• facebook
  • twitter
Thursday, 22 May, 2025

মোহনবাগানের স্বপ্ন হারিয়ে গেল এফ সি গোয়ার দাপটে

গোয়ার মাঝমাঠ থেকে যেভাবে আক্রমণের ঝড়ের উৎস রচনা হয়, তা প্রতিরোধ করতে মোহনবাগানের রক্ষণভাগের ফুটবলাররা হিমসিম খেতে থাকেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

স্বপ্নভঙ্গ। ভারত সেরা মোহনবাগান সুপারজায়ান্টসের স্বপ্ন ভেস্তে গেল সুপার কাপ ফুটবলে। বুধবার শেষ চারের খেলায় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড লড়াইয়ে নেমেছিল এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে। স্বাভাবিকভাবে ফুটবলের যুদ্ধক্ষেত্রে এই লড়াইটা দু’দলের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গোয়া দল পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছিল মোহনবাগানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে। তবে, মোহনবাগান দল গঠন করেছিল তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে। আইএসএল ফুটবলে লিগ-শিল্ড জয়ী মোহনবাগান দলের তারকা ফুটবলারদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি কোচ হোসে মোলিনাও দেশে গেছেন। কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী কোচ বাস্তব রায়। স্বাভাবিকভাবে মোহনবাগান দলের কাছে প্রত্যাশা ছিল প্রথম ম্যাচে যেভাবে কেরল ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে জয় তুলে নিয়েছিল, ঠিক সেইভাবেই গোয়ার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ের মুখ দেখবে। কিন্তু তা হল না। শেষ পর্যন্ত গোয়ার কাছে ১-৩ গোলে হার স্বীকার করতে হল মোহনবাগানকে। স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড়রা বেশ হতাশ হয়ে পড়েন।

মাঠে নামার আগে সবুজ-মেরুন ব্রিগেডকে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল বেশ উজ্জীবিত। খেলার শুরু থেকেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের মধ্যে দিয়ে দু’দলের ফুটবলাররা নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন। খেলার চেহারায় অন্য রং লেগে যায়। তবে গোয়ার ফুটবলাররা অনেক সময় মোহনবাগানের আক্রমণ থেকে এগিয়ে থাকে। এককথায় বলা যায়, খেলার প্রথমার্ধে বেশ টানটান উত্তেজনা ছিল। খেলার ১৯ মিনিটের মাথায় কর্নার পেয়ে যায় গোয়া। সেই কর্নার থেকে উড়ে আসা বল বোরহার কাছে এসে পৌঁছয়। বোরহা কোনও দ্বিধা প্রকাশ না করে ব্রাইসনের কাছে ঠেলে দেন। ব্রাইসন বলটি পেয়ে আলতো শটে গোল করতে ভুল করেননি। গোয়া ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। কিন্তু পিছিয়ে থাকা মোহনবাগান আক্রমণ থেকে কখনওই সরে থাকেনি। ফুটবলের পরিভাষায় বলা হয় একে অপরের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে গেলে যে খেলা উচিত, তা মোহনবাগান খেলেছে। মোহনবাগান আক্রমণে ঝড় বাড়িয়ে গোয়ার রক্ষণভাগে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। আশিক কুরুনিয়ন মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা পুশ করে দেন সুহেল ভাটকে। সুহেল বক্সের মধ্যে ঢুকেই গোয়ার এক ডিফেন্ডারকে শরীরের ভাঁজে ফাঁকি দিয়ে গোল করে খেলায় সমতা (১-১) ফিরিয়ে আনেন। খেলায় সমতা ফিরে আসার পরে সবুজ-মেরুনের অভিষেক সূর্যবংশী, অধিনায়ক দীপক টাংরি, সাহাল আবদুল সামাদ ও দীপেন্দু বিশ্বাসরা যেভাবে অঙ্ক কষে আক্রমণ গড়ে তুলেছেন, তাতে মনে হয়েছিল হয়তো মোহনবাগান গোল করে এগিয়ে যাবে। কিন্তু তা হল না। দেখা গিয়েছে, গোলের সুযোগ তাদের কাছে এলেও গোয়ার ডিফেন্ডার ইকার গুয়ারোক্সেনা ও জয় গুপ্তা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। সেই সুযোগ থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন দীপক টাংরিরা। খেলার প্রথম পর্বে ফলাফলে কোনও পরিবর্তন হয়নি।

দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই আবার আক্রমণ শানাতে থাকে গোয়া। বিশেষ করে গোয়ার মাঝমাঠ থেকে যেভাবে আক্রমণের ঝড়ের উৎস রচনা হয়, তা প্রতিরোধ করতে মোহনবাগানের রক্ষণভাগের ফুটবলাররা হিমসিম খেতে থাকেন। রীতিমতো মানোলো মারকুয়েজের ফুটবলাররা আরও আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে মোহনবাগানের গোলমুখে বারবার পৌঁছে যেতে থাকে। আর ঠিক সেই সময় মোহনবাগানের গোলরক্ষক ধীরাজ সিং পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে বাঁশী বাজিয়ে জানিয়ে দেন পেনাল্টি। খেলার ৫১ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে ইকার গুয়ারোক্সেনা গোল করে গোয়াকে এগিয়ে দেন। গোয়ার তীব্র আক্রমণে মোহনবাগানের রক্ষণভাগে ফাটল ধরে যায়। খেলার ৫৮ মিনিটে কর্নার পায় গোয়া। কর্নার কিক নিতে আসেন বারহা হেরেরা গঞ্জালেজ। বিশ্বমানের কর্নার থেকে বিশ্বমানের গোল করলেন গঞ্জালেজ। গঞ্জালেজের শট সরাসরি গোলের জালে গিয়ে আঘাত করে। গোলরক্ষক ধীরাজ সিং বুঝতেই পারেননি বলের ফ্লাইটটা। যার ফলে গোয়া দল ৩-১ গোলের ব্যবধানে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এগিয়ে থাকে। খেলার ৬১ মিনিটে মোহনবাগানের সালাউদ্দিন একেবারে গোলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যে শটটি নেন, তা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গোয়ার দুই ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন হয়ে যায়। খেলার ৮৩ মিনিটে সুহেল ভাটের গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। গোয়ার কোচ বোরহাকে তুলে নিয়ে মাঠে নিয়ে আসেন টাভোরাকে। শেষ পর্যন্ত মোহনবাগান যেমন গোল করতে পারেনি, তেমনই গোয়ার ফুটবলাররাও গোলের ব্যবধানও বাড়াতে পারেননি। গোয়া জয় লাভ করে সুপার কাপ ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যায়। মোহনবাগানের সমর্থকরা আশা করেছিলেন এবারের সুপার কাপের ফাইনালে খেলতে পারবে। কিন্তু সমর্থকদের সেই স্বপ্ন হারিয়ে গেল। আসলে মোহনবাগানের তরুণ ফুটবলাররা শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে যে অঙ্কে খেলা উচিত ছিল, তা পারলেন না। ত্রিমুকুট পাওয়া হল না মোহনবাগানের। হার স্বীকার করে ভুবনেশ্বর থেকে চলে আসতে হয়েছে মোহনবাগানকে।