আজ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে ভারত সেরা হওয়ার লড়াই

Written by SNS May 4, 2024 1:24 pm

গোপন অঙ্কেই বাজিমাত করতে চান কোচ হাবাস ও ক্রাতকি

পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী: এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা৷ মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসের সমর্থকরা উল্লাসে মেতে উঠতে চাইছেন ভারত সেরা দল হিসেবে দেখার জন্য৷ শনিবার সন্ধ্যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ মেতে উঠবে অন্য উন্মাদনায়৷ আসলে এবারে লিগ-শিল্ড জয় করার পরে আইএসএল ফুটবলের ফাইনালে বাজিমাত করার জন্য সবুজ-মেরুন ব্রিগেড খেলতে নামবে মুম্বই সিটি এফসি’র বিরুদ্ধে৷ দুই দলের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ৷ একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার জন্য গোপন অঙ্কে খেলতে প্রস্ত্তত ফুটবলাররা৷ অবশ্যই হাইভোল্টেজ ম্যাচ৷ লিগের খেলায় মোহনবাগান জয়লাভ করেছিল মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে৷ তাই মোহনবাগানের সৈনিক ফুটবলাররা এবারে অন্য অঙ্কে খেলে জয়ের ধারাবাহিকতাকে ধরে রাখতে চাইবেন৷ আবার মুম্বইয়ের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফুটবলাররাও তৈরি থাকবেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবার জন্য৷ স্বাভাবিকভাবেই খেলার গুরুত্ব কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে তা অাঁচ করা খুব মুশকিল৷ দুই দলের দুই কোচের মগজাস্ত্র কীভাবে প্রতিফলিত হবে, সেটাও একটা ভাবার বিষয়৷ এটা মনে রাখতে হবে, আইএসএল ফুটবল ফাইনালের চরিত্র একেবারে অন্যরকম৷ বিশেষ করে মোহনবাগানের কোচ লোপেজ হাবাস চাইবেন ঘরের মাঠে বাজিমাত করে ভারতসেরা দল হিসেবে শিরোনামে থাকতে৷ আবার মুম্বই সিটি এফসি’র কোচ পিটার ক্রাতকি নীরবে অঙ্ক কষতে ভালোবাসেন৷ তাই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে অস্ত্রটাকে কীভাবে শানাতে হবে, তার জন্য গোপন বৈঠক করেছেন ফুটবলারদের সঙ্গে৷

শুক্রবার রাজারহাটে একটি হোটেলে মোহনবাগানের কোচ হাবাস সাংবাদিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন অধিনায়ক শুভাশিস বসু ও দলের নির্ভরযোগ্য ফুটবলার দিমিত্রি পেত্রাতোসকে নিয়ে৷ অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় কোচ হাবাস সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন৷ কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি দ্বিধা প্রকাশ করেননি৷ খোল মনে কথা বলেছেন৷ আইএসএল ফুটবলের ইতিহাস দেখলে অবশ্যই হাবাসের কাছে প্রতিটি ফাইনালই একেবারে অন্যরকম হয়ে থাকে৷ তিনি স্পষ্ট জানান, মাঠে নামতে হয় লড়াই করার জন্য৷ কোনও যুদ্ধে কোনও সৈনিক হারতে চান না৷ ঠিক সেই রকমই ফুটবলযুদ্ধে বাজিমাত করাটাই হল আসল লক্ষ্য৷ ট্রফি জেতাটাই আমদের পাখির চোখ৷ তাহলে একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করা যাবে, যদি ম্যাচটা জিততে পারা যায়৷ আর জেতার জন্যই সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ৷ খেলার চরিত্র কীরকম হবে, তার কোনও ব্যাখ্যা হয় না৷ তাৎক্ষণিক ব্যাপারটাই খেলোয়াড়দের কাছে বড় করে দেখা দেয়৷ ডুরান্ড কাপ জয় দিয়ে এবারের মরশুম শুরু হয়েছিল মোহনবাগানের৷ ইতিমধ্যেই আইএসএল লিগ ও শিল্ড সবুজ-মেরুনের ঘরে উঠেছে৷ আর ফাইনালে জয়ের হাসি হেসে ত্রিমুকুট জেতাটাই আমাদের লক্ষ্য৷ সারা বছর ধরে ফুটবলাররা অত্যন্ত পরিশ্রম করেছে৷ ঠিক সেইভাবে চূড়ান্ত পর্বের খেলায় খেলোয়াড়রা আরও বেশি নিজেদের উজার করে দেওয়ার জন্য সবরকম চেষ্টা করবেন৷

