প্রশ্ন : এবারের প্রিমিয়ার লিগের খেলা গত মরশুমের তুলনায় কেমন দেখলেন?
অর্পণ : আমাদের শ্রীভূমি স্পোটিং ক্লাব গ্রুপ-বি’তে ছিল।অন্য গ্রুপের খেলা সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি। তবে এবার ছেলেদের খেলায় অতিরিক্ত তাগিদ দেখা গেল।আমাদের গ্রুপে তো সুপার সিক্সে যাওয়ার জন্য বেশ লড়াই হয়েছে।
Advertisement
সৌরেন : এক মরশুম থেকে পরের মরশুমে কিছু তো ফাঁরাক হয়েই থাকে। প্রথমতঃ দলগঠনের উপর টিমের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে। আর এখানেই সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। ২/৩বছর ধরে লিগে যেসমস্ত ফুটবলারেরা ভালো খেলছেন–যে ক্লাবের টাকা আছে, তারা সেই ফুটবলারদের সহজে দলে নিতে পারছে। ফলে, ভালো বাজেটের দল যারা গড়তে পারছে, তারা ভালোই খেলছে। প্রিমিয়ারে উঠে আসা নতুন ক্লাব ছাড়া অন্যসব ক্লাব কিন্তু এক ধারাতেই চলছে।
Advertisement
প্রশ্ন : সুপার সিক্সের দলগুলোর মধ্যে কোন দলের খেলা ভালো লাগলো?
অর্পণ : আমি আমাদের গ্রুপের ক্ষেত্রে বলতে পারি, যোগ্য দলরা সুপার সিক্সে গেছে। আলাদা করে কোনও দলকে বাছাই করা কঠিন। গ্রুপের সব দল তো আর সুপার সিক্সে যাবেনা। অনেক দলই ভালো খেলেছে। তবে, আলাদা আলাদা দলকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন, ইউনাইটেড স্পোর্টস অনেকদিন একসঙ্গে প্র্যাকটিস করে যাচ্ছে। ওদের প্লেয়ারদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা অনেক ভালো। দলে অনেক ভালো যোগ্যতা ও উন্নত স্কিলের ফুটবলার আছে। ওদের খেলার ধরন একপ্রকার। আবার, ডায়মন্ড হারবার এফসির হাতে প্রচুর ফুটবলার। ওরা প্রতিপক্ষের শক্তি বুঝে ম্যাচে দলগঠন করতে পারে। এভাবে বিভিন্ন দলকে আলোচনায় আনা যায়। ভালো,অনেক ভালো ভালো দল লিগে খেলেছে।
সৌরেন : যোগ্য দলেরা সুপার সিক্সে গেছে। ইস্টবেঙ্গল দল বেশ শক্তিশালী দল। ওরা অনেকেই একসঙ্গে এই ক্লাবে কয়েক মরশুম লিগে খেলছে। এছাড়া ইস্টবেঙ্গল আইএসএলের ফুটবলারদের খেলাচ্ছে। ভালো দল। পুলিশ এসি, সুরুচি সংঘ ও কাস্টমস ক্লাব ভালো ফুটবল খেলেছে। এদিকে ইউনাইটেড স্পোর্টস ও ডায়মন্ড হারবার ছাড়া ভবানীপুর, ইউনাইটেড কলকাতা, রেনবো ও শ্রীভূমি ক্লাব যথেষ্ট শক্তিশালী দল ছিল।
প্রশ্ন : ভালো ফুটবলের ক্ষেত্রে বর্ষায় মাঠ কতটা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালো?
অর্পণ : বারাকপুর ও নৈহাটি স্টেডিয়ামের মাঠ নিয়ে সমস্যা নেই। অন্য মাঠগুলোতে ভালো ফুটবল খেলা কষ্টকর। বারাকপুর ও নৈহাটির মাঠের পাশাপাশি বড় তিন দলের মাঠে খেলার সুবিধা থাকলে ভালো। ভালো ফুটবলের জন্য ভালো মাঠের ব্যবস্হা করতেই হবে।
সৌরেন : পিয়ারলেস ও এরিয়ান ম্যাচ দেখলাম। উলুবেড়িয়ার মাঠে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। কি করে ভালো খেলা হবে? গ্রুপ টেবিলের উপেররদিকের টিমগুলোর খেলা, তারা টিমের সেফটা বজায় রেখে পাসিং ফুটবল খেলে থাকে। চুঁচুড়ার মাঠটার একই অবস্থা। এতে অনেক ভালো দল আটকে যাচ্ছে। লিগের খেলার এই সময়টাকে এড়িয়ে যেতে পারলে ভালো হয়।
প্রশ্ন : গত মরশুমে সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলার ফুটবলারদের বিকল্পের দেখা গেল?
অর্পণ : রবি হাঁসদার বিকল্প দেখলাম না। এছাড়া অন্যান্য পজিশনে অনেক ভালো ভালো ছেলে খেলেছেন। আইএফএ প্রতি ম্যাচে ৬জন করে ভূমিপুত্র খেলানোর নিয়ম করাতে, অনেক ভালো ভালো বাংলার ছেলেরা খেলার সুযোগ পেয়েছে। ভিন্নরাজ্যের ফুটবলার খেলানোর সীমাবদ্ধতা আছে। ফলে,অনেক বাংলার ছেলেরা বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছেন। এটা লিগের প্রাপ্তি বলা যায়।
সৌরেন : গতবার সন্তোষ ট্রফি জয়ের পর রাজ্য সরকার যেভাবে ছেলেদের চাকরি দিল। এতেই এবারের লিগে ভালো খেলার জন্য ছেলেদের অনেক উৎসাহিত করেছে। এখন গ্রামগঞ্জের থেকে আরো ভালো ভালো ছেলে বেছে নিয়ে আসতে হবে। গ্রামের ছেলেরাও এখন কলকাতা লিগে খেলতে চাইছেন। উত্তরবঙ্গের বেশকিছু ছেলে এবার লিগে খেলছেন। এছাড়া পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মতন অনেক জেলার ছেলেরা কলকাতা লিগে খেলতে আগ্রহী হয়েছে।
প্রশ্ন : কিন্তু সন্তোষ ট্রফির অনেক ফুটবলার এবার তাদের নিজেদের দলেই নিয়মিত খেলার সুযোগ পাননি। কেন এমন হলো?
