এখন শুধু অপেক্ষা। এবারের আইপিএল ক্রিকেটে নতুন এক চ্যাম্পিয়ন দল খুঁজে পাওয়া যাবে। ফাইনালে সম্মুখ সমরে শ্রেয়স আইয়ারের পাঞ্জাব কিংস আর বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। দু’জনের কাছেই স্বপ্নের রাত। এই রাতকে কে উজ্জ্বল করবেন, তা নিয়ে কোনও আগাম আভাস দেওয়া কোনও ক্রিকেট ভক্তকে দেওয়া সম্ভব নয়। হয়তো আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে দর্শকরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে সমর্থনের মশালটা জ্বালাবেন। সেই মশালের আলোয় কোন দল উদ্ভাসিত হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নয়। অবশ্য পাঞ্জাব ও বেঙ্গালুরু আগে ফাইনালে উঠলেও খেতাবের আলোয় মুখ দেখাতে পারেনি। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরু দল ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র পেলেও শেষ পর্যন্ত সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে হার স্বীকার করতে হয়। দীর্ঘদিন বেঙ্গালুরু দলের অধিনায়ক ছিলেন বিরাট কোহলি। একমাত্র বিরাট বেঙ্গালুরুকে ছেড়ে অন্য কোনও দলে এখনও পর্যন্ত খেলেননি। তাই তাঁর কাছে আশা, এবারে খেতাব জিতে নতুন অধ্যায় রচনা করা। দর্শকরাও আশা করবেন, বিরাট কোহলির চওড়া ব্যাটে বেঙ্গালুরুর জয় আসুক। এই তো কিছুদিন আগে টেস্ট ক্রিকেট থেকে কোহলি সরে যাওয়ার পরে ক্রিকেট মহলে যে হতাশার মেঘ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল, সেই হতাশার মেঘ যেন আইপিএল ক্রিকেট থেকে সরে যাক, এই ভাবনা নিয়ে বিরাটের জয়ধ্বনিতে মেতে উঠবে সারা গ্যালারি।
আবার অন্যদিকে পাঞ্জাব দল ২০১৪ সালের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে। কিন্তু ফাইনালে ব্যর্থ হতে হয় পাঞ্জাবকে। সেবার ট্রফি নিয়ে যায় কলকাতা দল। আর গত বছর ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন শ্রেয়স আইয়ার কলকাতা দলকে। কিন্তু চলতি মরশুমে কলকাতার কর্মকর্তারা শ্রেয়সকে নিয়ে কোনও ভাবনার আকাশকে বড় করেননি। হয়তো শ্রেয়স সেদিনই জেদ ধরেছিলেন পাঞ্জাব দলের সঙ্গে যখন জড়িয়ে পড়েছেন, সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, পাঞ্জাব দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে খেলার ছাড়পত্রটা হাতের মুঠোয় নিতে চান। তাঁর আশা পূর্ণ হয়েছে। এবারে নতুন স্বপ্ন দলকে চ্যাম্পিয়ন করা এবং কলকাতা দলকে জবাব দেওয়া। কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে পাঞ্জাব দলের সাহসী অধিনায়ক হিসেবে শ্রেয়স আইয়ারকে দেখতে পেয়েছিলেন রোহিত শর্মারা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে তারকা ক্রিকেটারদের ভিড়। রবিবার রাতে কেউ বিশ্বাসই করতে পারেননি, যে দলে চার জন আনক্যাপড খেলোয়াড় রয়েছেন, সেই দলের জয় পাওয়াটা কঠিন ব্যাপার। কিন্তু শ্রেয়স আইয়ার বুঝিয়ে দিয়েছেন, তরুণ এবং প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা শক্তিশালী দল কীভাবে গড়া যায়। কোচ রিকি পন্টিং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জেদ সবসময় দলকে এগিয়ে রাখে। তরুণ প্রতিভাদের লড়াকু মনোভাব সবসময় দলকে শক্তিশালী করে তোলে। তারই পরিচয় পাওয়া গেল মুম্বই দলের বিরুদ্ধে টানটান লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে। তবে অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, যাঁরা এতদিন ভেবেছিলেন পাঞ্জাব দলকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেবেন, তাঁরা এখন অন্য সুরে গান বেঁধেছেন। ভাবতে অবাক লাগে পাঞ্জাব দলে প্রথম ছ’জনের মধ্যে চার জন আনক্যাপড খেলোয়াড় নিয়ে পাঞ্জাব এই ভূমিকা কীভাবে প্রকাশ করে?
