• facebook
  • twitter
Monday, 11 August, 2025

ক্লাব টুর্নামেন্টে ঘরের ছেলে চাই, তা নাহলে ভারতীয় দলে সুযোগ নেই

কলকাতা ক্লাব দলগুলো বাঙালি ফুটবলারদের কি সঠিক গুরুত্ব দিচ্ছে? ডায়মন্ড হারবার এফসি আইলিগের তৃতীয় ও দ্ধিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হলো।

ফাইল চিত্র

রনজিৎ দাস

মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস আইএসএলের শিল্ড ও কাপ জিতেছে। ডায়মন্ড হারবার এফসি আইলিগের তৃতীয় ও দ্ধিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলা দল সিনিয়রদের সন্তোষ ট্রফি জিতেছে। বাংলা দল ডা বিসিরায় ট্রফি জিতেছে। মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব -২১দল রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ডেভেলপমেন্ট লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সারাভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ের টুর্নামেন্টে বাংলার অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অর্থাৎ সর্বভারতীয় ফুটবলে বাংলার ক্লাব ও রাজ্য দলের জয়জয়াকার হয়েছে।

কিন্তু ভারতীয় সিনিয়র ও জুনিয়র দলগঠনে বাঙালি ফুটবলারদের সুযোগ মিলছে না।আগামী মে মাসে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ গেমসে ভারতীয় দল অংশগ্রহণ করবে। গতকাল সাফ গেমসের প্রস্তুতিতে ৩৫জন ফুটবলারের নাম অলইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন ঘোষনা করেছে। ৩৫জনের দলে একজনও বাঙালি ফুটবলার সুযোগ পায়নি। তবে, ডাঃ বিসিরায় ট্রফিতে বাংলা দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মূল্য কি রইলো? কিছুদিন আগে সিনিয়র ভারতীয় দল এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেললো। মোহনবাগানের অধিনায়ক শুভাশীষ বসু ছাড়া কোন বাঙালি ফুটবলার সেই দলে সুযোগ পায়নি। ভারতীয় দলের প্রস্তুতি শিবিরেও সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের কোনো ফুটবলারকে ডাকা হয়নি।

অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনে বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বিভিন্ন পদে আছেন। বাংলার বাঙালি ফুটবলারদের জন্য তাদের কি ফুটবলার নির্বাচক কমিটির কাছে কিছুই জিজ্ঞাসার নেই? এমন হলে বাঙালি ফুটবলারদের প্রতি অবিচারকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়ে যায়। প্রকারান্তরে যা নিজেদের ব্যর্থতাকে মেনে

কলকাতা ক্লাব দলগুলো বাঙালি ফুটবলারদের কি সঠিক গুরুত্ব দিচ্ছে? ডায়মন্ড হারবার এফসি আইলিগের তৃতীয় ও দ্ধিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হলো। ডায়মন্ড হারবার ক্লাবের প্রথম একাদশে ৫/৬ জন বাঙালি ফুটবলার ধারাবাহিকভাবে খেলার সুযোগ পেয়েছে। ডায়মন্ড হারবার এফসির বাঙালি ফুটবলাররা বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। আইএসএলে এবার কলকাতার তিন বড়দল খেলেছে। তিন বড়দল মিলে মাত্র ৪/৫ জন বাঙালি ফুটবলার আইএসএলে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। এরমধ্যে সৌভিক চক্রবর্তী ও শুভাশিস বসু ধারাবাহিকভাবে খেলার সুযোগ পেয়েছে। তিন বড়দলে আরও বাঙালি ফুটবলাররা কেন খেলার সুযোগ পাচ্ছেনা?কোনো পক্ষ থেকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই।

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে একদিকে বিদেশি ফুটবলার খেলানোয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে। অপরদিকে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে প্রতিদলে ৪ জন ভূমিপুত্র খেলানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।কলকাতা লিগ পঞ্চম বিভাগ থেকে দ্ধিতীয় বিভাগ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক লিগ হয়। দেশের সর্বোচ্চ লিগে বাঙালি ফুটবলারদের সুযোগ করে দিতে তিন প্রধানের এত অনিহা কেন?

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও ক্রীড়ামন্ত্রী বাংলার ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন। বিভিন্ন পৌরসভার অন্তগর্ত মাঠ ও স্টেডিয়ামে লিগের খেলার জন্য সরকার সবরকম সহযোগিতা করছে। মুখ্যমন্ত্রী ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবের ইনভেস্টর জোগাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু বড়দল গুলো বাঙালি ফুটবলার তুলে আনার ক্ষেত্রে কতটা সাফল্য পাচ্ছে,তা নিয়ে পর্যালোচনা কেন হচ্ছেনা? কলকাতা লিগের খেলায় ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিং নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও ক্রীড়ামন্ত্রীর এবার লিগের স্বচ্ছতা আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় বয়সভিত্তিক জেলার খেলা এত সংক্ষিপ্ত সময়ে ও দায়সারা গোছের হচ্ছে কেন? সিনিয়র জেলা লিগের সাথে কলকাতা লিগের কোনপ্রকার সামঞ্জস্য নেই। কলকাতার বড়দলগুলোর বাঙালি ফুটবলারদের জেলা ফুটবলে খেলানোর উৎসাহ নেই। জেলা লিগ ও কলকাতা লিগের সমন্বয়ের অভাব তৈরি হচ্ছে।

রাজ্য ভিত্তিক জাতীয় টুর্নামেন্ট ও সর্বভারতীয় ক্লাব টুর্নামেন্টের মধ্যে গুরুত্ব বিচার করতে হবে। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানতঃ ক্লাব টুর্নামেন্টকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফলে,ক্লাব দলে বাঙালি ফুটবলার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আর,বাঙালি ফুটবলার তুলে আনার ক্ষেত্রে কলকাতা লিগ ও জেলার লিগকে সঠিক প্রতিযোগিতামূলক করা দরকার। ক্লাব দলের সাফল্যের জন্য আঞ্চলিকতা প্রাধান্য পায়না। প্রতিযোগিতামূলক লিগ থেকে বাঙালি ফুটবলার তুলে আনার দায়িত্ব তাই লোকাল ফেডারেশনকেই নিতে হবে। নচেৎ সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ক্লাব দলগুলো ভিন্ন রাজ্যের ফুটবলারদের মাধ্যমে দলের সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা করবে। সর্বভারতীয় টুর্নামেন্ট জয়ে ভিন্ন রাজ্যের ফুটবলাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেন,ভারতীয় ভারতীয় তারাই সুযোগ পাবে।