মধ্যরাতের জমজমাট নাটকের পর বাের্ডের দায়িত্বে সৌরভই

সৌরভ গাঙ্গুলির বিসিসিআইয়ের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি মােটামুটি পাকা হয়ে গেলেও আনুষ্ঠানিক ঘােষণা হবে ২২ অক্টোবর বাের্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচনের পর।

Written by SNS Mumbai, New Delhi | October 15, 2019 2:52 pm

সৌরভ গাঙ্গুলি (Photo by Indranil MUKHERJEE / AFP)

সৌরভ গাঙ্গুলির ভারতীয় ক্রিকেট বাের্ডের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি মােটামুটি পাকা হয়ে গেলেও আনুষ্ঠানিক ঘােষণা হবে ২২ অক্টোবর বাের্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচনের পর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সােমবারই সৌরভকে তাঁর নতুন ইনিংসের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 

তবে সৌরভ সােমবার মুম্বইতে বাের্ডের সদর দফতরে মনােনয়ন জমা জিতে গিয়ে বড়রকম ধাক্কা খেয়েছেন। শুধু সভাপতি পদে নয় অন্যান্য আরও কয়েকটি পদের জন্য যারা সৌরভের সঙ্গে মনােনয়ন জমা দিতে যান তাঁরা আবিষ্কার করেন বাের্ডের নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী অফিসার হিসেবে যার নাম দেওয়া হয়েছে সেই এন গােপালাস্বামী তাঁর অফিসে নেই। মনােনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল বিকেল তিনটে পর্যন্ত। নির্বাচনী অফিসারের দেখা না পেয়ে সৌরভ এবং অন্যরা বাের্ডের আইনজীবীদের দলের হাতে মনােনয়নপত্রগুলি দিয়ে আসেন।

নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন এমন এক নতুন কর্মকর্তা বলেছেন, গােপালাস্বামীর অনুপস্থিতির কি কারণ তা বাের্ডের কর্মকর্তারাও জানতেন না। আমরা তারজন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পৌনে তিনটে নাগাদ বাধ্য হয়েই আইনজীবী দলের হাতে মনােনয়নপত্র দিয়ে আসতে হয়। যদিও আমরা বিকেল তিনটে পর্যন্ত অপেক্ষার পর বাের্ডের অফিস ছেড়ে আসি। নির্বাচনী অফিসার যে নােটিশ বাের্ডের অন্য সদস্যদের কাছে পাঠিয়েছেন তাতে উল্লেখ ছিল মনােনয়ন জমা দেওয়া যাবে সকাল এগারােটা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত। 

শনিবার এবং রবিবার এই দুদিনে বৈঠক এবং পাল্টা বৈঠক নিয়ে ক্রিকেট বাের্ডের রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত পরবর্তী বাের্ড সভাপতি হিসেবে সৌরভ গাঙ্গুলিকে এবং বাের্ড সচিব হিসেবে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ’র পুত্র জয় শাহ’কে বেছে নেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে অরুণ ধুমলের নাম। যুগ্মসচিব হিসেবে আসছে জয়েস জর্জ। আর আইপিএলের নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন রিজেশ প্যাটেল। 

২৩ অক্টোবর বাের্ডের প্রশাসকদের কমিটি সরকারিভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে নব নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে। বাের্ড নির্বাচন নিয়ে বৈঠক এবং পাল্টা বৈঠক হয়েছে বাের্ডের অনুমােদিত ইউনিটগুলি এবং সেইসঙ্গে বাের্ডের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে। 

