রনজিৎ দাস
কিছুদিন আগে কলকাতা ফুটবল লিগের প্রিমিয়র ডিভিশনের গ্রুপ বিন্যাস করা হল একটি বড় ক্লাবে। কিন্ত আইএফএ’র এই প্রিমিয়র লিগের গ্রুপ বিন্যাসে, লটারির পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ উঠেছে। ২৬ দলের প্রিমিয়র লিগ জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হওয়ার কথা। লটারির মাধ্যমে ২৬ দলকে দুটো গ্রুপে ভাগ করা হয়। যে মঞ্চে লটারি অনুষ্ঠিত হলো,সেখানে ‘ট্রে’ করে দুটো খাম নিয়ে আসা হয়। এবং বিভিন্ন প্রাক্তন ফুটবলার সেই খাম খুলে বিভিন্ন গ্রুপের নির্বাচিত দলের নাম ঘোষনা করেন। এই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমতঃ লিগের খেলা কখনও গ্রুপ বিন্যাস করে হয়না। যদিওবা তাকে মান্যতা দেওয়া হলো,সেক্ষেত্রে প্রতিটি দলের উপস্থিতিতে লটারি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অনেক ক্লাবই তাদের প্রতিনিধি পাঠায়নি। ক্লাব প্রতিনিধিদের গুরুত্ব অস্বীকার করে একঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলারদের সক্রিয়তায় এই লটারি করিয়ে নেওয়া হলো। লটারি পদ্ধতিতে প্রধান লক্ষ্য তার স্বচ্ছতা রক্ষা করা। এক্ষেত্রে সমস্ত ক্লাবের নাম প্রত্যেক কাগজের টুকরোতে আলাদা আলাদা করে লিখে তা একটা পাত্রে রাখতে হয়। এবং ভালো করে সেই কাগজের টুকরোগুলো মিশিয়ে দেওয়ার রীতিই মানতে হয়। কাগজের টুকরোগুলো রাখা সেই পাত্রকে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নেওয়া হয়। তারপর একে একে পাত্রের দিকে না তাকিয়ে,তার ভিতর থেকে একটা করে ক্লাবের নাম লেখা কাগজের টুকরো তুলে নেওয়া হয়।আর যে পাত্রের মধ্যে কাগজের টুকরোগুলো থাকে তা উপস্থিত প্রতিনিধিরা বাইরের থেকে দেখতে পারেন।
এই রীতি উপেক্ষা করে কিভাবে ‘ট্রে’-তে করে ক্লাবের নাম লেখা দুটো খাম নিয়ে আসা হলো? ঐ খামগুলো লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে কে বা কারা তারমধ্যে থেকে দুটো করে খাম ‘ট্রে’-তে তুলে দিল? ট্রে’তে দুটো খাম রেখে একজনকে বলা হচ্ছে দুটো খাম তুলে নিন। বিষয়টা হাস্যকর হলোনা?প্রতিটি খাম এত বড় যে একটা ট্রে’তে পাশাপাশি রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।তাই ট্রে থেকে প্রথম খামটা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাইয়ের সুযোগ থাকছিল না।বলা হয়েছে যে, প্রতিটি খাম মোমের সিল করা আছে। কিন্তু যারা খামগুলি খুলেছেন, তাদের মোমের সিলের বাঁধায় পড়তে হয়নি। পুরো লটারি প্রক্রিয়া চলাকালীন আইএফএর সচিব মঞ্চে উপস্থিত থেকে গেলেন। কেন একজন নিরপেক্ষ ক্লাব প্রতিনিধিকে লটারি প্রক্রিয়ার কাছাকাছি রাখা গেলনা?এমন একাধিক প্রশ্ন বিভিন্ন ক্লাব মহল থেকে উঠছে। প্রতিটি ক্লাবের স্পনসর চায় তাদের দল নিদেনপক্ষে ইষ্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের মধ্যে একটা দলের মুখোমুখি হোক। কিন্তু ইষ্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান পরপর দু’বছর একই গ্রুপে রইলো। ফলে গ্রুপ বিন্যাসের খেলায় একাধিক ক্লাব ইষ্টবেঙ্গল কিংবা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। আইএফএ সচিবের ক্লাব পরপর দু’বছর এই সুযোগ পাওয়াতে কেউ কেউ বিষয়টা সন্দেহের চোখে দেখছেন।
ক্লাবগুলোকে নিয়ে আইএফএর অস্তিত্ব। কিন্তু ক্লাবগুলোকে উপেক্ষা করে আইএফএ তার মার্কেটিং পার্টনার শ্রাচী গ্রুপকে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তাদের নির্দেশেই স্বচ্ছতার নিয়মনীতি উপেক্ষা করে লটারি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। শ্রাচী গ্রুপ আইএফএকে গত মরশুমের চুক্তি মত টাকা না দিয়েও এবার কলকাতা লিগের স্বত্ব উপভোগ করছেন বলে উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে।মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গেও শ্রাচী গ্রুপের মতবিরোধে ক্লাবের ক্ষতির কথাই উল্লেখ হয়েছে।
গত দুই মরশুম ধরে কলকাতা লিগে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ প্রশাসনের উপর দায় চাপিয়ে আইএফএ নিশ্চুপ হয়ে আছে। আইএফএ সরকারের সহযোগিতা নিয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা প্রিমিয়র লিগের গ্রুপ বিন্যাসে লটারির অস্বচ্ছতার প্রসঙ্গ উঠে এল। কলকাতা লিগের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে এই লটারি পদ্ধতির যোগসূত্র তবে কি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা?
এতবড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আইএফএ’র কোন স্তর থেকে নেওয়া হয়েছে,তা নিয়েও জলঘোলা চলছে। তবে কি আইএফএ’র একাংশ সব কিছু জেনেও নীরব থাকছে? কলকাতা লিগের গ্রুপ বিন্যাসের লটারি পদ্ধতি আইএফএর সাংগঠনিক ফাঁটলই আবার প্রকাশ্যে নিয়ে আসলো। একঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলারদের উপস্থিত দিয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশলও কিন্তু ধরা পড়ে যাচ্ছে।