• facebook
  • twitter
Friday, 13 December, 2024

সায়ন, মীনাক্ষী আপনারা প্রায়শ্চিত্ব করে আসরে নেমেছেন তো?

নিশীথ সিংহ রায় এ লেখার কারণ একটি দেয়াল লিখন : পাল্টাও ঘৃণা, সন্ত্রাস, হিংসার রাজনীতি, আনো খাদ্য, শিক্ষা, কাজ ও সম্প্রীতি’ সিপিএমের লেখা ওপরের যে দেয়াল লেখনটি দেখলাম সেটা কি সত্যিই সিপিএম মানে? না কি কোনোদিন মেনেছে? নাকি আদৌও কোনোদিন মানার ইচ্ছা ছিল বা মানার চেষ্টা করেছে? এসব প্রশ্ন মনে খটকা লাগল৷ তাই দেখতে বসলাম

নিশীথ সিংহ রায়

এ লেখার কারণ একটি দেয়াল লিখন :

পাল্টাও ঘৃণা, সন্ত্রাস, হিংসার রাজনীতি,
আনো খাদ্য, শিক্ষা, কাজ ও সম্প্রীতি’

সিপিএমের লেখা ওপরের যে দেয়াল লেখনটি দেখলাম সেটা কি সত্যিই সিপিএম মানে? না কি কোনোদিন মেনেছে? নাকি আদৌও কোনোদিন মানার ইচ্ছা ছিল বা মানার চেষ্টা করেছে? এসব প্রশ্ন মনে খটকা লাগল৷ তাই দেখতে বসলাম তাদের জীবনকুন্ডী৷ যে বছর বামফ্রন্ট (সিপিএম) ক্ষমতায় আসে সে বছরই আমি মাধ্যমিক পাশ করি৷ তাই তাদের উত্থান একেবারে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি প্রত্যক্ষ ভাবে৷ আমরা বাংলায় একটা কথা বলি যে, ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়’৷ কথাটা সর্বদা সত্যি না হলেও অনেকাংশে সত্যি৷ আবার যদি সৎভাবে চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা হবেই হবে৷ এটা আমার কথা নয়৷ সর্ব ধর্মগ্রন্থে আছে বা মহাপুরুষরাও বলে গেছেন৷ তা সিপিএম কি কোনোদিন সৎভাবে ঘৃণা, সন্ত্রাস বা হিংসার রাজনীতির থেকে ঊর্ধ্বে উঠে শাসন করার কথা ভেবেছিল?

তাদের জন্মলগ্নের কুষ্টি একটু নাড়াচাড়া করে দেখি৷ শুরু করেছে ‘ঘৃণা’ শব্দটা দিয়ে৷ ঘৃণা শব্দটাকে সিপিএম বঙ্গে এমনভাবে চালু করেছিল যে এটা একটা শিল্প পর্যায়ে চলে গিয়েছিল৷ পারিবারিক বিবাদ হয়েছে কোনো একপক্ষ হয়তো দলের শরণাপন্ন হয়েছে৷ তা দল কি করলো, না তার মনে বিষ ঢুকিয়ে দিলো৷ কি হলো না ভাইয়ে-ভাইয়ে মুখ দেখাদেখি বন্ধ৷ একে অপরের প্রতি তখন এত ঘৃণা যে শুধু মুখ দেখাদেখি বন্ধ তাই নয় একে অপরের মৃতু্য কামনা না করে জলপান পর্যন্ত করে না৷ আর যেটা সবচেয়ে খারাপ করেছিল তা হচ্ছে মানি বা সম্মানীয় লোকের প্রতি সমাজের একটা বিরাট অংশকে খেপিয়ে তোলা৷ তাদের যেটা বোঝানো হতো তা হচ্ছে ওরা শোষক শ্রেণী, ওরা বুর্জোয়া শ্রেণীর মানুষ তাই ওরা সমাজের শত্রু৷ ক্ষমতায় আসার আগে থেকে এর শুরু আর ১৯৭৭ সাল থেকে তা একবিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত বঙ্গে বিশেষত গ্রামেগঞ্জ যারা ভুক্তভোগী সবাই জানেন৷ আলোচনায় সব উঠে আসবে৷

