সিএএ জুমলা : অভিষেক

নিজস্ব প্রতিনিধি— রবিবাসরীয় বিকেলে রানাঘাটে পা রাখেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ রানাঘাট তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর সমর্থনে আয়োজিত জনসভা থেকে এবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন অভিষেক৷ সিএএ নিয়ে কড়া বার্তা দেন তিনি৷ “সিএএ তে আবেদন করলে সাত দিনের মধ্যে নাগরিকত্ব দিক এবং যদি একটি বিজ্ঞপ্তি করে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দফতর বলে যে আমরা সিএএ-এর পরে এনআরসি করবো না তাহলে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় সিএএ সমর্থন করবে”, দাবি তৃণমূল সেনাপতির৷ অভিষেকের ভাষায় ‘সিএএ জুমলা’, এর পেছনে উপযুক্ত ব্যাখ্যাও দেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, “প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ এর আগে থেকে বলছেন সমস্ত মতুয়া, উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেবেন৷ সেই আইনের নিয়মাবলী তৈরী করতে পাঁচ বছর সময় লেগে গেলো! চল্লিশ পাতার একটি ফর্ম তৈরী হয়েছে৷ যেখানে আপনাকে ঘোষণা করতে হবে আপনি বাংলাদেশী, পাকিস্তানী৷ তারপর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্ট বন্ধ হবে, সরকারি পরিষেবা বন্ধ হবে৷ তারপর এনআরসি করে আপনাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে৷ এঁরা সিএএ করে প্রথমে যাচাই করে দেখবে কতজন বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে এসেছে৷ তারপর এনআরসি করে এদের বের করে দেবে৷ ” এ প্রসঙ্গেই অভিষেক বলেন, “বিজেপির মাথার চুল থেকে পায়ের নখ সবই দুনম্বরি, জুমলাবাজি৷ ”

“শান্তনু ঠাকুরও তো বাংলাদেশ থেকে এসেছেন৷ তাহলে সিএএ এর জন্য আবেদন করছেন না কেন? হেরে গেলে সবার আগে তিনি যাবেন ডিটেনশন ক্যাম্পে” এভাবেই শান্তনু ঠাকুরের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেন অভিষেক৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ঠাকুর বাড়িকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি করে রেখেছিলেন৷ আমায় সেখানে পুজো দিতে দেয়নি৷ আমি বলেছিলাম মানুষ এর জবাব দেবে, আর পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজের বুথে হেরেছে৷ আমাকে ঠাকুর বাড়িতে পুজো দিতে গেলে শান্তনু ঠাকুর, জগন্নাথ সরকারের এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যেতে হবে?” এরপর মতুয়াদের উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, “নবনির্বাচিত সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর নিজের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হরিচাঁদ এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম নেওয়ায় তাঁর শপথ গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ ”

এদিন রানাঘাট সাংসদ তথা বর্তমান রানাঘাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “বিজেপি বলেছিলো আচ্ছে দিন আসবে৷ আজকে জগন্নাথ সরকার নিজে এক জনজাতি তরুণকে হেনস্থা করেছেন, শারীরিক ভাবে আক্রমণ করেছেন৷ এর জবাব দেবেন না?” পাশাপাশি এদিন জগন্নাথ সরকারকে ‘বিষাক্তফনি’ বলেও কটাক্ষ করেন অভিষেক৷


জগন্নাথ সরকারকে কোনো বিপদে রানাঘাটের মানুষ পাশে পেয়েছিলেন কিনা তাও জানতে চান অভিষেক৷ প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় গত দশ বছরে তিনি ট্রেলার দেখিয়েছেন, সিনেমা আগামী পাঁচ বছরে দেখাবেন৷ এ প্রসঙ্গেই বর্তমান ভারতের মূল্যবৃদ্ধির প্রমান তুলে অভিষেক বলেন, এটিই প্রধানমন্ত্রীর ট্রেলার৷ “এরপরও সিনেমা দেখতে চান?” সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি৷ জিএসটি -এর প্রসঙ্গ কেন্দ্রকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “এই নদীয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাঁতিদের বাস৷ আজ কেন্দ্রের সরকার এই তাঁতের সুতোর ওপর জিএসটি বসিয়েছে৷ রান্নার জিরে তে জিএসটি ১৮% কিন্ত্ত হীরের ওপর জিএসটি শূন্য৷” সরকার বদলালে তাঁতের সুতোর ওপর জিএসটি আমরা শূণ্য করবো, জিএসটি লাগু হবে না, দাবি অভিষেকের৷ বিজ্ঞপ্তির কাগজ হাতে নিয়ে অভিষেক বলেন, তাঁত শ্রমিকদের সমবায়ের অধীনে নিয়ে আসা হবে, তাদের আর মহাজনদের থেকে লোন নিতে হবে না৷ লোন দেবে সরকার৷ পাশাপাশি এদিন আবাসের টাকা দেওয়ার বিষয়টিও সাধারণ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন অভিষেক৷