ফাইনালে কোন দল ফেভারিট, এই প্রশ্নের উত্তরে কোচ হাবাস খোলা মনে বললেন, ফাইনালে কোনও দলই কোনওদিনই ফেভারিট হয় না৷ আত্মবিশ্বাস ভালো কিন্ত্ত অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস অনেক সময় সংশয় তৈরি করে৷ তার জন্য সাবধানে থাকতে হবে খেলোয়াড়দের৷ ম্যাচের রং যখন তখন বদলে যেতে পারে৷ সেই রং বদলে গেলে, তা কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, সেটাই হল আসল কথা৷ এটা মনে রাখতে হবে, বিপক্ষ দল কখনওই ছেড়ে কথা বলবে না৷ মুম্বই অত্যন্ত শক্তিশালী দল৷ বেশ কয়েকজন ভালো ফুটবলার রয়েছেন৷ তাঁরাও চেষ্টা করবেন চাপ সৃষ্টি করে মোহনবাগান শিবিরের রক্ষণভাগকে ভেঙে দেওয়ার৷ তাই সচেতন থাকতে হবে৷ কোচ হাবাস কখনওই চাইছেন না খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়াক৷ তার কারণ টানা ৯০ মিনিট চলন্ত গাড়ির মতো খেলোয়াড়রা মাঠের চারদিকে ছুটে থাকেন৷ একটা পরিশ্রম বলে কথা আছে৷ কিন্ত্ত টানা পরিশ্রম করা যায় না৷ তার জন্য চাই বিশ্রাম৷ সেই কারণেই ৯০ মিনিটের মধ্যে খেলা শেষ হয়ে গেলেই ভালো৷ তারপরে প্রচণ্ড গরম৷ খেলোয়াড়রা এই গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন৷ তবুও বলতে দ্বিধা নেই, ফুটবল যুদ্ধে সৈনিকরা কখনওই পিছিয়ে থাকেন না৷ অনেকে হয়তো ভাববেন, লিগ-শিল্ড যখন মোহনবাগানের ঘরে চলে এসেছে, তখন আর আইএসএল ফুটবলের ফাইনালে বাজিমাত করাটা খুব একটা কঠিন হবে না৷ এই ভাবনায় অনেক সময় পিছিয়ে পড়তে হয়৷

অধিনায়ক শুভাশিস বসু বলেন, আমাদের কাছে মর্যাদার লড়াই৷ মাঠে প্রচুর দর্শক থাকবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ দর্শকদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা আমাদেরকে আরও ভালো খেলার জন্য এগিয়ে রাখবে৷ কিন্ত্ত মনে রাখতে হবে, যুদ্ধে প্রতিপক্ষরাও সমান চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে জানে৷ এই কথা ভেবেই তাদের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করতে হবে, এটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার৷ মোহনবাগানের ভরসা পেত্রাতোসের জবাব, আমরা অন্য কোনও কিছু ভাবছি না৷ ফাইনালে ট্রফিটা তুলে দিতে চাই সমর্থকদের আবেগের কাছে৷ এটা ঠিক, ঘরের মাঠে খেলা হবে৷ সমর্থকরা ছুটে আসবেন আমাদের সমর্থন করার জন্য৷ তাঁদের মুখে আমরা হাসি ফুটিয়ে তুলতে চাই৷ মুম্বই সিটি এফসি’র কোচ পিটার ক্রাতকি বলেছেন, আমাদের কাছে এটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এটা ঠিক, প্রতিপক্ষ দল ঘরের মাঠে খেলবে৷ প্রচুর দর্শক আসবে৷ তবুও দলের খেলোয়াড়রা তৈরি রয়েছেন লড়াইয়ে কীভাবে জয় তুলে আনতে হয়৷ বেশ কিছু ভালো ফুটবলার রয়েছেন৷ তাঁরাও অঙ্গীকারবদ্ধ৷ সহজভাবে ম্যাচ নেওয়ার কোনও কারণ নেই৷ লড়াই করে মাঠ ছাড়তে হবে৷ মুম্বইয়ের অধিনায়ক রাহুল ভেকে বলেছেন, আমরা অপেক্ষায় রয়েছি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ থেকে আইএসএল ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হতে৷ ফাইনাল খেলা মানেই আলাদা একটা অনুভূতি তৈরি হয় সব খেলোয়াড়দের মধ্যে৷ সেই জায়গা থেকে বলতে পারি, কোনও দলের কোনও ফুটবলার হলফ করে বলতে পারবেন না কারা জয়ের মুকুটটা তুলে নেবেন৷

এদিকে আইএসএল ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে টিকিটের হাহাকার আছে৷ যেহেতু আইএসএল কর্তৃপক্ষ সরাসরি এই ম্যাচটির আয়োজক, তাই তাদের হাতেই টিকিট রয়েছে৷ শুক্রবার সকাল থেকেই টিকিটের জন্য অনেকেই ছোটাছুটি করেছেন৷ শোনা গেছে, মাত্র এক ঘণ্টাও সময় নেয়নি টিকিট বিক্রি করতে৷ আইএফএ’র অনুমোদিত ক্লাবগুলি টিকিট পায়নি৷ এমনকি প্রাক্তন ফুটবলারদের হাতেও টিকিট পৌঁছয়নি৷ সব মিলিয়ে বলতে পারা যায়, শনিবারের এই ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা ফুটবল গবেষকরাও বলতে পারবেন না৷