প্রবীর ঘোষাল
ছেলেবেলা থেকেই ভ্রমণের ব্যাপারটা আমাদের পারিবারিক নেশা। মা-বাবার সঙ্গে আমরা ভাই-বোনেরা খুব বেড়িয়েছি। কাছে-দূরে তার কোনও বাছ-বিচার ছিল না। বেনারস-হরিদ্বারে গিয়ে মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খেয়েছি। আবার ওয়াগন ভ্যানে চেপে শীতে তিন পরিবার মিলে মাইথন-হাজারিবাগ ঘুরেছি। শীতের রাতে মায়েদের হাতে তৈরি মুরগির মাংস আর গরম গরম ভাত আজও জিভে লেগে রয়েছে। পুজোর ছুটিতে দক্ষিণ ভারত, রাজস্থান, কেদারনাথ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বেশ মনে পড়ে।
স্কুলজীবন শেষ করে কলেজে পড়ার সময় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ভ্রমণের নতুন নতুন এপিসোডেও বেশ অ্যাডভেঞ্চার ছিল। একবার ১৭ জন বন্ধুর দল সাইকেলে কোন্নগর থেকে দিঘা পাড়ি দিলাম। দারুণ ব্যাপার। ১৮০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। কঠিন শীত। তখনও কোলাঘাট ব্রিজ হয়নি। কাকভোরে রওনা হয়েছি। সন্ধ্যার মুখে পৌঁছলাম রূপনারায়ণ নদীর কিনারায়। এতগুলো সাইকেল পার করতে নৌকার মাঝি রাজি নয়। আসলে অনেক টাকা চাইছিল। আমাদের পকেটে টান। অগত্যা রাতের আস্তানা খুঁজতে হল। জুটল একটি প্রাথমিক স্কুল। সম্ভবত বসন্তপুর নামের গ্রামে। মাটির বড় ঘর। ঘরের একপাশে খান দশেক ছাগল বাঁধা। সেই ঘরেই রাত্রিযাপন। বাইরের মাঠে কাঠ জ্বেলে খিচুড়ি রান্না। হাঁড়ি, হাতা, খুন্তি সবই সাইকেলে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শীতের রাতে শরীর কাঁপলেও, রান্না করে খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে ছিল বনভোজনের মেজাজ। ছাগলদের সঙ্গে একই ঘরে রাত্রিযাপন কেমন হতে পারে, সেটা এখন ভাবলে অবাক হই!
পরের দিন বিকেলের মধ্যেই দিঘা পৌঁছে গিয়েছিলাম। এই সেদিন জগন্নাথধাম উদ্বোধনের সময় সমুদ্র-শহরে গিয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালে দেখা দিঘার সঙ্গে আকাশ-পাতালেরও অনেক বেশি পার্থক্য। সে সময় ছিল হাতে গোনা কিছু হোটেল। তাও তেমন বড়সড় হোটেল নয়। মাথা গোঁজার মতো জায়গা আর কি! আমাদের অবশ্য নিদারুণ অর্থাভাব। পকেটে ৩০ টাকার বেশি নেই। একেবারে সমুদ্রের ওপর বালুচরে ত্রিপলের ছাউনি। নিচে খড়ের ওপর ত্রিপল পাতা। তার ওপর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া চাদরে শোওয়া। মাথার বালিশ বলতে নিজেদের ব্যাগ। থাকা, দু’বেলা খাওয়া নিয়ে মাথাপিছু ৮ টাকা। একবেলা ভাতের সঙ্গে মাছও ছিল। এখন কেউ ভাবতে পারবে? রাতে বালির ঠান্ডায় হাড়ে কাঁপুনি ধরে যায়। তবু সই। তখন তো রক্তের গরম ভীষণভাবে কাজ করছে। দু’দিন দেদার আনন্দ করেছিলাম। সমুদ্রে স্নান, সাইকেলে দিঘার আশপাশ ঘুরে বেড়ানো, সবই হয়েছিল। তবে তখন রাস্তার হাল ছিল খুব খারাপ। তারপরে অবশ্য কতবার যে দিঘা গিয়েছি, তা গুণে শেষ করা যাবে না।
দিঘার পর বাংলার আর একটি দ্রষ্টব্য পর্যটনকেন্দ্র দার্জিলিং ভ্রমণও ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। সে গল্প বলব। তার আগে জানিয়ে রাখি পরবর্তীকালে সাংবাদিকতার পেশায় পদার্পণের পর আমেরিকা-আফ্রিকা-ইউরোপ সবই ঘোরা হয়েছে ঈশ্বরের আশীর্বাদে। কিন্তু দেশ কিংবা নিজের রাজ্যেও বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেছি চুটিয়ে। কোনও আক্ষেপ নেই। এক একটা ট্যুরের এক একরকম অভিজ্ঞতা। প্রকৃতি ভীষণ টানে, এটা হল মানসিকতার ব্যাপার।