অধিনায়ক শ্রেয়স বলেছেন, আমাদের মধ্যে একটা একতা সবসময় কথা বলে যায়। কাউকে ছোট ভাবা হয় না। সবাই দলের তারকা। এটাই তো শেষ কথা। তিনি আরও বলেন, এই বেঙ্গালুরু দলের কাছে হেরে যাওয়ার পরে আমি একটা কথা বলেছিলাম, এখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি। আবারও বলছি, এখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি। প্রতিপক্ষ বেঙ্গালুরু যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ম্যাচ ছিনিয়ে আনার জন্য খেলোয়াড়রা তৈরি রয়েছেন। তাহলে কি শ্রেয়স আইয়ার মনে করেন, শক্তিশালী ওই বেঙ্গালুরু দলের বিরুদ্ধে তাঁদের ম্যাচটা কঠিন হবে? তার উত্তরে সরাসরি শ্রেয়স বললেন, প্রতিটি ম্যাচই তো কঠিন? দুর্বল দলের সঙ্গে লড়াই করে জয় পেলে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দমুখর রাত উপভোগ করা যায় কঠিন দলকে হারিয়ে দিয়ে। গত ম্যাচে কোহলিদের কাছে হেরেছিলেন। সেই বেলায়? শ্রেয়স সপাটে ছক্কা মেরে বললেন, সবদিন কি সবার এক যায়? হয়তো কিছু ভুল হয়েছিল। সেই ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে। কিন্তু এবারে ফাইনাল খেলার অর্থ সবাই টগবগ করে ফুটছে। দেখবেন, প্রতিটি খেলোয়াড় কীভাবে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে পাঞ্জাবের স্কোরবোর্ডকে ভরাট করবেন। আর বোলাররা তাঁদের নিখুঁত বোলিংয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবেন এবং তাঁদের প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে বুক বাজিয়ে বলবেন, হ্যাঁ আামরা পারি। তবে, সমর্থকরা যদি অনুপ্রাণিত করেন, তবে এই ম্যাচটা আমাদের পক্ষে যাবে।
পাঞ্জাব দলের দুই ওপেনার প্রভসিমরণ সিং ও প্রিয়াংশু আর্য আনক্যাপড খেলোয়াড়। তাঁদের কাছে প্রত্যেকেই নতুন কিছু দেখতে চাইছেন। তাঁদের ব্যাট ঝলসে ওঠার অপেক্ষায়। আবার মাঝের সারিতে রয়েছেন নেহাল ওয়াধেরা ও শশাঙ্ক সিং। এঁরা দু’জনেই তুরুপের তাস হয়ে যেতে পারেন। এমনও হতে পারে, বেঙ্গালুরু দলের কাছে এই দুই খেলোয়াড় ভয়ের কারণ হয়ে দেখা দেবেন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান জশ ইংলিশ মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে দুরন্ত খেললেন। তিনিও চাইছেন, বেঙ্গালুরুকে শুধু চাপে রাখা নয়, পিছনে ফেলে জয়ের পথকে পাকা করে নেওয়া। শ্রেয়স আইয়ারকে নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। অধিনায়কের ব্যাটনটা যখন হাতে থাকে, তখন তার চরিত্র একেবারে বদলে যায়। তখন তিনি অন্য কোনও ভাবনার মধ্যে সময় নষ্ট করেন না। একটাই চিন্তা, দলের জয়। তারপরে আবার ফাইনাল খেলা। এই ফাইনালে রানের ফুলঝুরিতে ভরিয়ে দিতে চান। পাশাপাশি, বোলারদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। হয়তো ভাববেন, নামি বোলাররা কোথায়? শ্রেয়সের কথায়, নামি কথাটার প্রয়োজন নেই। আমার কাছে বড় দেখার বিষয় প্রতিপক্ষের উইকেট কীভাবে ভেঙে পড়ছে। তাই তো আর্শদীপ সিং, কাইল জেমিসল, মার্কাস স্টোয়নিশ, আজমাতুল্লা, বিজয়কুমার বৈশা ও অভিজ্ঞ যুজবেন্দ্র চাহাল। প্রত্যেকেই মুখিয়ে রয়েছেন বেঙ্গালুরু দলকে আঘাত হেনে প্রথমবার আইপিএল ক্রিকেটের ট্রফিটা নিজেদের ঘরে তুলে আনতে।
আবার বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে বড় ভরসার নাম বিরাট কোহলি। বিরাটের ব্যাট যখন তখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। সেটাও কিন্তু চাপের কথা পাঞ্জাব দলের কাছে। যদি বিরাট উইকেটে স্থিতি হয়ে যান, সেক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু অনেকটাই এগিয়ে থাকবে জয়ের পথে। কিন্তু তবুও একটা প্রশ্ন থেকে যায়, দলের অন্যতম ব্যাটসম্যান ফিল সল্ট ও মায়াঙ্ক আগরওয়াল কীভাবে উইকেটটাকে চলন্ত রাখতে পারেন, সেটা দলের কাছে প্লাস পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে। তবে এই দলে ভালো অবস্থায় আবার ফিরে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার পেসার জশ হেজলউড। গত ম্যাচে তিনি তিনটি উইকেট নিয়েছেন। তাই পাঞ্জাব দলের খেলোয়াড়রা সতর্ক হয়ে খেলবেন হেজেলউডের বিরুদ্ধে। দলে আছেন ভুবনেশ্বরের মতো অভিজ্ঞ বোলার। রয়েছেন ক্রুনাল পাণ্ডিয়া। রয়েছেন শেফার্ড যশ দয়াল ও সুযস শর্মা। সব মিলিয়ে বলতে পারা যায় পাঞ্জাব ও বেঙ্গালুরুর মধ্যে লড়াইটা এমন জায়গায় পৌঁছতে পারে, যা কেউ আশাই করতে পারবেন না। তবুও বলতে হবে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে অঙ্কে ও কৌশলে বাজিমাত করার
লক্ষ্যে দুই দলই একই জায়গায় অবস্থান করছে। ফলাফলই শেষ কথা বলবে।