আইপিএল ক্রিকেটে ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস তলানিতে থাকলেও, কলকাতার দর্শকরা তাঁদের সমর্থনে চিৎকার করবেন গ্যালারিতে। আসলে কলকাতা নাইটরাইডার্সের বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ের লড়াই বলতেই ধোনির সঙ্গে মোকাবিলা করা। ধোনি মানেই কলকাতার কাছে আলাদা পরিচয়। তাই অপেক্ষায় থাকবেন ধোনির জন্য চিৎকার করতে। মঙ্গলবারও অধীর আগ্রহে ক্লাব হাউসের সামনে ধোনি ভক্তরা অপেক্ষা করছিলেন কখন তিনি বাস থেকে নামবেন। একে একে সবাই নামছেন, কিন্তু ধোনির দেখা নেই। বাস দেখা মাত্রই ধোনির নামে চিৎকার শোনা গিয়েছে। কিন্তু ধোনিকে দেখা হল না অপেক্ষমান ভক্তদের। একে একে অনেকেই নেমে এসেছেন বাস থেকে। আয়ুষ মাত্রে, রবীন্দ্র জাদেজা, শিবম দুবে, খলিল আহমেদ, স্যাম কারেন ও মাহিশা পাথিরাশরা। ইডেনে প্রবেশ করতেই চেন্নাইয়ের খেলোয়াড়দের দেখা গেল বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।
অন্যদিকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামবেন, তা নতুন করে বলার জায়গা নেই। গত ম্যাচে রাজস্থানকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কলকাতা বাজিমাত করেছে এক রানে। সেই বিশ্বাসেই সাহসী ভূমিকা নিয়ে অনুশীলনে দেখা গেল সুনীল নারাইন, রিঙ্কু সিং, রামনদীপ সিং, মইন আলি, বরুণ চক্রবর্তী ও হর্ষিত রানাদের। তবে সবার চোখ ছিল বৈভব অরোরার দিকে। তার প্রধান কারণ ছিল রাজস্থানের বিরুদ্ধে তাঁর অভাবনীয় বোলিম। রাজস্থানের বিস্ময় ক্রিকেটার বৈভব সূর্যবংশীকে আউট করলেন ১৭ বছর বয়সী তরুণ ক্রিকেটার বৈভব অরোরা। দুই বৈভবের লড়াই দেখে সেদিন অনেকেই বাহবা দিয়েছেন। তারপরে বৈভব সূর্যবংশী ক্যাচটা যেভাবে তালুবন্দি করেছে অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে তা ছবির মতো। আঙুলে চোট নিয়ে তিনি যেভাবে শরীর ছুঁড়ে দিয়ে ক্যাচটা তুলে নিয়েছেন, তা অভাবনীয়। অবশ্য নেটে অনুশীলনে এদিন সেইভাবে দেখতে পাওয়া গেল অধিনায়ক রাহানেকে।
কলকাতা দলের ক্রিকেটাররা ভালো করেই জানেন এই মুহূর্তে তাঁদের সামনে তিনটি ম্যাচ রয়েছে। তিনটি ম্যাচই নকআউট অর্থাৎ মরণ-বাঁচন লড়াই। প্রতিটি ম্যাচই জিততে হবে। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কলকাতা অবশ্যই ধোনিদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কলকাতা দলের ওপেনার গুরবাজ ও সুনীল নারাইন যদি পাওয়ার প্লেতে বড় রান তুলে দিতে পারেন, তাহলে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে দল। তাই সতর্ক হয়েই মাঠে নামতে হবে। অজিঙ্কা রাহানে এবং অঙ্গকৃশও ভালো রানের মধ্যে রয়েছেন। গুজরাতের বিরুদ্ধে রাহানের ৩০ ও অঙ্গকৃশে ৪৫ রান উপহার দিয়ে দলের স্কোরবোর্ডকে উজ্জ্বল করেছেন। তবে আন্দ্রে রাসেল আবার পুরনো ফর্মে ফিরে এসেছেন। আন্দ্রে প্রিয় মাঠ ইডেন। গত ম্যাচে ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন। দলের হয়ে উপহার দিয়েছেন ৫৭ রান।
পাশাপাশি, রিঙ্কু সিংও দুরন্ত ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছেন। রাসেল যেমন ৫৭ রানে নট আউট ছিলেন তেমনই রিঙ্কুও ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। এখন দেখার বিষয়, বরুণ চক্রবর্তী, মইন আলি ও বৈভব অরোরা বোলিংয়ে নজর কাড়তে পারেন কিনা। অন্যদিকে চেন্নাইয়ের আয়ুষ মাত্রের বয়স মাত্র ১৭ বছর। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে তরুণ ক্রিকেটার মাত্র ৬ রানের জন্য শতরান থেকে বঞ্চিত হন। অবশ্যই সে চেষ্টা করবে ইডেন উদ্যানে ভালো ইনিংস খেলতে। অবশ্যই চোখ থাকবে চেন্নাই দলের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজার দিকে। তাঁর ব্যাটে ভালো রান আছে। আবার বোলিংয়েও নজর কেড়ে থাকেন। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে রবীন্দ্র জাদেজা ৭৭ রান করে নটআউট ছিলেন। ধোনি এই মুহূর্তে দলকে নেতৃত্ব দিলেও গত ম্যাচের হারটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, তাঁর জন্যই চেন্নাইকে হারতে হয়েছে। বেঙ্গালুরু জয় পেয়েছিল মাত্র ২ রানে। তাই সবদিক বিবেচনা করতে গেলে কলকাতা ও চেন্নাইয়ের খেলাটা এমন জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে, যা শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
ধোনি মঙ্গলবার অনুশীলনে না এলেও ধোনির জয়ধ্বনিতে রাস্তা কেঁপে উঠেছিল, যখন চেন্নাইয়ের বাসটা ক্লাব হাউসের সামনে এসে দাঁড়ায়। বাঁধভাঙা ভিড়ে কখন যে ক্লাব হাউসের সামনে ফুলের টবগুলো ভেঙে পড়েছে, তা কেউ টেরই পায়নি। পুলিশের তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। ঋতুরাজ গায়কোয়াড় চোট পাওয়ার পরে ধোনির হাতে অধিনায়কের ব্যাটনটা দেখতে পাওয়া যায়। তাহলে কি ধোনি ফ্যাক্টর হবে বুধবারের সন্ধ্যায় কলকাতার কাছে? চেন্নাইয়ের ধোনিকে দেখার জন্য যেমন আগ্রহ রয়েছে, তেমনই আবার আন্দ্রে রাসেলের ঝলসে ওঠা সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকবে গ্যালারি। এমনও হতে পারে, খেলার ফলাফল রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে পৌঁছে যাবে। সেই নাটকীয় মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকবেন ক্রিকেট ভক্তরা।
ছবি—মউল মণ্ডল