নির্বাচনে পুলিশের বড় কর্তাদের নিয়ন্ত্রণ জানাবার আর্জি জানালেন শুভেন্দু

Written by SNS April 9, 2024 12:47 pm

নিজস্ব প্রতিনিধি— লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল নয় পুলিশ প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির কাছে? বাংলার ভোটে পুলিশই প্রধান প্রতিপক্ষ, নির্বাচন কমিশনের পুলিশ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সোমবার এমনই দাবি করলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে আর্জি জানালেন বিরোধী দলনেতা৷ লোকসভা ভোটে বাংলার জন্য অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অনিলকুমার শর্মাকে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করেছে কমিশন৷ বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অলোক সিনহাকে৷

সোমবার বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল৷ সেখানেই বাংলার নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তাঁরা৷ সাক্ষাতের পর বেরিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘বাংলা একমাত্র রাজ্য যেখানে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর হাজার হাজার হিংসার ঘটনা ঘটেছে৷ দেশের যে পনেরোটি রাজ্যে বিজেপি শাসক সেখানে ভোটের আগে বা পরে কোনো সন্ত্রাসের ছবি নেই৷ এই রাজ্যে প্রার্থী খুন হয়েছে, ভোট দিতে পারেনি বহু গ্রামের মানুষ৷ তাই একুশের ভোট পরবর্তী হিংসা আর তেইশের পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা জানিয়েছি৷’ কমিশনের কাছে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোটের আর্জি জানিয়েছে বিজেপি৷ শুভেন্দুর কথায়, ‘পুলিশই প্রধান প্রতিপক্ষ৷ কলকাতা পুলিশকে যাতে সঠিক দায়িত্ব পালনে দেখা হয় সেবিষয়েও জানানো হয়েছে৷’ শুধু ভোট কিংবা ভোট পরবর্তী হিংসা রোধই নয়, বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষককে সন্দেশখালির ঘটনার কথা জানিয়েছেন শুভেন্দুরা৷ রবিবারই ভূপতিনগরে এনআইএ-র হামলার ঘটনায় কমিশনে নালিশ জানিয়েছে বিজেপি৷ এদিকে সোমবারই তৃণমূল কংগ্রেসও এনআইএ-র ভূমিকা নিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে৷ যা নিয়ে শুভেন্দুর কটাক্ষের সুর, ‘বেল পাকলে কাকের কী! সংবাদমাধ্যমের সামনে টিকে থাকার জন্য ওই তো আছে কয়েকজন৷’

পুলিশের বিরুদ্ধে এনআইএ-র মামলা করারও দাবি জানিয়েছে বিজেপি৷ লোকসভা ভোটের আগে একাধিক ইসু্যতে সরগরম রাজ্য রাজনীতি৷ লড়াইটা মূলত তৃণমূল বনাম কংগ্রেস৷ সেই লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বনাম রাজ্য পুলিশ৷ দুই দল দুই নিরাপত্তা বাহিনীকে অস্ত্র করছে৷ তৃণমূল যেমন কেন্দ্রীয় বাহিনী থেকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করছে তেমনই রাজ্য পুলিশ নিয়ে অনেক অভিযোগ বিজেপির৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মনে করেন, বাংলার ভোটে তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ রাজ্য পুলিশ৷ তাই সোমবার তিনি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে আর্জি জানালেন নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত রাজ্যের পুলিশ পর্যবেক্ষকের কাছে৷ সোমবার দলের আরও দুই নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এবং শিশির বাজোরিয়াকে নিয়ে কলকাতার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অফিসার্স ইন্সটিটিউটে যান শুভেন্দু৷ সেখানে রাজ্যের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক অনিল শর্মার সঙ্গে দেখা করেন৷ সেখানেই শুভেন্দু উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তাদের উপরে নিয়ন্ত্রণের আর্জি জানান৷

সাক্ষাতের পরে শুভেন্দু বলেন, ‘২০২১ সালের ভোট পরবর্তী হিংসায় সিবিআই ৬১টি এফআইআর করেছে৷ ১৫টি রাজ্যে ভোট হয়েছে, বাংলার মতো কোথাও হিংসা হয়নি৷ পঞ্চায়েত ভোটে আদালতের নির্দেশে ৮২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল৷ কিন্ত্ত বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হয়েছে৷ ৫৫ জন খুন হয়েছেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে৷ বহু পঞ্চায়েতে ভোটই দিতে পারেননি ভোটাররা৷’ এর পরে শাসকদলকে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, ‘তৃণমূল দুর্নীতি ছাড়া কিছু করেনি৷ তাই আমরা চাই প্রশাসন অবাধ শান্তিপূর্ণ ভোটের ব্যবস্থা করুক৷ বাংলার ভোটে পুলিশই প্রধান প্রতিপক্ষ৷’ কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্তাদের উপরে হামলা নিয়েও সরব হয়েছেন শুভেন্দু৷ তিনি বলেন, ‘এর আগে সন্দেশখালিতে ইডি আক্রান্ত হয়েছে, আদালত হস্তক্ষেপ করেছে৷ এনআইএ-র উপর হামলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ করুক৷’

একই সঙ্গে তিনি চান নির্বাচন পর্ব মেটার পরেও বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক৷ তিনি বলেন, ‘ভোট শেষের পরের তিন মাস রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার আর্জি জানানো হয়েছে৷’ তিনি দাবি করেন, ১৩ হাজার বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে রাজ্য পুলিশ৷ সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘পুলিশ সংযত না হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব৷’