অর্পণ : আমি ছেলেদের দোষ দেবো। সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ান হওয়ার পর আমাকে রির্জাভ বেঞ্চে বসিয়ে রাখবে? ১২টা ম্যাচ খেলার ক্ষমতা নেই? এরা বড় জায়গায় খেলবেন? আমি নিজে খেলার সুযোগ পাওয়ার জন্য ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ছেড়ে মহামেডান স্পোটিংয়ে খেলেছি। সেই মহামেডান স্পোটিংয়ে খেলেই ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। আমি রেগুলার খেলার রিক্স নেবো না? আরে, ২ বছর পর হারিয়ে গেলে, তোমায় কেউ চিনবেই না। এরা ভাবছেন চাকরি পেয়ে গেছি, আমার আর কিছু দরকার নেই। আরে, তোমার আইএসএল ও আইলিগ খেলার স্বপ্ন থাকবে না? সঞ্জয় সেন ইস্টবেঙ্গলের আদিত্য পাত্রর নামের দিকে না গিয়ে, সৌরভ সামন্তকে খেলিয়েছেন। এখন সে যদি নিজে রির্জাভ বেঞ্চে সময় কাটায়,তবে ক্ষতি কার? ছেলেদের নিজস্ব তাগিদটাই আসল। দলের সঙ্গে চুক্তি করার আগে ভাবতে হয়। দীর্ঘসময়ের চুক্তি থাকলেই সমস্যা।
সৌরেন : আমরা যখন ফুটবল খেলেছি, তখন দলে ঢুকতে অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হতো। প্রত্যেক টিম প্রত্যেকের বিরুদ্ধে খেলতো। এত খেলা, নাভিশ্বাস উঠে যেতো।কিন্তু নিজের জায়গা সহজে ছেড়ে দিতাম না। এত অল্পতে সন্তুষ্ট হলে নিজেদেরই ওরা ক্ষতি করবে।
প্রশ্ন : আপনার দলের খেলায় কতটা সন্তুষ্ট?
অর্পণ : আমাদের শ্রীভূমির এটা প্রথম বছর। প্রথম ম্যাচটাই ড্র হয়ে গেল। ঠিক আছে, টিমটা সম্পর্কে বোঝা গেল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মহামেডানের কাছে বাজে হার। পরপর ম্যাচ জেতাও হয়নি। ৩টে ম্যাচ খেলে ২টো ম্যাচ জিতে, ১টা বাজে রেজাল্ট হতে পারে। কিন্তু ম্যাচ না জিতে, সব ম্যাচ ড্র হলেই পয়েন্টে পিছিয়ে পড়তে হবে। তবে, অনেক ঘরের ছেলে ভালো খেলেছেন। ভিন্নরাজ্যের ঋত্বিক রাওয়াতের মধ্যে বড় লেভেলে খেলার সম্ভাবনা আছে।
সৌরেন : ভবানীপুরের বিরুদ্ধে বাজে হারের পরেই দায়িত্ব ছেড়ে দিই। তবে, টিমটা প্রায় দেড়মাস প্র্যাকটিস করিয়ে বলতে পারি, সবার আগে সুপার সিক্সে যাওয়ার মত খিদিরপুর দল ছিল। ভিন্ন রাজ্যের ৭টা প্লেয়ারই ভালো ছিল। উইংয়ে সুদীপ আচার্য, স্টপারে সুমন রায় ও স্ট্রাইকার অর্ঘ্য সরকার খুব ভালো খেলোয়াড়। রোশন ছেত্রী বলে মাঝমাঠের একটা ভালো ছেলে দলে ছিল।
প্রশ্ন : কলকাতা লিগে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে অভিযোগে খেলোয়াড় ও সহকারী কোচেদের আইএফএ শাস্তি দিয়েছে। এর অর্থ তো কিছু একটা ঘটনা ঘটছে?
অর্পণ : আমি কম বুঝি। গল্প শোনার মত শুনছি। তবে অসহ্য বিষয়। বেদনাদায়ক। আমাদের ক্লাবে ছেলেদের মরশুমের শুরুতেই সকলকে সর্তক করা হয়েছে। দায় ক্লাব নেবেনা। ছেলেদের স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছিল। ফুটবলকে বাঁচানোর জন্য যা করার, তা করতে হবে। গরিব ঘরের ছেলে বলে ছেড়ে দেওয়া যায়না। এখানে চাকরি পেয়েও তারা খেপের মাঠের রোজগারে মন দেয়। এইসব মানসিকতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্হা নেওয়া উচিত।
সৌরেন : ভয়ের ব্যাপার। আন্তজার্তিক সমস্যা। আইএফএ শাস্তি দিচ্ছে। হয়তো আরও বড় পদক্ষেপ নেবে। তবে,সন্তোষ ট্রফিতে জয় এসেছে। ছেলেদের চাকরি হচ্ছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এদের সচেতন হতে হবে।
Advertisement