সম্প্রতি উত্তর ইউরোপের চারটি দেশ ঘুরে আসার দিন কয়েকের মধ্যে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় অঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রামের নির্জন রিসর্টে গিয়েছিলাম। সে সময় পরিচিত একজনের ফোন এল। কোথায় আছি জানতে চাইল। বললাম। শুনে হেসে বলল, ‘তুই পারিস বটে। এই তো সেদিন প্যারিস থেকে ফিরলি। তার রেশ কাটার আগেই চলে গেলি পুরুলিয়ায়?’ আগেই বলেছি, সব জায়গার আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। ভারতের কাঞ্চনজঙ্ঘা আমার সুইৎজারল্যান্ড কিংবা অস্ট্রিয়ার পর্বতমালার চেয়ে সৌন্দর্যে কোনও অংশে কম মনে হয়নি। ঠিক তেমনই কেনিয়ার মাসাইমারার মতোই ডুয়ার্সের জঙ্গলও আমাকে মুগ্ধ করে। পরপর উত্তরবঙ্গে যাই সেই কারণে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়্যাল বেঙ্গল রহস্যও কম কিসের!
প্রথম বিদেশ সফর বলতে পড়শি দেশ। বাংলাদেশ। থুড়ি তার আগে একবার থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম বটে। আসলে ঢাকাযাত্রা ছিল ঐতিহাসিক কারণে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রীর প্রতীক ‘সৌহার্দ্য’ বাসের প্রথম গমন এবং প্রত্যাগমন। অটলবিহারী বাজপেয়ী তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৯ সালে ১৯ জুন সকালে সল্টলেক থেকে দু’টি ভলভো বাস চলা শুরু করে। সেই ‘সৌহার্দ্য’ নামের বাসের যাত্রী হওয়ার সৌভাগ্য এই প্রাক্তন সাংবাদিকের হয়েছিল। আমার পাশের আসনটি নির্দিষ্ট হয়েছিল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রয়াত ড. অম্লান দত্তের জন্য। পণ্ডিত মানুষ। বাসে বসে কত গল্প যে যাওয়ার এবং আসার সময় হয়েছিল, তা ভোলবার নয়।
সেবার ঢাকায় একটা কাণ্ড হয়েছিল। বনগাঁ হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে পৌঁছই পদ্মাপারে। সেখান থেকে বাস সহ বিশাল লঞ্চে ঢাকা। বিকালের মধ্যেই গন্তব্যে চলে যাই। দু-রাত বাংলাদেশের রাজধানীতে কাটিয়ে দেশে ফেরা। ফেরার সময়ের ঘটনার কথাই বলতে চাইছিলাম। বাসের এক যাত্রী নিখোঁজ! তিনি আবার যে সে যাত্রী নন, বামফ্রন্ট সরকারের এক মন্ত্রীর কন্যা। আসলে আমাদের ভিসার সময়সীমা বাস যাত্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সব যাত্রীকেই একই বাসে ফিরতেই হবে। পুলিশি তৎপরতার পর জানা গেল, এক আত্মীয়ের বাড়িতে মেয়েটি আনন্দে মেতে আছেন। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে আনার পর ২ ঘণ্টা লেটে বাস ছাড়ল।
বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার আমলের পরেও আরও দু’টি অনুষ্ঠানে ঢাকায় উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। ভারতের আরও দু’জন প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন। দেবগৌড়া এবং নরসিমা রাও। দেবগৌড়া গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে ফারাক্কা জলচুক্তি করতে। দেশের তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী ছিলেন। ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হল। তারপর আমরা কলকাতার দুই সাংবাদিক বাংলাদেশের মন্ত্রীর ঘরে ডাক পেলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন সে সময় যুগান্তর কাগজের প্রয়াত কমল ভট্টাচার্য।