• facebook
  • twitter
Saturday, 25 January, 2025

রবির আলোয় কলকাতা ময়দান আলোকিত

রবি হাঁসদার জীবন কাহিনি তার সতীর্থদের প্রেরণা দেবে।  ট্রফি জয়ের গুরুত্বপূর্ণ গোলটা করেই রবি হাঁসদা গায়ের জার্সিটা খুলে গ্যালারির দিকে তাক করে বাংলার শ্রেষ্ঠত্বকে ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরে।

ফাইল চিত্র

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ী সকল ফুটবলারদের হাতে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হলো। ইতিমধ্যে বাংলা দলের স্টাইকার রবি হাঁসদা আইএসএলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। ৬ মাসের লোনে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব রবি হাঁসদাকে তাদের দলে সিং করিয়েছে। রবি হাঁসদা মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে কোচ চের্নিশভের অধীনে প্র্যাকটিসে নেমে পড়েছে। এখন পর্যন্ত রবি হাঁসদা বাংলা সন্তোষ ট্রফি দলের একমাত্র সদস্য যে আইএসএল দলে নাম লেখাতে সমর্থ হয়েছে।

রবি এবারের সন্তোষ ট্রফির টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১২টা গোল করেছে। ৫৪ বছর আগে সন্তোষ ট্রফিতে মহম্মদ হাবিবের সবোর্চ্চ ১১টা গোলের রেকর্ড সে ভেঙে দিয়েছে।

সন্তোষ ট্রফিটা নিয়ে যেদিন কলকাতা বিমানবন্দরে রবি হাঁসদা তার বাংলা দলকে নিয়ে পদার্পণ করলেন, সেদিন বিমানবন্দরে তাদের নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখার মত ছিল। ঢাকের বাদ্যি ও মিডিয়ার ক্যামেরার আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে উঠেছিল। সেদিনের হাজার হাজার ভোল্টের আলোর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন রবি হাঁসদা। রবি হাঁসদা কেবল তার মহল্লার প্রতি নয়, সারা বাংলার ফুটবল মহলের দিকে সে আলোর অভিমুখ সাফল্যের সাথে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। এক লহমায় রবি হাঁসদাদের প্রাত্যহিক জীবনের রুটিনে আমূল বদল ঘটে গেল।

সন্তোষ ট্রফির প্রাথমিক পর্বে বাংলার কল্যাণী স্টেডিয়ামে খেলা পড়েছিল। রবি হাঁসদার যে একটা নিজস্ব সংসার আছে, তিন বছরের একরত্তি ছোট্ট একটি মেয়ে সন্তান আছে—আচ্ছা, আমরা ক’জন তা আগে জানতাম। ঘরের মাঠ ও শক্তিশালী বাংলার স্পোর্টস মিডিয়ার সৌজন্যে রবি ও তার পরিবারের কাহিনি আমাদের সামনে আসলো।তাও তখনও সম্পূর্ণ কাহিনি জানা যয়নি।পরে জানা গেল—কয়েক মাস আগে রবি তার বাবাকে হারিয়েছে। খেলা না থাকলে রবি মাঠে চাষ করতে যায়। রবির মা’কে সংসারের রোজগারের জন্য প্রতিদিন অন্যের জমিতে চাষ করতে হয়। প্রতিদিনকার রোজগারের জন্য রবি খেলা ছেড়ে টোটো কিনে রাস্তায় নামাবে,তা ভেবেই ফেলেছিল। কারন, জাতীয় গেমসে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার পর ২ বছর কেটে গেলেও রবির কোনো চাকরি জোটেনি। বাংলার প্রাথমিক পর্ব অবধি রবি সম্পর্কিত এতটুকু কাহিনীর পরিচিতি ছিল।

এরপর রবি বাংলার হয়ে মূলপর্বের খেলায় অংশগ্রহণ করতে গেল। মূলপর্ব থেকে বাংলা দল বিদায় নিলে রবি কাহিনির ইতি ঘটে যেত।রবিকে সংসার বাঁচাতে ও ছোট্ট সন্তানের আহার জোগাড়ে হয়তো বা টোটো নিয়েই রাস্তায় নেমে পড়তে হতো। রবির তেজেই কেরল ঝলসে ছাই হয়ে গেছে। তথাপি রবিকে স্ত্রী ও সন্তান সহ সন্তোষ ট্রফি জয়ের ছবি তুলে রাখতে আরও একদিন বেশি সময় লেগেছিল। টাকার অভাবে রবির স্ত্রী তাদের সন্তানকে নিয়ে হায়দ্রাবাদ ছুটে যেতে পারেনি। রবি কাহিনির, পরবর্তী চিত্রনাট্য সেদিনের বিমানবন্দরে থেকেই শুরু হয়।

বর্ধমানের ভাতারের মশারু মাঝিপাড়ার রবি কাহিনির চিত্রনাট্য পর্ব -২র শুভসূচনার নিয়ন্ত্রক রবি নিজে নয়। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে রবি হাঁসদারের জীবনের পরের ধাপ শুরু হ’ল। রবি নিজে গোল করে এবং গোল করিয়ে বাংলা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। রবির নেতৃত্বে সন্তোষ ট্রফি জয় এবং বাংলার সাফল্যের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী দেওয়া চাকরি—বাংলার ফুটবল মহলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হল।

রবিরা যে পরিবেশ ও সময়ের মধ্যে জীবন কাটায়—সে পরিধির মধ্যে থেকে তাদের জীবনের মানে বোঝানোর এমন প্রকৃষ্ট উদাহরণ আগামী দিনের জন্য ইঙ্গিতবাহী হয়ে রইল।

রবি হাঁসদার জীবন কাহিনি তার সতীর্থদের প্রেরণা দেবে।  ট্রফি জয়ের গুরুত্বপূর্ণ গোলটা করেই রবি হাঁসদা গায়ের জার্সিটা খুলে গ্যালারির দিকে তাক করে বাংলার শ্রেষ্ঠত্বকে ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরে। সন্তোষ ট্রফি জয় ও মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চাকরি— রবির আলোয় ময়দান এখন আলোকিত হয়ে আছে।