বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ দায়ের হল। শেখ হাসিনাসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিজের এই গুমের অভিযোগ জমা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
মঙ্গলবার (৩ জুন) ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গিয়ে সালাহউদ্দিন এই অভিযোগ জমা দেন। তিনি আওয়ামী লিগ নেত্রী ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ-সহ আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্রসঙ্গত সালাহউদ্দিন গত ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন। প্রায় দুই মাস পর ওই বছরের ১১ মে ভারতের শিলংয়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র ছাড়া প্রবেশের অভিযোগে মেঘালয় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা রুজু করে। ২০১৮ সালে নিম্ন আদালত সালাহউদ্দিনকে খালাস দিলেও, ভারত সরকার আপিল করায় তাঁকে মেঘালয়ের জেলেই থাকতে হয়।
অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে তিনি বলেন, এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গুম-খুনে জড়িত সবার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গুমের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যাঁরা প্তার হয়েছেন, তাঁদের সাজা এবং যাঁরা পালিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার অভিযোগ জমা দিয়ে সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, গুম, খুনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হবে। সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ যাঁরা গুমের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা নিশ্চিত করা এই সরকারের দায়িত্ব। সেই সঙ্গে গুম-খুনের সংস্কৃতি দেশ থেকে চিরতরে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। তবে এখনও এ বিষয়ে এখনও কোনও উদ্যোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই বিএনপি নেতা।
উল্লেখ্য, হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠিত হয়। দায়ের হয় একাধিক মামলা। হাসিনা, আসাদুজ্জামান-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ মে তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছিল ট্রাইবুনালে। রবিবার থেকে শুরু হল সেই বিচারপ্রক্রিয়া। বিচারক মহম্মদ গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল আগামী ১৬ জুন হাসিনা-সহ অভিযুক্ত তিন জনকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পলাতক হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় বাংলাদেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধেও।
সূত্রের খবর, হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই বাংলাদেশে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ ঘটানো হয়েছে বলে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছিল। প্রধান সরকারি আইনজীবী মহম্মদ তজুল ইসলাম বলেন, ‘হাসিনা গণহত্যা রুখতে ব্যর্থ হয়েছেন। সব ক’টি খুনই পরিকল্পিত। গণআন্দোলনকে দমন করতেই সে সব ঘটানো হয়েছিল।’