একটা সময় এসেছিল যখন সভাপতির পদের দৌড়ে এগিয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার কর্ণাটকের রিজেশ প্যাটেল। সৌরভ গাঙ্গুলি একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন যে তিনি বাের্ডে একটি পদ শুধু চান। অমিত শাহ’র পুত্র হয়ে জয় শাহ পরবর্তী বাের্ড সভাপতি হচ্ছেন এরকমটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল তখন। পরে নাটকীয় পালা বদল যখন শুরু হয় তখন জয় শাহ এবং অরুণ ধুমলের মধ্যে কে সচিব আর কে কোষাধ্যক্ষ হবেন তার লড়াই শুরু হয়। প্রথমে ঠিক হয়েছিল জয় শাহকে কোষাধ্যক্ষ করা হবে। কিন্তু রবিবার দুপুরে পিছনের দরজা দিয়ে বৈঠকের পর মাত্র দুটি নাম উঠে আসে। কারণ তখন বাের্ড সভাপতি পদের জন্য রিজেশ প্যাটেল, জয় শাহ এবং সৌরভ গাঙ্গুলির নাম শােনা যাচ্ছিল। 

সৌরভকে আইপিএল চেয়ারম্যানের পদও দিতে চাওয়া হয়েছিল কিন্তু রবিবার সন্ধ্যাতেই সৌরভ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। রাত যত গভীর হয়েছে ততই নাটকীয় পালা বদলের দৃশ্যগুলি পরপর অভিনীত হতে থাকে। শনিবার দিল্লিতে ভারতের ক্রিকেট সংগঠনের বড় বড় মাথাদের বৈঠকে কোনও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় নি। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বাের্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুর, প্রাক্তন দুই বাের্ড সভাপতি এন শ্রীনিবাসন ও নিরঞ্জন শাহ, সৌরভ গাঙ্গুলি এবং আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লা। 

এদিকে, বাের্ড নির্বাচনে অংশ নেবেন এই রকম কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা মুম্বইতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। তখন সেই বৈঠক থেকে জয়েস জর্জ এবং প্রভতেজ প্যাটেলের নাম সভাপতি ও সচিব পদের জন্য উঠে এসেছিল। তবে একটা ব্যাপার বােঝা যাচ্ছিল সভাপতি পদে সৌরভ গাঙ্গুলির নাম প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাের্ড রাজনীতির পাকা খেলােয়াড়েরা বিশ্বাস করছিলেন জয় শাহ এবং রিজেশ প্যাটেল সভাপতি পদের দৌড়ে সামান্য এগিয়ে আছেন। 

যারা ক্রিকেট বাের্ডের রাজনীতির অন্ধিসন্ধি জানেন তারা কিন্তু জানতেন মুম্বইতে রবিবার রাত্রে ডাকা এক ডিনারেই চুড়ান্ত নাম ও প্যানেল তৈরি হয়ে যাবে। বাের্ড রাজনীতির পুরনাে খেলােয়াড়রা এটাও জানতেন যে সমান প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবেকারুণ শীর্ষকর্তা পদে মাত্র পাঁচটি নামই বাছা যাবে। বাস্তবে সেইভাবেই এগিয়েছেন তারা। 

এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট বাের্ডের নির্বাচনী অফিসারের আটজন পূর্ণ সদস্যকে বাের্ডের সাধারণ সভা ও নির্বাচনের আগে ডিসকোয়ালিফাই করার ব্যাপারটি কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটাও দেখার। কারণ এই আট সদস্যের ইউনিট বাের্ডের নতুন রেজিস্ট্রিকৃত সংবিধান পুরােপুরি মেনে নেয়নি। 

এমনই একটি ইউনিটের কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা সােমবার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি। কারণ প্রশাসকদের কমিটির সুপারিশ নির্বাচনী অফিসার এবং অ্যামিকাস কুরিয়েকে পাঠিয়েছিল। প্রশাসকদের কমিটি যেহেতু নির্বাচনী অফিসার বলেছেন, আমরা বাের্ডের বৈঠক ও নির্বাচনে অংশ নিতে পারি না তাই আমরা আদালতে যাচ্ছি। কারণ সুপ্রিম কোর্ট আমাদের নির্বাচন করার জন্য অনুমতি দিয়েছিল এবং বলেছে অ্যাপেক্স কাউন্সিল সদস্যদের ক্ষেত্রে ডিসকোয়ালিফিকেশন কার্যকর হবে না। তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসােসিয়েশনের এই কর্মকর্তা বলেছেন, এখন সুপ্রিম কোর্টই স্থির করবে ২২ অক্টোবর কি হবে।