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ, যাঁরা নিজেদের এলিট ক্লাস হিসাবে দেখেন, তাঁদের কবি এবং লেখক হওয়ার প্রবণতা প্রচণ্ড। অন্তত আগে যতবার সে দেশে গেছি, এটা লক্ষ্য করেছি। আমাদের দুই সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্যেই মন্ত্রীমশাই (সম্ভাব্য নাম রফিকুর রহমান) জানতে চাইলেন, তাঁর লেখা বইগুলি পড়েছি কিনা। আমাদের উত্তর স্বাভাবিক কারণেই ছিল, ‘না’। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বেল টিপে ঘরে আর্দালিকে ডাকলেন। আমাদের তাঁর লেখা বইগুলি দিতে বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দপ্তরের সেই কর্মচরী ফিরে এলে মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বললেন, ‘বই নাই!’ উত্তেজিত হয়ে মন্ত্রী তাঁকে ভর্ৎসনা করলেন এবং অবিলম্বে আমাদের হোটেলের ঠিকানা নিয়ে সেখানে বই পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বললেন।
প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া ঢাকা পৌঁছনোর কয়েকদিন আগেই আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তার কারণ ছিল, আগেরবার ওখানে গিয়ে শহরটা ভালো করে ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি। কারণ, মাত্র দু’দিন ছিলাম। আর এবারে হাতে সময় নিয়ে এসেছি। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হলে, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে ফাইভস্টার হোটেলে। এক্ষেত্রে আমি দিল্লি থেকে সফরসঙ্গী না হয়ে, কলকাতা থেকে এসেছি এবং একটা সাধারণ হোটেলে উঠেছি।
হোটেল মালিক আমাকে কিছুটা সন্দেহের চোখে দেখছিলেন। কারণ, হোটেলে দুপুরে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ঘুরে গেছে। আমার পাসপোর্ট তাঁরা পরীক্ষা করেছে। হোটেল মালিককে পুলিশ বলে দিয়েছে, ‘আমার গতিবিধি যেন তিনি নজরে রাখেন।’ আসলে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী না হয়ে, কেন আমি কলকাতা থেকে সোজা এসেছি এবং সাধারণ হোটেলে উঠেছি, সেটাই ছিল গোয়েন্দাদের সন্দেহের কারণ। দিনের শেষে যখন আস্তানায় ফিরতাম, তখন হোটেল মালিক কেমনসব গোয়েন্দাসুলভ প্রশ্ন করতেন। আমি ঠিক বুঝতে পারতাম না, কেন এই সন্দেহ!
ভুল ভাঙল, সেদিন রাতে। সকাল থেকে দেবগৌড়ার অনুষ্ঠান, মন্ত্রী মশাইয়ের সাক্ষাৎকার খবর পাঠিয়ে এবং খানাপিনা সেরে বেশ রাত হল হেটেলে ফিরতে। ফিরেই এক মজাদার ঘটনার মুখোমুখি। হোটেল মালিক, তাঁর নাম নসিবুর। মাঝবয়সী। আকণ্ঠ মদ্যপান করে বসে আছেন। আমাকে দেখে লম্বা টেবিলের পাশ দিয়ে হেঁটে না এসে, তার ওপর দিয়ে সদর্পে চলে এলেন। টেবিলের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। দু’জনেই পড়ে যাচ্ছিলাম। দেওয়াল ধরে রক্ষা পেলাম। নসিবুর কাঁদতে শুরু করেছেন। আর বলে চলেছেন, ‘আমি আপনাকে ভুল বুঝেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ আমি কিছু না বুঝেই বলছি, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক আছে।’ আসলে মাতালের বাহুবন্ধন থেকে মুক্তির চেষ্টা করছি। হোটেল মালিকের এই অস্বাভাবিক আবেগের কারণ তাঁর মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘আরে দাদা আপনি তো ভিআইপি। আজ সারাদিনে চারবার পুলিশের লোকজন মন্ত্রীর বই দিতে এসেছিল। আপনাকে তাঁরা হন্যে হয়ে খুঁজছে।’ বুঝলাম যে দেশের পুলিশমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর বাহিনী যে কার্যকলাপ করেছে তাতেই নসিবুরের আমার প্রতি সন্দেহ উঠে গিয়ে, মনে জমা হয়েছে ভয়ঙ্কর এক ভক্তিরস!