‘সন্ত্রাস’৷ সন্ত্রাস, এই শব্দটা সিপিএমের অভিধানের প্রথম শব্দ৷ এটা আমি বলছি না৷ সিপিএম জন্মের থেকে যারা ভালভাবে ইতিহাস জানেন তারা বলুন এ কথাটা কি একটুও মিথ্যা? হ্যাঁ একটা তফাৎ আছে অভিধানে আমরা যেভাবে সন্ত্রাসের মানে দেখি এটা তার থেকে একটু আলাদা৷ এখানে যার প্রতি সন্ত্রাস হয় সে ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না সন্ত্রাসের ধরণ কিন্ত তার ফল সবাই দেখতে পায়৷ সে যদি বেঁচে থাকে তাহলে সমাজ মনে রাখবে সিপিএমের বিরুদ্ধাচারণের ফল কি হতে পারে৷ আর যদি মরে যায় তখনকার মতো পার্টির আধিপত্য একেবারে কায়েম৷

‘হিংসা’৷ যাদের উত্থানই হিংসা দিয়ে তারা কি করে হিংসা ব্যতিরেকে বাঁচতে পারে? যেমন দু’ভাই যতক্ষণ একসঙ্গে থাকে ততক্ষণ তারা একে অন্যের জন্য প্রাণ দিতে পারে কিন্ত যখনই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয় তখন তাদের থেকে আর কেউ বড় শত্রু হতে পারে না৷ এরাও তাই৷ যতক্ষণ তুমি এদের সাথে যুক্ত এরা সব করবে তোমার জন্য আর যক্ষণই মনোমালিন্য এদের থেকে বড় শত্রু আর হতে পারে না৷ সিপিএমের আমলে এই হিংসার প্রতিফলন সমাজের সর্বস্তরে দেখা গেছে৷

