২০২৪ সালে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগদান করার পর ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই প্রথমবারের জন্য প্যারিসের ক্লাবটির মুখোমুখি হয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। তবে, তাঁর সেই অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখের হল না। নিজের বদলার ম্যাচে প্রাক্তন ক্লাবের কাছে ০-৪ গোলে লজ্জার হার স্বীকার করতে হলো তাঁর বর্তমান ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে! বুধবার রাতে পিএসজি’র কাছে কার্যত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল স্পেনের এই ক্লাবটি। এদিকে, ক্লাব ফুটবলে রিয়ালের হয়ে ২৮ ট্রফি জিতলেও শেষটা চার গোলের অপমান নিয়েই মাঠ ছাড়তে হল ক্রোয়েশিয়ান তারকা ফুটবলার লুকা মদ্রিচকে। অন্যদিকে, এই ম্যাচে বিপক্ষের ডিফেন্সকে কার্যত তছনছ করে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিল লুইস এনরিকের দল। যিনি গত মরসুমে এমবাপে দল ছাড়ার সময় জোর গলায় বলেছিলেন ফরাসি তারকা দল ছেড়ে গেলে তাঁরা আরও ভালোভাবে খেলতে পারবেন। আর সেটা যে শুধু কথার কথা ছিল না এই ম্যাচে তা বেশ বুঝে গেলেন কিলিয়ান এমবাপে ও তাঁর দল।
নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই যথেষ্ট দাপট ছিল পিএসজির। ম্যাচের প্রথম ২৪ মিনিটের মধ্যেই ফরাসি ঝড়ে ভেঙে পড়ে রিয়াল ডিফেন্স। মাত্র ৭ মিনিটের ব্যবধানে ৩ গোল হজম করার সঙ্গে সঙ্গেই একপ্রকার নিশ্চিন্ত হয়ে যায় এমবাপেদের বিদায়। তবে শুধু ডিফেন্স নয় পুরো দলটাকে যথেষ্ট নড়বড়ে দেখিয়েছে। সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ম্যাচটা বের করে নিয়ে যান পিএসজির স্ট্রাইকাররা। ম্যাচের ৬ মিনিটে এনরিকের দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন ফাবিয়ান রুইজ। এর মিনিট চারেক পরেই নিখুঁত ফিনিশ থেকে ২-০ গোলে পিএসজিকে এগিয়ে দেন ওসমান ডেম্বেলে। এরপর ম্যাচের ২৪ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় ও দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন ফাবিয়ান রুইজ। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কুর্তোয়া ত্রাতার ভূমিকায় না দাঁড়ালে এমবাপে-ভিনিসিয়াসদের লজ্জা আরও বাড়তে পারতো। এদিকে, শুরুতেই তিন গোল খেয়ে বেশ চাপে পরে যায় স্প্যানিশ এই দলটি। সেই চাপের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় তাদের আক্রমণের ক্ষেত্রেও। প্রতিপক্ষ বক্সে আক্রমণ চালানোর সময় বারবার তালমিলের অভাব চোখে পড়লো ভিনিসিয়াস, এমবাপেদের মধ্যে। ফলে কিছু সুযোগ পেলেও তা থেকে গোল ব্যবধান কমাতে পারেনি তাঁরা। উল্টে খেলার ৮৭ মিনিট রিয়ালের কফিনের শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন রামোস।
এদিনের এই জয়ের সুবাদে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে চেলসির মুখোমুখি হবে পিএসজি। চলতি মরসুমে স্বপ্নের ফর্মে রয়েছে লুইস এনরিকের দল। ইতিমধ্যেই ফরাসি লিগ ওয়ান ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব ঘরে তুলেছে তারা। ফলে, রবিবার চেলসিকে হারাতে পারলেই প্রথমবারের জন্য ত্রিমুকুট জিতবে ফরাসি এই ক্লাবটি।
এদিকে ৩৯ বছর বয়সী ফুটবলার মদ্রিচ পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন। তখন রিয়াল মাদ্রিদ তিনটি গোল হজম করে ফেলেছিল। পরবর্তী সময়ে আরেকটি গোলও করেছে প্রতিপক্ষ দল। রিয়ালে এসে মদ্রিজ ছ’টি চ্যাম্পিয়ন লিগ জিতেছেন। চারটি ঘরোয়া লিগে পাশে স্পেনের সব ট্রফি মদ্রিচের হাতে শোভা পেয়েছিল। রিয়ালের কোচ জাবি আলোন্সো বলেছেন, মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। নিঃসন্দেহে মদ্রিচ একজন কিংবদন্তী ফুটবলার। এককথায় বলা যায় রিয়ালের জন্যই সারাজীবন ভেবেছেন তিনি। বিদায়ী ম্যাচে মদ্রিচ বলেছেন, একটা সময় নিজেকে সরিয়ে নিতেই হয়। তবে এই মুহূর্তটাকে আমি চাইনি। ফুটবল খেলায় সবরকম পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। জীবনে যেমন শুরু আছে, আবার তার একটা শেষও আছে। একটা কিছু করতে চেষ্টা করেছিলাম। সব ভাবনা সফল হয় না। ভাবতে পারছি না বাকি বছরগুলো কীভাবে অতিবাহিত করতে হবে। রিয়াল মাদ্রিদে খেলে আমি ফুটবলার হয়েছি। আমার জীবন বদলে গেছে একজন মানুষ হিসেবে। বিশ্বের সেরা ক্লাবের হয়ে খেলতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গর্বের বিষয়।