অনেক কষ্টে নিজেকে মুক্ত করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম দোতলায়। নিজের ঘরে ঢুকে বাথরুম সেরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে শুয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙল বেশ কিছুক্ষণ পরে। ঘরের বাইরে থেকে কেউ বেল টিপেছে। দরজা খুলে বেজায় অস্বস্তিতে পড়লাম। দু’জন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসের (আইপিএস সমগোত্রীয়) অফিসার। সঙ্গে চার-পাঁচজন ইন্সপেক্টর। সবাই পুলিশের উর্দিতে আমকে স্যালুট দিচ্ছেন। আমিও লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘুমের ঘোরে তাঁদের স্যালুটের মাধ্যমে সম্মান বিনিময় করলাম। এক অফিসার এগিয়ে এসে বললেন, ‘স্যার, আপনারে সারাদিন খুঁজতাসি। মন্ত্রী মহোদয় আপনারে এই বইগুলি পাঠাইছেন। দয়া কইরা গ্রহণ করেন।’ বুঝলাম সারাদিন এই পুলিশ দলের আনাগোনায় হোটেল মালিক বুঝেছেন, আমি যে সে লোক নই। তাই অত খাতির!
আসলে ওপার বাংলার মানুষের মন-মেজাজ সত্যিই আলাদা। আতিথেয়তা আর খাওয়া-দাওয়ায় তাঁরা ক্লান্তিহীন। তৃতীয়বার বাংলাদেশ সফরে গিয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখন নরসিমা রাও। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। আওয়ামি লিগের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব। প্রধানমন্ত্রী এবং লিগের প্রধান হিসাবে শেখ হাসিনা এদেশের রাজনৈতিক দলগুলির কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। নরসিমা রাও থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই ছিলেন আমন্ত্রিতদের তালিকায়। সত্যি কথা বলতে কি, সেই উৎসবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পর ‘ভিআইপি অতিথি’ হিসাবে মমতাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। লোকসভার সদস্যমাত্র হলেও, এপার বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন হিসাবে মমতা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
সোনারগাঁও হোটেলে উঠেছিলেন বাংলার নেত্রী। ঢাকার সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী আর রাজনীতিবিদদের আনাগোনায় মমতা হাঁফিয়ে উঠেছিলেন। তার ওপর খাওয়া-দাওয়ার আমন্ত্রণের আতিথেয়তা। মমতা বরাবর স্বল্পাহারী। লোকজনকে খাওয়াতে ভালোবাসেন। কিন্তু নিজে মেপে খাওয়াদাওয়া করেন। অবশেষে হেটেলেই তিনি ‘আত্মগোপন’ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। রিসেপশনে বলে দেওয়া হল, মমতা বাইরে গিয়েছেন। একজন ঘরে ফোন করলেন, আমি ধরলাম। নেত্রী ঘরে নেই বলতে তিনি চেপে ধরলেন আমাকে। তাহলে আপনি কে? কী করে একজন ভিআইপি’র ঘরে ঢুকেছেন? কোনওরকমে নিজেকে হোটেলের ওয়েটার বুঝিয়ে সে যাত্রায় অবস্থা সামাল দিয়েছিলাম।
এদিকে চা নিয়ে এসে তো হোটেলের এক কর্মীর চোখ-কান গোলমাল হয়ে গেল! তিনি দেখছেন, মমতা ঘরে নেই। কিন্তু বাথরুম থেকে কাপড় কাচার আওয়াজ আসছে। মাঝবয়সী ওয়েটার জানতে চাইলেন, ‘কে জামা-কাপড় কাছতাছে?’ মমতার নাম শুনে তাঁর চোখেমুখে বিস্ময়!
কী কয়েন কর্তা? এতবড় লিডার হইয়া নিজে জামাকাপড় কাছতেছেন? নিজের এইসব প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়ে বললেন, ‘আমাগো দ্যাসের লিডারগুলির এটা দেইখা শেখা উচিত!’ সত্যি কথা বলতে কি সেবার এদেশের রাজনৈতিক দলগুলির অনেক নেতা-নেত্রী ঢাকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু মমতাকে নিয়ে যে উন্মাদনা ঢাকায় দেখেছিলাম, তা আর কাউকে নিয়ে হয়নি। এপার বাংলার সঙ্গে ওপার বাংলার আবেগ যেন কোথাও একটা মিলেমিশে একাকার হয়েছিল। সেই সময় বাংলার বামফ্রন্ট সরকারের দাপুটে মন্ত্রী ছিলেন কলিমুদ্দিন সামস। ফরওয়ার্ড ব্লক দলের প্রতিনিধি হিসাবে ঢাকার উৎসবে তিনিও হাজির ছিলেন। রসিক মানুষ সামস সাহেব আমাদের বলেছিলেন, ‘সিপিএম কেন এই মহিলা লিডারকে পছন্দ করে না বুঝতে পারছেন? সেটা হল, মমতা ব্যানার্জির জনপ্রিয়তা!’