দেখি গত পঁচাত্তর বছরের খাদ্য, শিক্ষা, কাজ ও সম্প্রীতির সব নমুনা৷ খাদ্যে বিশেষত ধান, আলুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি রাজ্য কি করে ঘাটতির রাজ্যে পরিণত হলো৷ উনবিংশ শতাব্দীর ছয়ের দশকের শেষ বা সাতের দশকের প্রথম দিকের কথা সারা বিশ্বে চাষের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এলো৷ চিরাচরিত প্রথা ছেডে় আধুনিক যন্ত্রপাতি বা বীজ এসেছে তার ছিটেফোঁটা তখন ভারতেও এসেছে৷ সারা ভারত যথাসম্ভব সেই সুযোগ নিল এমনকি আপনাদের আর এক খাস তালুক কেরালাও সেই সুযোগ নিল কিন্ত পেলো না পশ্চিমবঙ্গ সাথে সাথে আর এক বাঙালি অধু্যষিত রাজ্য যেটাও ছিল আপনাদের খাস তালুক সেই ত্রিপুরা৷ এই দুই রাজ্যের ক্ষেত্রে আপনারা রে রে করে উঠলেন৷ পশ্চিমবঙ্গ আপনাদের ধাত্রীভূমি আর ত্রিপুরা আপনাদের গোধ নেওয়া রাজ্য৷ তাই আপনারা যা খুশি করতে পারেন এই দুই রাজ্যে৷ আপনাদের অকাট্য যুক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি এলে অনেক চাষী কাজ হারাবে এই অজুহাতে এই দুই রাজ্যে কোনো কিছুই ঢুকতে দিলেন না৷ মূলত ট্রাক্টরের ক্ষেত্রে৷ আন্দোলনের মূল স্লোগান কি? না ট্রাক্টর এলে শুধু মানুষ কাজ হারাবে তা নয় লাঙল বন্ধ হয়ে যাবে৷ তাহলে আর গরুর প্রয়োজন পড়বে না৷ গরুর গোবর থেকে ঘুঁটে হয় তা যেমন রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় তেমনই এই গোবর জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহূত হয়৷ অকাট্য যুক্তি খন্ডাবে কে? ঢুকতে দিলেন না ট্রাক্টর বা আধুনিক প্রযুক্তি৷ সারা বিশ্বের সাথে সাথে ভারতের অন্যান্য রাজ্যও যেমন হরিয়ানা, পাঞ্জাব এই সুযোগ নিয়ে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলল৷ এমনকি কেরালাও সেই সুযোগ নিল, এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা৷ ফলে কি হলো যে পশ্চিমবঙ্গ এককালে ধান, আলুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল তারা ঘাটতি রাজ্যে পরিণত হলো৷ এরপর সবচেয়ে যে মহান কাজটা করলেন তা হলো যে সমস্ত পতিত জমি তখনও অব্যবহূত ছিল তা চাষযোগ্য না করে যেখানে যত ভাগচাষী ছিল তাদের নামে বর্গা করে দিলেন৷ তাতে প্রথম কি হল এত বছর ধরে জমির মালিক এবং যিনি জমি ভাগ চাষ করতেন তাদের মধ্যে যে সুসম্পর্ক ছিল তা আদায়-কাঁচকলায় পরিণত হল৷ দেশ স্বাধীনতার পর থেকে গ্রাম্য পরিবেশে মানুষের মধ্যে যে একটা সৌহার্দ্যের সম্পর্ক ছিল তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল৷ গ্রামের আবহাওয়ায় কায়দা করে একটা কথা ঢুকিয়ে দিলেন তা হল ‘বুর্জোয়া শ্রেণী’৷ ১৯৭৭-৭৮ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামেগঞ্জের মানুষ সরকারীভাবে দু’টো শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে গেল যারা সিপিএম বা বামপন্থার দিকে তারা সর্বহারা শ্রেণীর আর যারা তার বিরুদ্ধাচারণ করবে তারা ধনী বা বুর্জোয়াশ্রেণী৷ গ্রামে বাডি় এবং চাষীর সন্তান হওয়ার সুবাদে তখন নিজের চোখে দেখা ‘ব্রেন ওয়াশ’ কাকে বলে৷ একই পরিবারের দুই সন্তান একজন বুর্জোয়া বা শোষক শ্রেণীর আর একজন বঞ্চিত বা শোষিত শ্রেণীর৷ এ ব্যাপারে কতকগুলি মর্মান্তিক ঘটনা জীবনে ভুলব না৷ হ্যাঁ, সিপিএমের এই পরিবারের হাঁডি়তে ভাঙন ধরানো সরকারিভাবে হয়তো শুরু করেছিল সাতের দশকের শেষ দিকে যখন তারা বঙ্গে পাকাপাকিভাবে ক্ষমতায় এলো কিন্ত তারা এর সূত্রপাত করেছিল ছয়ের দশকের মধ্যভাগ থেকে৷ বিধান রায়ের মৃতু্যর পর থেকেই বঙ্গের সিপিএম জাতীয়তাবোধহীন, কর্মবিমুখ, অযোগ্য, নিম্ন বা মধ্যমেধার কিন্ত্ত ধূর্ত ও দলসর্বস্ব ক্যাডার বাহিনী তৈরি করতে লেগে যায়৷ হ্যাঁ, একটা কথা সিপিএমের ওপর মহলের লোকেরা উচ্চমেধা সম্পন্ন হলেও তারাও কিন্ত্ত ধূর্ত ও জাতীয়তাবোধহীন৷ এর প্রমাণ? ১৯৪৮ সাল থেকে বামপন্থীদের কাজ দেখলেই বোঝা যাবে৷ ১৯৪৮ এর দাঙ্গার সময় বামপন্থীদের ভাল সংগঠন থাকলেও বাংলার ধর্মীয় সংঘাতের সময় এর সমাধানে না গিয়ে বরঞ্চ পরোক্ষভাবে কোনও একপক্ষকে মদত দিয়েছে৷ আর একান্ন সালের পর থেকে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গঠনের জন্য তলেতলে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে৷ সেই ক্যাডার বাহিনী আর কিছু পারুক না পারুক উচ্চ মহলের তাঁবেদারি বা তল্পিবাহক হতে দারুণ ওস্তাদ৷ আগেই বলেছি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামেগঞ্জে মানুষে মানুষে হানাহানি লাগালেন সঙ্গে চাষ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ জোর করে আটকালেন৷ গ্রামে যেমন আধুনিকীকরণের ছিটেফোঁটাও ঢুকলো না তেমনই গ্রামের সেই সৌহার্দ্যের পরিবেশ নষ্ট হয়ে সেখানে শুধু দমন আর দূষণ৷

