• facebook
  • twitter
Thursday, 12 December, 2024

আইএসএলে ঘুরে দাঁড়াতে মহামেডান ম্যাচ জিততে মরিয়া ইস্টবেঙ্গল

পাঞ্জাব এফসি থেকে আইএসএলের সবোর্চ্চ এসিস্ট স্কোরার মাহি তালালকে দলে নেওয়া হয়েছে। মহামেডান স্পোটিং ক্লাব থেকে গত মরশুমে কলকাতা লিগের সবোর্চ্চ গোলদাতা ডেভিড লালচুনলুঙ্গাকেও ইস্টবেঙ্গল এফসি দলে নিয়েছে।

এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের ভাবনা আপাতত দূরে সরিয়ে রেখে এখন আইএসএল নিয়ে ভাবতে চায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। পরের ম্যাচ মহামেডান এসসি-র সাথে খেলতে হবে। বড়ম্যাচ খেলার আগে ইস্টবেঙ্গল এফসির কোচ অস্কার ব্রুজো দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে সর্তকবার্তা দিয়ে রেখেছেন। টিমের জয়ের ধারা তিনি ধরে রাখতে চান।আইএসএলের সুপার সিক্সে পৌঁছানো এখন তার পাখির চোখ বলা যায়। বাকি ১৮টা ম্যাচের মধ্যে ১০টা ম্যাচ জয়ের লক্ষ্যমাত্রা তিনি টিমের কাছে রেখেছেন। এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে টিমের ফোকাস ধরে রেখেই এএফসির নকআউটে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন। এএফসির জয়ের ফোকাসেই আইএসএলে প্রথম জয় ও পয়েন্ট তিনি ঘরে তুলতে চান।

আইএসএলে অংশগ্রহণ করার পর থেকে ইস্টবেঙ্গল এফসির অবস্থান কখনও ভালো জায়গায় ছিলনা। গত ৪ বছরের মধ্যে ৩ বার লিগটেবিলে ৯ নম্বর জায়গা হয়েছে। এবং ১ বার লিগ টেবিলের শেষ স্থানটি পেতে হয়েছে। অবশ্য আইএসএলে অংশগ্রহণের পর থেকে নানা অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন মধ্যে দিয়ে চলতে হয়েছে। বিশেষত অর্থলগ্নিকারি সংস্থাদের সাথে ক্লাব প্রশসানের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। যার প্রভাব টিমের মধ্যে পড়েছে। কিন্তু এই মরশুমের শুরু থেকে ক্লাব প্রশাসন ও ইমামি গ্রুপের সাথে পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই টিমগঠন হয়েছে। গত মরশুমে আইএসএলের সেরা দেশি ও বিদেশি ফুটবলারদের দলে নেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ মোহনবাগান এসসি-র রক্ষণের সেরা দুই ফুটবলার আনোয়ার আলি ও হেক্টর ইউস্থাকে যেমন নেওয়া হয়েছে।

তেমনিই কেরল ব্লাস্টার্স থেকে ভারতীয় দলের ফুটবলার জিকসন সিং-এর সঙ্গে, আইএসএলের গত মরশুমের সবোর্চ্চ গোলদাতা দিমি দিয়ামান্টোসকে দলে নেওয়া হয়ে। পাঞ্জাব এফসি থেকে আইএসএলের সবোর্চ্চ এসিস্ট স্কোরার মাহি তালালকে দলে নেওয়া হয়েছে। মহামেডান স্পোটিং ক্লাব থেকে গত মরশুমে কলকাতা লিগের সবোর্চ্চ গোলদাতা ডেভিড লালচুনলুঙ্গাকেও ইস্টবেঙ্গল এফসি দলে নিয়েছে। এককথায় আইএসএলের দলবদলে এই মরশুমে ইস্টবেঙ্গল এফসি সকলকে টেক্কা দিতে পেরেছে। কিন্তু ফুটবল মরশুমের শুরুতেই ডুরান্ড কাপের নকআউটে আইলিগের শিলং লাজংয়ের মত টিমের কাছে হারতে হয়েছে। তার আগে এএফসির চ্যাম্পিয়ান লিগ-টুয়ের যোগ্যতা পর্বের ম্যাচে হারতে হয়েছে। এছাড়া আইএসএলের প্রথম ম্যাচ থেকেই পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়। প্রথম ৩ ম্যাচের পর কোচ কুয়াদ্রাত দলের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। নতুন কোচ অস্কার ব্রুজো আসলেও দলের হার রোখা যায়নি। টানা ৬টা ম্যাচে টিমকে হারতে হয়েছে।

এএফসি-র চ্যাম্পিয়ান লিগ-টুয়ের যোগ্যতাপর্বের ম্যাচ হারলেও চ্যালেঞ্জ লিগে খেলার সুযোগ মিলেছিল। এএফসির চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করে কোয়ার্টার ফাইনালে দল পৌঁছেছে। গ্রুপের ৩ ম্যাচেই ইস্টবেঙ্গল এফসি অপরাজিত ছিল। শেষ দুটো ম্যাচ তারা টানা জিতেছে। এই জয়ের ধারার মাঝেই তারা আইএসএলের পরবর্তী ম্যাচে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মুখোমুখি হতে চলেছে। ঘরের মাঠে সমর্থকদের মাঝে, এই ম্যাচ ইস্টবেঙ্গল এফসি জিততে চায়।

