আপাতত চাকরি বহাল যোগ্য-অযোগ্য সবার

Written by SNS May 8, 2024 11:38 am

নিজস্ব প্রতিনিধি– মঙ্গলেও মিটলো না এসএসসির নিয়োগ মামলার জট৷ বেশ কয়েকটি শুনানি হয়েছে৷ এই মামলার যা গতিপ্রকৃতি তাতে আরও বেশ কয়েকটি শুনানি চলবে৷ কেননা ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার রায়দান করার আগে সব পক্ষের দাবি-অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ এদিনকার শুনানিতে ২৫,৭৫৩ জন চাকরিহারা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর ভাগ্য নিয়ে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি৷ সুপ্রিম কোর্টে কঠিন প্রশ্নের মুখে এসএসসি৷ পাশাপাশি, একের পর এক প্রশ্নের মুখে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগে দুর্নীতি কার্যত মেনে নিল এসএসসি-ও৷ তবে সেইসঙ্গে এসএসসি এও দাবি করে যে, “কিছু নিয়োগ অবৈধ হলেও ১৯ হাজার চাকরি বৈধ৷” এদিন হাইকোর্টের নির্দেশে ২৫ হাজার ৭৫৩ চাকরি বাতিলের মামলায় শুনানি সুপ্রিম কোর্টে৷ এদিন শুনানি পর্বে প্রধান বিচারপতি বলেন, ”পুরো বিষয়টা আমরা বিবেচনা করে দেখব৷” বিচারপতি পারদিওয়ালা জানান, ”কারা যোগ্য এবং কারা অযোগ্য, সেটা বাছাই করা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ”৷ এদিন মূল মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতে বলেন, ”ওএমআর শিট কোনওভাবেই মেলানো সম্ভব নয়৷ কারণ, প্রত্যেকের দুটো করে ওএমআর শিট হবে৷ একটি এসএসসির কাছ থেকে অন্যটি নাইসার কাছ পাওয়া যাবে৷

এবার কোন ওএমআরে কারচুপি হয়েছে, সেটা কীভাবে বোঝা সম্ভব? এর চেয়ে ভালো নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা৷” এই বক্তব্য শোনার পরই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, ”জুলাই মাসে ফের মামলা শুনব৷ এখন শুধু সব পক্ষকে নোটিস দেওয়া হচ্ছে৷” উল্লেখ্য, স্কুলের শিক্ষক ও অশিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ্বতা বজায় রাখতে ১৯৯৮ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন গঠিত হয়৷ রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার সময়েও ডিজিটালাইজড রেকর্ড তিন বছরের জন্য রাখার নিয়ম থাকলেও, ২০১৬-র নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর সময়েই তা কমিয়ে এক বছর করে দেওয়া হয়৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, সেখানেই জালিয়াতির শুরু৷ গত ২৯ এপ্রিল আংশিক শুনানির পরে এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া এসএসসির ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ নিয়ে শুনানি চালায়৷ এদিন সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীকে বলেন, ‘সরকারি চাকরি এতটাই দুষ্প্রাপ্য, সেখানে জনগণের বিশ্বাস চলে গেলে অবশিষ্ট কিছু থাকে না’৷ সেই সময় তিনি এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে পদ্ধতিগত প্রতারণা বলে মন্তব্য করেন৷ রাজ্য সরকারকে ডিজিটালাইজড ডেটা রাখতেই হবে৷

২০১৬-র এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একবছরের মধ্যে ওএমআর শিট নষ্ট করে ফেলা হয়৷ যার স্ক্যান কপিও রাখেনি এসএসসি৷ পরে অবশ্য মূল্যায়নকারী সংস্থা নাইসার এক আধিকারিকের বাডি়তে তল্লাশি চালিয়ে হার্ড ডিস্কে সেই তথ্য পাওয়া যায়৷ এদিন শুনানির সময় সর্বোচ্চ আদালত বলে, এই মামলায় ডিজিটালাইজড ডেটা দেখানোর মতো কিছু নেই রাজ্য সরকারের কাছে৷ কিন্ত্ত সরকার ডিজিটালাইজড আকারে নথি সংরক্ষণ করতে বাধ্য৷ রাজ্য সরকার জানেও না তাদের পরিষেবা প্রদানকারী (এসএসসি) অন্য একটি সংস্থাকে (নাইসা) নিয়োগ করেছে৷ এখানে সরকারকে অবশ্যই নজরদারি রাখতে হবে বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট৷ উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানায়, ‘নাইসাকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওএমআর শিটের বরাত দেওয়া এবং মিরর ইমেজ ছাড়াই ওএমআর শিট নষ্ট করা, জালিয়াতি ছাড়া কিছুই নয়’৷ গত ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ নজিরবিহীন রায়ে বাতিল হয়ে যায় ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি৷ যার জেরে ভোটের মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড় ধাক্কা খায় রাজ্য সরকার৷