এরপর আসি শিক্ষার জগতে৷ একটা জাতির মেরুদন্ড তৈরির মূল হাতিয়ার শিক্ষা৷ সেই শিক্ষাকে নিয়ে প্রায় চার দশক জুডে় ছিনিমিনি খেলেছে৷ কার্ল মার্ক্সের থিওরি কি বলেছে জানি না কিন্ত্ত সিপিএম জানতো খাদ্য, কাজ বা সম্প্রীতি মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে বাঁচার স্বার্থে ঠিক করে ফেলবেই ফেলবে কিন্ত্ত একবার যদি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া যায় তাহলে তার প্রভাব সমাজের ওপর সুদূরপ্রসারী ভাবে ফেলবে৷ সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব৷ তার ফল আজ আমরা চাক্ষুষ করছি৷ বামফ্রন্ট সরকারের শিক্ষা দপ্তরে কখনও চার-পাঁচ জন মন্ত্রী তো কখনও একজন৷ অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ বা সব জায়গায় কোটায় ভর্তি বা শিক্ষা ব্যবস্থায় রাজনীতিকরণ ছেডে় দিই তারা চৌত্রিশ বছরে শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা সুসংহত রূপ দিতে পারেনি৷ যেটা খুব জরুরী ছিল৷ এই একটি ব্যাপারে তৃণমূল সরকার কয়েক যোজন এগিয়ে৷ তারা কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিলেবাস তৈরি করেছে৷ এর চেয়েও বড় ভুল ভারতের মতো একটা বহু ভাষাভাষির দেশে প্রাথমিক স্থর থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়া৷ আর পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি ডাক্তারী বা প্রযুক্তি কলেজ খুলতে না দেওয়া৷ আর এই সুযোগে দক্ষিণ ভারত ত্রিশ চল্লিশ বছরে এখানকারের রুগী বা পড়ুয়াদের থেকে যা আয় করেছে তা কল্পনাতীত৷ অতীত কেনো এখনও দেখুন কিভাবে মানুষ ওখানে যাচ্ছে৷

‘কাজ’৷ মানে মানুষের অন্ন সংস্থানের জন্য কাজের সুযোগ করে দেওয়া৷ সরকারি জায়গায় তো নিজেদের তাঁবেদার বা দলের কর্মী৷ আর বেসরকারি ক্ষেত্রে? নতুন কি কোম্পানি চালু বা কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছে জানি না কিন্ত কলকারখানা তোলার ব্যাপারে? এ ব্যাপারে মনে হয় আপনারা বিশ্বরেকর্ড করেছেন! আমার জ্ঞানের মধ্যেই ২০০ এর মতন কলকারখানা পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ হয়েছে ও সময়৷ এরপর যে আরও কত আছে তার ইয়ত্তা নেই৷ আজকে যে পশ্চিমবঙ্গের ষাট লক্ষের ওপর পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে বা দেশে আছে তা কিন্ত একদিনে হয়নি৷ তাতে সবচেয়ে বেশি আবদান আপনাদের৷

‘সম্প্রীতি’৷ সেটা তো আগেই বলেছি৷ আপনারা তো বিভাজনের মাধ্যমে রাজত্ব কায়েম রাখতে চেয়েছিলেন৷ তা আপনাদের অনুমতি ব্যতিরেকে সেখানে তো সম্প্রীতির ‘স’ পর্যন্ত ঢোকার সাহস নেই৷
তাই দেয়াল লিখন দেখে মনে মনে শুধু হেসে গেছি৷ এ সেই ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ করার মতো ব্যাপার৷
ওটা তো ছিল সিপিএমের দেওয়াল লিখন৷ এবার সিপিএমের জন্য বাঙালির কপাল লিখন দেখি৷ এরা কি না বলেছে বাঙালি মনীষীদের সম্বন্ধে৷ রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে পাগল৷ স্বামী বিবেকানন্দকে ভবঘুরে, বেকার বা বেলুড়মঠ ভেঙে কফি হাউস তৈরি করবো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বুর্জোয়াদের কবি, সুভাষচন্দ্র বোসকে তোজোর কুকুর বা হালআমলে ঊষা উত্থুপকে অপসংস্কৃতির ধারক-বাহক বলা এরকম অনেক অনেক আছে৷ প্রফুল্ল সেনকে আপনারা যা করেছিলেন বাংলার মানুষ এখনও তো ভোলেনি৷

