শনিবার সুপার কাপে গ্রুপ-এ’র দ্বিতীয় ম্যাচে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে সহজ জয় তুলে নিয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট। অস্ট্রেলিয়ান তারকা ম্যাকলারেনের করা জোড়া গোলে জিতে গ্রুপ-এ-র পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। মোহনবাগানের এই জয় কিছুটা হলেও চাপ বাড়িয়েছে চির-প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলের ওপর। গ্রুপ-এ’র প্রথম ম্যাচে দুর্বল ডেম্পোর বিরুদ্ধে ২-২ গোলে ড্র করেছে তারা। ম্যাচের প্রায় ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ২-১ গোলে এগিয়ে থাকার পরেও ম্যাচ থেকে পুরো তিন পয়েন্ট পায়নি লাল-হলুদ ব্রিগেড। এই ম্যাচে ড্রয়ের ফলে নক-আউটের রাস্তা কিছুটা হলেও কঠিন হয়েছে অস্কার ব্রুজোর দলের জন্য। অথচ, এদিন ম্যাচের শুরুটা কিন্তু খুব একটা খারাপ করেননি হামিদ, রশিদ, মহেশরা। সেইসময়, তাঁদের পরপর আক্রমণে রীতিমতো চাপে পরে গিয়েছিল ডেম্পোর তরুণ ব্রিগেড।
কিন্তু, ম্যাচের ২৭ মিনিট নাগাদ অময় মোরাজকারের নেওয়া আপাত নির্বিষ ফ্রি-কিক ক্লিয়ার করতে গিয়ে শিশুসুলভভাবে বলের ফ্লাইট মিস করেন অভিজ্ঞ গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদার। আইএফএ শিল্ড ফাইনালে ১২০ মিনিট গোলপোস্টের নিচে দলকে চূড়ান্ত নির্ভরতা দেওয়া গিলকে বসিয়ে যাকে এই ম্যাচে প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন লাল-হলুদ কোচ। এইসময়, ফাঁকা গোলে বল ঠেলতে কোনও ভুল করেননি মহম্মদ আলি। তবে, এই একবার নয়, ডেম্পোর দ্বিতীয় গোলের ক্ষেত্রেও নিজের দায় কোনওভাবেই এড়াতে পারেন না এই বঙ্গসন্তান। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে ডেম্পোর তরুণ লক্ষ্মীমানরাও রানে যখন বল গোলের জালে জড়ালেন তখন কার্যত দর্শকের ভূমিকায় দেখা গেল দেবজিৎকে। বল পাশ দিয়ে চলে গেলেও তা আটকানোর কোনও চেষ্টাই করলেন না তিনি। ম্যাচ শেষে অস্কারের এই হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, চলতি মরসুমে কলকাতা লিগেও প্রায় একইরকমভাবে মোহনবাগান ও ডায়মন্ড হারবারের বিরুদ্ধে গোল খেয়েছিলেন বাঙালি এই গোলরক্ষক। তারপরেও, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের একনম্বর গোলরক্ষক গিলকে বসিয়ে কেন দেবজিৎকে খেলানো হল, তা হয়তো অস্কার নিজেই জানেন।
Advertisement
তবে, শুধু এই একটা ভুল নয়, এদিন অস্কারের আরও কিছু ভুল সিদ্ধান্তের মাসুল গুনতে হল ইস্টবেঙ্গলকে। ডেম্পোর বিরুদ্ধে লাল-হলুদ ব্রিগেড শুরু করেছিল পাঁচ বিদেশি নিয়ে। সেখানে আশ্চর্যজনকভাবে প্রথম একাদশে ছিলেন না দলের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা মিগুয়েল ফিগুয়েরা। ফলে, পুরো প্রথমার্ধ জুড়ে লাল-হলুদ ব্রিগেডের মাঝমাঠের খেলাটাই সেভাবে দানা বাঁধলো না। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডার মাঠে আসার পরেই ম্যাচে ফিরলো ইস্টবেঙ্গল। মহেশকে দিয়ে গোল করানোর পাশাপাশি যেভাবে দুরূহ কোণ থেকে ইস্টবেঙ্গলের দ্বিতীয় গোলটা করে গেলেন মিগুয়েল, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ২-১ গোলে দল এগিয়ে যাওয়ার পরেও যেভাবে গোল নষ্টের প্রদর্শনী দেখালো ইস্টবেঙ্গল, তার দায়ও কিন্তু কোনওভাবেই এড়াতে পারেননা কোচ অস্কার। কারণ, চলতি মরসুমে এর আগেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লাল-হলুদ ব্রিগেডকে গোল নষ্টের খেসারত দিতে হয়েছে বারবার। দুর্বল ডেম্পোর বিরুদ্ধেও তার অন্যথা হল না।
Advertisement
এমনকি, দল ২-১ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় আচমকাই দুই বিদেশি স্ট্রাইকারকে তুলে নিলেন অস্কার। তার বদলে বিষ্ণু, ডেভিড, এডমুন্ডদের মতো তরুণদের নামিয়ে একটু কি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না তিনি? সুপার কাপের প্রথম ম্যাচে অপ্রত্যাশিত এই ড্রয়ের পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের বাইরের ঘটনা কি তাহলে পরোক্ষে চাপ সৃষ্টি করছে কোচ অস্কারের উপর। নাহলে, শিল্ড ফাইনালের টাই-ব্রেকারে যে দেবজিৎকে খেলানো নিয়ে এতো বিতর্ক হল, তাঁকে কেন এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রথম একাদশে রাখলেন অস্কার ? কেনই বা, ২-১ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায়ও ডেম্পোর তরুণ ব্রিগেডের বিরুদ্ধে আক্রমণের চাপ আরও বাড়াতে পারলো না মহেশ, আনোয়ার’রা? তবে, সমস্যা যাই হোক না কেন, দ্রুত এর উত্তরও কিন্তু অস্কারকেই খুঁজতে হবে।
Advertisement



