢাকার ৭ টি কলেজের শাসন দাবি করে আসছিল ছাত্ররা। তাঁদের বক্তব্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকায় কলেজের শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। রবিবার সন্ধ্যায় ৭ কলেজের কয়েকশো শিক্ষার্থী ৫ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য মামুন আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে তিনি দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ।
Advertisement
এতে ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা প্রকাশ্যে তাঁর ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। তাতে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ঢাকার নীলখেত, পলাশির মতো এলাকার রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়েছিলো ছাত্র বিক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, বিজিবি নামানো হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজ ছাত্রদের ক্যাম্পাস থেকে বার করতে এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একে একে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করে। তাতেই দু-পক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে রাত তিনটে পর্যন্ত। ছাত্রদের ইট-পাথরের জবাবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড ফাটায়। তীব্র আওয়াজে আশপাশের মানুষের ঘুম ভেঙে গেলে অনেকেই পথে নেমে আসেন। দুইপক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন বলেই খবর।
Advertisement
সোমবার সকালে ৭টি কলেজের পড়ুয়ারা সাংবাদিক বৈঠক করে জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ইস্তফা দিতে হবে। এছাড়া গতকালের হামলার জন্য নিউমার্কেট থানা এলাকার ওসি, এসি সহ আধিকারিকদের বরখাস্ত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে। ৬ দফা দাবি পূরণ করার জন্য মাত্র ৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত আগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিল। সরকার পতনের পর বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাচ্ছে। এই কয়েকমাসে বাংলাদেশে শান্তি তো ফেরেইনি বরং অশান্তি বেড়েছে। আর এবার শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণের বিরোধিতায় জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতে এবার ছাত্র সংঘর্ষে উত্তাল হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Advertisement