রানাঘাটের মাটিতে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে অভিষেক বলেন, “কোনো নেতা বলবেন না যাকে ইচ্ছে ভোট দিন৷ একমাত্র তৃণমূলের নেতারাই বলবেন৷ কারণ আমরা যেখানে হেরেছি সেখানেও পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছি৷ আগামী ১৩ তারিখ যাকে ইচ্ছে ভোট দেবেন শুধুমাত্র নিজের অধিকার এবং যারা বিগত পাঁচ বছর পাশে ছিল সেই কথা ভেবে দেবেন৷ অনেকেই বলেছিলো তৃণমূল নদীয়া জেলা পরিষদ পাবে না৷ যে সমীক্ষা যাই দেখাক, মানুষের সমীক্ষার থেকে বড়ো সমীক্ষা আর হয়না৷” বিজেপির এক নেত্রীর দাবি, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় আসলে লক্ষীর ভান্ডার বন্ধ করবে৷ সেই অডিও ক্লিপটি প্রমান হিসেবে দেখিয়ে অভিষেক বলেন, “বিজেপির ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে বলার মামলা করুক৷” বিজেপির ইস্তাহারে বলা হয়েছে ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’৷ এই প্রসঙ্গেও কটাক্ষের সুর চড়িয়ে অভিষেক বলেন, বিজেপি বলছে এবার পাঁচ বছরে দু, তিনবার নয় একবারই ভোট দিতে পারবেন৷ প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য, যারা মাছ খান তারা হিন্দুবিরোধী৷ সেই নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে অভিষেক জানতে চান, “এই সরকার ফের ক্ষমতায় থাকলে আপনাদের স্বাধীনতা থাকবে?” “বিজেপি ভোট চাইতে এসে টাকা বিলি করলে, নিয়ে নেবেন৷ পদ্ম ফুলের থেকে টাকা নিয়ে জোড়া ফুলে ভোট দেবেন যেই ভাষায় এঁরা বোঝে সেই ভাষায় জবাব দেবেন”, বার্তা অভিষেকের৷ এদিনের সভা থেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন সাধারণ মানুষের দিকে, “দিল্লির পোষা কুকুরদের বিসর্জন হবে তো?”
তীব্র দাবদাহকে উপেক্ষা করে রানাঘাটের সভায় মানুষের উপস্থিতি অভিষেকের আশা বাড়িয়েছে৷ রানাঘাটের সভা থেকে স্মৃতিচারণা যুবরাজের৷ ব্যাপক জনপ্লাবন দেখে অভিষেক বলেন, “নবজোয়ারের সময় রানাঘাট ঢুকতেই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো৷ সেই বৃষ্টিতে ভিজেও মানুষ আমাদের আশীর্বাদ দিয়েছিলেন৷” পাশাপাশি জনস্রোত প্রসঙ্গে অভিষেকের বার্তা, “আজ যে সংখ্যায় মানুষ সভায় এবং রাস্তায় রয়েছেন তারাই যদি তৃণমূলে ভোট দিয়ে দেন তাহলে বিজেপিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ বিজেপি প্রার্থী বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না৷” এদিনের সভায় অভিষেক এবং মুকুটমণি অধিকারীর হাত ধরে দলীয় পতাকা উড়িয়ে বিজেপির নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য পূর্ণিমা দত্ত তৃণমূলে যোগদান করেন৷ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়েছে৷