হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানার একেবারে শান্ত পরিবেশে মেঠো গ্রামের গ্রাম্য ছোঁয়ায়, বাগনান থেকে কমলপুর রোডের ধারে রুপনারায়ন নদীর সংলগ্ন খালের পাশের ব্রিজটা ক্রশ করলে শ্যামপুর ১ নং ব্লকের রাধাপুর গ্রামে রাধাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (উ: মা:)। ১৯৪০ সালে এলাকার কিছু বিদ্যোৎসাহী মানুষের উদ্যোগে স্কুলটি স্থাপিত। বিদ্যালয়ের প্লাটিনাম জুবিলির নিদর্শন স্বরূপ গেটটি আধুনিক শৈলীর এক আদর্শ উদাহরণ। বিদ্যালয়ের গেটের সামনে রয়েছে দুটি পাম গাছ যা বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আরও সাহায্য করেছে। সময়ের সাথে সাথে বিদ্যালয়টির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিদ্যালয়টি আগে এল প্যাটানের ছিল। একটি নতুন ভবন তৈরি হওয়ার ফলে বিদ্যালয়টি এখন ইউ প্যাটানের।
বিদ্যালয়টির মধ্যে রয়েছে অনেক প্রাচীন স্মৃতি, রয়েছে রাধাপুর গ্রামের সহজ সরল মানুষের ভালোবাসা আর জড়িয়ে আছে অনেক শিক্ষানুরাগীদের আন্তরিক সহযোগিতা। বিদ্যালয়টির জন্ম ইতিহাস ওখানকার মানুষের মুখে মুখে এখনও শোনা যায়। যাদের ত্যাগে বিদ্যালয়টি নিজের পরিচয় লাভ করেছে। হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানার রাধাপুর গ্রামের স্থানীয় দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত কৃষিজীবী, যারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের পরিবারের ও আশেপাশের নানান সম্প্রদায়ের, নানান ধর্মের, সমস্ত মানুষের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে এবং লেখাপড়া শিখে নিজেদের যোগ্য কাজ কর্ম করে নিজের পায়ে যেন দাঁড়াতে পারে ও শিক্ষাকে বহুমুখী প্রসারের জন্য স্থানীয় সুহৃদয, সুসংস্কৃতি ও দূরদর্শী সম্পন্ন কিছু মানুষ নিজের নিজের পরিবারের জমি দানের মাধ্যমে ১৯৪০ সালে এই বিদ্যালয়টি তৈরী করে।
এরপর এটি ধীরে ধীরে দশম শ্রেণীতে উন্নীত হয়ে ১৯৪৩ সালে উচ্চ বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এরপর WBBSE দ্বারা একটি সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে পরিনত হয় এবং বর্তমানে ১৯৯০ সাল থেকে কলা, বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য তিনটি ধারা সহ একটি উচ্চমাধ্যমিক (দ্বাদশ শ্রেণী) স্কুলে উন্নীত হয়। বৃত্তিমূলক ধারা ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদের অধীনে) শুরু হয়।
বিদ্যালয়টি হাওড়া জেলার একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত এবং পার্শ্ববর্তী পূর্ব মেদিনীপুরের থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসে। আর ভৌগোলিক দিক দিয়েও বিশেষ করে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে রাধপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কমলপুর, দুর্গাপুর, কালিদহ, মায়াচর (যার বেশির ভাগ অংশ পূর্ব মেদিনীপুরের অন্তর্ভুক্ত), গোবিন্দপুর, শ্যামপুর, বেলপুকুর, সশাটি, দ্যাওড়া, নাউল, বারগ্রাম প্রভৃতি নানা গ্রাম থেকে ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করতে এখানে ভীড় করে। শুধু যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারনে এই বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীরা ভর্তির জন্য ভীড় করে তা নয় স্কুলের পরিকাঠামো বিশেষত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবার আলাদা আলাদা বার্থ রুম, বিজ্ঞান বিভাগে এক্সপেরিমেন্ট করার সুসজ্জিত ল্যাবরেটরি, পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সব ক্লাসের বই পড়ার জন্য রিডিং রুমসহ লাইব্রেরি, কালচারাল অনুষ্ঠানের জন্য অডিটোরিয়াম, খোলা মঞ্চে অনুষ্ঠানের জন্য মুক্ত মঞ্চ, সাইকেল রাখার গ্যারেজ রয়েছে কমন রুম ও হোস্টেলের সুবিধাও।
ভৌগোলিক কারণ বা পরিকাঠামো ছাড়াও রয়েছে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ভালো পড়াশোনার ফলাফল। এই বিদ্যালয়ের বিশেষ করে কলা বিভাগের ফলাফল অত্যন্ত ভালো। তাছাড়া বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগে অধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের পরিশ্রম, ত্যাগ ও নিষ্ঠায় নিয়মিতভাবে ফলাফল উন্নতি হচ্ছে।
এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারি শিক্ষক-শিক্ষিকা, এমনকি চতুর্থ শ্রেণীর সকল কর্মচারী সবাই ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নতির জন্য সচেষ্ট। তাঁদের লক্ষ্য হলো আধুনিক বিশ্বের তরুণ নাগরিকদের সৃজনশীল মন গড়ে তোলা, অন্যদের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতার মানসিকতা তৈরী করা এবং তাদের বিশ্বাস অনুসারে কাজ করার সাহস বিকাশ করা ও সামগ্রিক উন্নয়নে উৎসাহিত করা! বিদ্যালয়ে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা খুব ধূমধাম করে হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীর চর্চাতেও রাধাপুর উচ্চ বিদ্যালয় রিতীমত দক্ষতার সাথে খেলার জগতে একটা জায়গা করে নিয়েছে। যদিও বিদ্যালয় থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নদীর পাড়ে, চরের উপর রয়েছে খেলার মাঠ। ওই মাঠেই চলে নিয়মিত অনুশীলন। ছাত্র-ছাত্রীরা ফুটবল, খোখো, ক্যারাটে নানান খেলাধুলায় নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে এখনও দিচ্ছে।
বিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস পালন, প্রজাতন্ত্র দিবস পালন, নেতাজি জন্মদিন স্মরণ করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মনিষীদের ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা ও অন্যান্যদের নিয়ে কালচারল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরন করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিবস পালন ও বাৎসরিক অনুষ্ঠান হয়! বিদ্যালয়ের শিক্ষামূলক ভ্রমণ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিদ্যালয়ে students week পালন, বিদ্যালয়ে খাদ্যমেলা খুব জনপ্রিয় লাভ করেছে। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্থানীয় মানুষ সবাই বিদ্যালয়ের খাদ্যমেলায় খাবার কেনে। এতে একদিকে যেমন ছাত্র ছাত্রীরা বাস্তব শিক্ষা লাভ করে, তেমনি হাতে তৈরী খাবার মানুষ খেয়ে তৃপ্তি পায়। তাছাড়া বিদ্যালয়ের বাৎসরিক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় যাতে ছাত্র ছাত্রীদের সৃষ্টি ও সৃজনশীলতা বিকাশ ঘটে!