ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কোচবিহার নিয়ে বাড়তি নজর দিতে চাইছে তৃণমূল। সীমান্তবর্তী এই জেলাটি দীর্ঘদিন ধরেই সাম্প্রদায়িক এবং অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিদ্ধ। চব্বিশের লোকসভা ভোটে কোচবিহার নিজের দখলে রাখতে সমর্থ হয়েছিল তৃণমূল। ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনেও নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া শাসক দল। তাই রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ভিত জোরদার করতে কোচবিহার সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, লোকসভা নির্বাচনের পর উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণ ঝালিয়ে নেওয়া এবং প্রশাসনিক কাজের গতি পর্যালোচনা করাই এই সফরের মূল লক্ষ্য৷
আগামী ৮ ডিসেম্বর অর্থাৎ সোমবার কোচবিহার যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন এবং তৃণমূল সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। কর্মসূচি শেষে মঙ্গলবারই কলকাতায় ফিরবেন তিনি। প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক জনসভাও করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নবান্ন সূত্রে খবর, কোচবিহার পৌঁছে মমতা প্রথমে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে জেলার সামগ্রিক উন্নয়নের কাজের খতিয়ান নেবেন প্রশাসনিক প্রধান। কোচবিহার জেলা প্রশাসনকে এই বৈঠকের জন্য প্রস্তত থাকার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। গ্রামীণ রাস্তাঘাট, পানীয় জল এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে জনসভা করার কথা রয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২৮ অক্টোবর থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে বিশেষ নিবিড় সংশোধন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলায় একাংশের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
এই প্রক্রিয়ায় অসতর্কতার কারণে বৈধ নাগরিকদের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। কোচবিহার সীমান্তবর্তী জেলা এবং এখানে রাজবংশী এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের এক বড় অংশের বসবাস রয়েছে। ইতিমধ্যেই মতুয়াগড় বনগাঁর ঠাকুরনগরে মিছিল এবং জনসভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একজনও বৈধ নাগরিকের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাবে না, আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। কারও নাম বাদ গেলে ভারতবর্ষ হেলিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
এবার কোচবিহারে সভা করতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই কোচবিহার সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। অতীতে এনআরসি ও সিএএ ইস্যুতে উত্তরবঙ্গের এই জনবিন্যাস রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিল। তাই রাসমেলা ময়দান থেকে ওই দিন এসআইআর এবং নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
মমতার সফর নিয়ে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ সময় পর মুখ্যমন্ত্রী রাসমেলা ময়দানে সভা করছেন৷ তাই এই সমাবেশকে ঐতিহাসিক করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য৷ অতীতে মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার শহরে এলেও মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে চলে গেছেন৷ এবার তিনি সরাসরি জনগণের মুখোমুখি হবেন৷ এই সভাকে সফল করতে ১ ডিসেম্বর থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে৷’
তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত ও পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে রবীন্দ্রভবনে বিশেষ প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়েছে৷’ কোচবিহারে তৃণমূলের শক্তঘাঁটি গড়ে তুলতে এবং বিধানসভায় জয় পেতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যে মমতার এই জনসভাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। পঁচিশেই ছাব্বিশের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সবুজ দল।
Advertisement