আর একটা কথা ভারতের বিশেষত বাংলার কমিউনিস্ট মেনিফেষ্টোতে যেন বলা আছে, যে কোনো ধর্মের কমরেডরা তাদের ধর্মের আচারকানুন মানতে পারবে একমাত্র হিন্দু কমরেডরাই তাদের ধর্মকে অনুসরণ করতে পারবে না৷ তাহলে সেখানে আবার প্রায়ঃশ্চিত্তের কথা উঠছে কেন? আবার এটাও ঠিক আপনারা তো এক্ষুনি বলবেন আমাদের তত্ত্ব তো বিজ্ঞানসম্মত সেখানে আবার প্রায়শ্চিত্তের মত শব্দ কোত্থেকে আসে? ওসব তো হিন্দুধর্মের কুসংস্কার৷ এসব আর কি! আপনারা যে ধর্ম মানেন না তার প্রমাণ তো অনেকবার দিয়েছেন৷ ভরা রাজনৈতিক মঞ্চে শোভা সেন, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো বিদগ্ধ মানুষেরা হিন্দুধর্মের নিষিদ্ধ জিনিস খেয়ে দেখিয়েছেন আপনারা কত লিবারেল৷ পাশের অহিন্দু কমরেডের কিন্ত এই দায় নেই৷ যদিও খাওয়াদাওয়া বা জীবনের যেকোনো আচার-আচরণে আমি ব্যক্তিগত মতকেই প্রাধান্য দিই৷ এখানে এটা বলার কারণ ভরা মঞ্চে আপনি কাউকে তার স্বধর্মের পরিপন্থী কাজ করার জন্য প্ররোচিত করতে পারেন না৷ এক্ষেত্রে আপনারা একা নন অনেকেই এখন জীবনে বিশেষত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ওঠার জন্য অন্য দলের নেতা নেত্রীরাও হিন্দুধর্মকে বেছে নিয়েছেন৷ যেমন বছর তিনেক আগে ভোটের সময় অন্য একটি দলের এক নেত্রী একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে সন্ত্তষ্ট করার জন্য হিন্দুদের আরাধ্য দেবতা মহাদেবকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন আজ তিনিই পাঁকে পডে় সেই মহাদেবের (শিবের) শরণাপন্ন৷ তাই বলছি এখন জীবনে ওঠার ক্ষেত্রে বিশেষত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মকে হাতিয়ার করতেই হবে৷ মানে, ধর্ম বেচে জীবনে গ্রাসোচ্ছাদন করা৷ যে ধর্ম জীবনের ধারক-বাহক তাকেই বিক্রি! যাক্, আপনারা তো ধর্ম মানেন না৷ সেখানে এত কথা বলে লাভ কি? বরঞ্চ ধর্ম মানেন না বলেই অসৎ কাজ করতে পিছপা হন না৷ বরঞ্চ দেশ, জাতির উন্নতি বা দেশাত্মবোধকের কথা বলি৷ এ ব্যাপারে আপনাদের ধারেকাছে ভারতের কোনো দল নেই৷ আর ভবিষ্যতেও হবে না৷ সরকারী ট্রামের ভাড়া বেডে়ছে, দাও সব পুডি়য়ে৷ সারা পৃথিবীর উন্নতি হচ্ছে যখনই সেই উন্নতির ঢেউ ভারতে আসছে তা সে ট্রাক্টর, কম্পিউটার যাই হোক না কেনো তা দেখে আপনারা অমনি রে রে করে উঠলেন! আর আমাদের কি সৌভাগ্য এই সময়ে যে দু’জন মুখ্যমন্ত্রী পেলাম তাদের একজন নিজেকে আভিজাত্যের মোড়ায় মুডে় রেখে কোনো কাজই করলেন না আর একজন হলেন একেবারে ব্যক্তিত্বহীন৷ এরকম মানুষের যা হয় তাই হলো কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও কাজ করার জন্য যে গুণগুলি দরকার তার ছিটেফোঁটাও না থাকায় কোনো কাজই একক ক্ষমতায় করতে পারলেন না৷ আজকাল অনেকে বলেন উনি খুব শিক্ষিত, রুচিশীল, সৎ মানুষ৷ অবশ্যই এ গুণগুলো ওনার ছিল বা আজও আছে৷ কিন্ত ওই চোরের দলে আমি থাকবো না বলেও ঢুকে গেলেন! ধরলাম উনি সৎ মানুষ কিন্ত তাতে রাজ্যের কি উপকার? রাজ্য চালাতে গেলে অন্য যে গুণগুলির দরকার তার বিন্দুমাত্র তো ওনার মধ্যে ছিল না৷ আর যাঁদের মধ্যে এ গুণগুলি ছিল সিপিএম তাঁদের ক্ষমতার ধারে কাছে আসতে দেয়নি৷ তাঁর মধ্যে একজন যেমন সুভাষ চক্রবর্তী৷ তাঁর মধ্যে এসমস্ত গুণাবলী যথেষ্ট ছিল তাই সুভাষ চক্রবর্তীর মতো মানুষকে সিপিএম জেলা সদস্য পর্যন্ত করেনি আর বুদ্ধুবাবু, নিরুপম সেন বা সূর্যকান্ত মিশ্রর মতো পুঁথিসর্বস্ব কিন্ত্ত নিষ্কর্মা মানুষদের প্রথম থেকেই পলিটবু্যরোর সদস্য করে নেয় এবং ক্ষমতার আধারে বসিয়ে রাখে৷ এরা সবাই ব্যক্তিত্বহীন, নিষ্কর্মা কিন্ত্ত পদলোভী৷ একটা রাজ্যকে একেবারে ছারখার করে দেওয়ার জন্য একরম লোক একেবারে আদর্শ৷ যদি বলেন বিদ্যা? প্রথাগত বিদ্যাই যদি সব হতো তাহলে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বিল গেটস্, আব্রাহাম লিঙ্কনদের আমরা পেতাম না৷ বিদ্যার সাথে সুবুদ্ধি, সৎচেষ্টা, বিবেকবাণ, সৎপথ ও দেশের জন্য জাতীয়তাবোধ দরকার তবেই ভাল কিছু করা যায়৷ যেটা সিপিএমের সর্ব্বোচ্চ মহলে কোনোদিনই ছিল না৷ কারণ, ওরা কোনোদিনই ভারতকে স্বদেশ মানতে পারেনি৷ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বুদ্ধদেববাবু ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পদ্মবিভূষণ উপাধি প্রত্যাখ্যান করতে পারেন কিন্ত্ত চীনের থেকে কোনো উপাধি নিতে দ্বিধা করেন না৷ সেটা আবার একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে বলতে দ্বিধা করেন না সিপিএম দলের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য৷