আইএসএলে অবশ্য মহামেডান ক্লাবও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। লিগ টেবিলে তারা ১২তম স্থানে। গত মরশুমে আইলিগে চ্যাম্পিয়ান হয়ে মহামেডান স্পোর্টিং আইএসএলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। বড় বাজেটের আইএসএলে খেলতে মরশুমের শুরুতেই তাদের স্পনসর জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়। তবুও গত মরশুমের আইলিগ জয়ী দলটাকে মোটামুটি তারা ধরে রাখতে পেরেছে। কলকাতা লিগের সবোর্চ্চ গোলদাতা ডেভিড দল ছাড়াতে টিমের আক্রমণভাগের ক্ষতি হয়েছে। ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে আক্রমণভাগে মাকান ছোটে দলে যোগ দিলেও ডেভিডের অভাব পূরন হয়নি। বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে রক্ষণে গত মরশুমের আদজেই ও মাঝমাঠের কাশিমভ ও গোমেজরা দলে থেকে গেছে। নতুনভাবে দলে ফ্রান্সের ফ্লোরেন্ট ওজিয়ে ও ব্রাজিলের ফ্রাঙ্কা এখনো দলের সঙ্গে সড়গড় হয়ে উঠতে পারেনি। মধ্য আফ্রিকার মানকোজোই বিকল্প হিসেবে প্রাথমিকভাবে নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়েছে। সামগ্রিকভাবে মহামেডান স্পোর্টিং আইএসএলের লড়াই করার মত দল হিসেবে নিজেদের জাহির করতে পেরেছে বটে। কিন্তু সমর্থকদের প্রত্যাশিত সুপার সিক্সে লড়াই করার টিম হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ফলত সমর্থকদের মধ্যে টিম নিয়ে হতাশা বেড়েছে। গত মরশুমে কলকাতা লিগের পাশাপাশি মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব আইলিগে জয়ী হয়েছে। পরপর ৪ বার কলকাতা লিগের মত ঐতিহ্যের লিগ জয়ে স্বাভাবিকভাবেই সমর্থকদের মধ্যে যে উন্মাদনা বেড়েছিল, আইলিগ জয়ে তার মাত্রা বেড়েছে। কিন্তু আইলিগের সঙ্গে আইএসএলের গুণগত মানের পার্থক্য রয়েছে। টিমের সাফল্যে বিদেশি ফুটবলারদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে হয়। ইস্টবেঙ্গল এফসি ৫ বছর ধরে আইএসএলের লিগে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেও এই মরশুমে তারা পরপর ৬টা ম্যাচ হেরেছে। প্রথম বছর আইএসএলে খেলতে নেমে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের এই ব্যর্থতাকে তাদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য সহানুভূতির সঙ্গে দেখা যেতেই পারে।

বাংলায় অবশ্য তিন বড় দলের লড়াইয়ে কোন অজুহাত সমর্থকরা মানতে নারাজ। তারা ডার্বি ম্যাচে প্রিয়দলের জয় দেখতে চায়। তাই, আগামী ৭ নভেম্বর ইস্টবেঙ্গল এফসি ও মহামেডান স্পোর্টিং—উভয় দলই তাদের সন্মানের ম্যাচ কখনও হারতে চাইবে না।

আইএসএলের এই মরশুমে উভয় দল মিলে লিগের শেষ দুই অবস্থানে আছে। এইরকম কঠিন অবস্থায় ইস্টবেঙ্গল এফসি, তাদের এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে তিনটে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের মাধ্যমে নিজেদেরকে সংগঠিত করে তুলতে পেরেছে। অপরদিকে, মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব দুটো প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলার মাধ্যমে নিজেদের সেভাবে আরও সংগঠিত করার সুযোগ পায়নি। বা, তাদের সেই যোগ্যতা পরীক্ষানিরীক্ষায় ঝালাই করে নেওয়ার সুযোগ ছিলনা। ফলে, মহামেডান স্পোর্টিংকে তাদের শেষ তিন ম্যাচের পরবর্তী অবস্থায় শূন্য থেকেই কোচ চেরর্নিশভকে দলগড়ার কাজ শুরু করতে হচ্ছে। পক্ষান্তরে, ইস্টবেঙ্গল এফসির কোচ অক্সার ব্রুজো তার পরিকল্পনামাফিক ইস্টবেঙ্গল এফসির টিমকে চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক কাজটা সেরে ফেলেছেন। এএফসির চ্যালেঞ্জ কাপের যোগ্যতাপর্বে জয়ী হয়ে ইস্টবেঙ্গল এফসি তাদের আইএসএলে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে মহামেডান স্পোটিংয়ের ম্যাচকে বেছে নিয়েছেন।