ভারতীয় ফুটবলে ইস্টবেঙ্গলের দৌরাত্ম্য এবং দাপট নিয়ে অনেক কাহিনি লেখা যায়। আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ইডেন উদ্যানে ইরানের প্যাস ক্লাবকে হারিয়ে সেদিন শান্ত মিত্রের ইস্টবেঙ্গল অভাবনীয় জয় তুলে নিয়েছিল। সেদিনের কথা আজও রূপকথার মতো সবার মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। ইস্টবেঙ্গল বলতেই আলাদা অনুভূতি, আলাদা আবেগ। তাই ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা সবসময়ই নতুন পরিচয়ে নাম লেখাতে পারেন। এটাই ইস্টবেঙ্গলের মাহাত্ম্য। অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে, ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা সিংহের মতো গর্জন করে বাজিমাত করেন। এমনই দৃশ্যপটের ছবিটা দেখতে পাওয়া গিয়েছে গত মঙ্গলবার আইএসএল ফুটবলে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে। খেলার প্রথমার্ধে পাঞ্জাবের ফুটবলাররা দু’টি গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে চাপের মধ্যে রেখে দিয়েছিল। দু’গোলে পিছিয়ে পড়া ইস্টবেঙ্গলকে দেখে দর্শকরা হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন। হয়তো অনেকেই ভেবেছিলেন, এই খেলা দেখার আর প্রয়োজন নেই। বাড়ি চলে যাওয়াটাই ঠিক হবে। তাঁদের চোখে জল। আসলে ইস্টবেঙ্গলকে তাঁরা এই অবস্থায় দেখতে চাননি। যে ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে তাঁরা গর্ব করেন, ভালোবাসার আলপনায় ছবি আঁকেন, সেই জায়গায় যদি অন্ধকার ভিড় করে তার থেকে লজ্জার আর কিছুই নেই। তবুও মনকে সান্ত্বনা দিয়ে খেলা দেখার অপেক্ষায় সময় গুণেছেন।
দ্বিতীয় পর্বে খেলা শুরু হতেই ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজো মোক্ষম একটা চাল চাললেন। নারমেও মহেশকে বসিয়ে দিয়ে মাঠে আনলেন পিভি বিষ্ণুকে। খেলার চেহারাটা পুরোপুরিই বদলে গেল। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা উজ্জীবিত হয়ে উঠলেন নতুন আশায়। ভুলেই গেছেন তাঁরা চোট আঘাতে ইস্টবেঙ্গল শিবির জর্জরিত। কার্ডের সমস্যায় বেশ কয়েকজন ফুটবলার বাইরে। তাতে কী হয়েছে? ফুটবলের রণক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে সাহসী ভূমিকা নিতে হয়। সেই আগ্রাসী ভূমিকা থেকেই প্রতিপক্ষ পাঞ্জাবের দুর্গকে ভেঙেচুরে একাকার করে দিলেন লাল-হলুদ ফুটবলাররা। মাত্র ২০ মিনিটে সুনামি ঝড়ে ইস্টবেঙ্গলের জয় নিশ্চিত হয়ে গেল। পাঞ্জাবের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের কোনও ঠিকানাই খুঁজে পাওয়া গেল না। একের পর এক গোল করে ইস্টবেঙ্গল অবিশাস্য জয় তুলে আনল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে। কেউ কি হলফ করে বলতে পারবেন, এইরকম দু’গোলে পিছিয়ে থেকে প্রতিপক্ষের গোলের জালে চারবার বল জড়িয়ে দিয়েছেন? পরিসংখ্যানবিদরা এই নজির দেখতে গিয়ে হিমশিম খাবেন।
Advertisement
ইতিহাসের পাতায় অনেক ঘটনা ইস্টবেঙ্গলের নামের পাশে লেখা রয়েছে। আর এবারে নতুন সংযোজন পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলের গর্জন কাকে বলে! আর এই গর্জনে ইস্টবেঙ্গল শিরোনামে উঠে এসে বলতে পারল, ৪-২ গোলের ব্যবধানে জিততে জানে। আহত বাঘ যেভাবে গর্জন করে বনকে আতঙ্কে ফেলে দেয়, ঠিক সেইভাবে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা আঘাত পেয়ে যে গর্জন ফুটবল মাঠে তুলল, তা ভোলার কথা নয়।
Advertisement
আত্মবিশ্বাস আর নিজের প্রতি নির্ভরতাকে কীভাবে তুলে ধরতে হয়, তার ওষুধটা হয়তো ড্রেসিংরুমে তুলে দিয়েছিলেন কোচ অস্কার ব্রুজো। ব্রুজো চেষ্টা করেছেন খেলোয়াড়দের মানসিকতার পরিবর্তন করে দিতে। সেই ভাবনাতেই লাল-হলুদ ফুটবলাররা নতুন প্রাণ পেয়েছিলেন। সেই তাড়নাতেই ইস্টবেঙ্গলের সব ফুটবলাররা ইতিহাসে নায়কের ভূমিকায় নাম লেখালেন পাঞ্জাব এফসি’র বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ে।
Advertisement