আজকের দুই বাংলা অধু্যষিত রাজ্যে আমরা যে দেখছি সেটা কিন্ত একদিনে হয়নি৷ এটা আমার ব্যক্তিগত মত নয় ১৯৬৩ সালের আগের বাংলা আর আজকের বাংলার মধ্যে তুলনা করলেই বোঝা যাবে৷ আজকের বাংলার যা অবস্থা তার শুরু কিন্ত এই কমিউনিস্ট দলের জন্যই৷ এসব কথা যখন মনে হয় তখন মনে হয় সিপিএমের কোনো দোষ নেই দোষ হচ্ছে আমাদের মানে বাঙালি জাতির৷ যে দুই রাজ্য বাঙালি অধু্যষিত সেই দুই রাজ্যই অধঃপতনের চরম সীমায় পৌঁছে গেলো সিপিএমের জন্য৷ তাই বলছি, সিপিএমের বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় তুর্কি নেতারা অতীতের এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তবে আসরে নেমেছেন তো? বুদ্ধি নিতে হলে সৎ, বিবেকবান বা জাতীয়তাবোধ থাকা মানুষের থেকে নিন যেমন কৃষ্ণ আর এসমস্ত দুর্যোধন মার্কা মানুষের থেকে নেবেন না তাতে সাময়িক জয়ী হলেও শেষপর্যন্ত কুরুবংশের মতো আপনারাও সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবেন৷