১ জুন থেকে বিজেপি সরকারের মেয়াদ ৩ দিনের!
নিজস্ব প্রতিনিধি– বাকি মাত্র আর তিনটি দফার নির্বাচন৷ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের টার্গেটে এবার তাঁর নিজ ‘কর্মভূমি’ অর্থাৎ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা৷ শনিবার জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডলের সমর্থনে কুলতলীতে জনসভা করেন অভিষেক৷ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম দেখে শুরুতেই তিনি বলেন, “দক্ষিণ কলকাতা আমার জন্মভূমি হলে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা আমার কর্মভূমি৷” নিজ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এদিনের জনসভা থেকে দফায় দফায় অভিষেক আক্রমণ শানান বিজেপিকে৷ নাম না করে প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গাঙ্গুলীকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “বিজেপির একজন নেতা তমলুক থেকে দাঁড়িয়েছেন, তিনি জিজ্ঞেস করছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দাম কত? আপনি ভাবুন, যে মহিলা কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করে বাংলায় নারী উন্নয়ন করেছেন তাঁর দাম জিজ্ঞেস করছেন এক বিজেপির প্রার্থী৷ আগামী ১ তারিখ এই নারী বিরোধী আবর্জনাদের বঙ্গোপসাগরে ভাসান দিতে হবে৷ আমি তাঁর মন্তব্যের জবাব দিয়েছে, বাকি জবাবটা আগামী ৪ তারিখ ভোটবাক্সে মানুষ দেবেন৷”
Advertisement
এরপরই অভিষেকের আক্রমণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে৷ ছুঁড়ে দেন ওপর এক চ্যালেঞ্জ৷ তিনি বলেন, “অমিত শাহ ২০২১ সালে এইখানে এসে বলেছিলেন সুন্দরবনকে দু লক্ষ কোটি টাকা দেবেন৷ তিন বছর হয়ে গিয়েছে৷ দশ পয়সা দিয়েছে প্রমাণ করতে পারবে? শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন! প্রমাণ করতে পারলে আমি ভোট চাইতে যাবো না৷” এর সাথেই অভিষেকের নিজের দেওয়া ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ এর কথাও আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বদের৷ বিজেপির নেতাদের দুটো প্রশ্ন করার আর্জি জানিয়েছেন জনসাধারণকে৷ অভিষেক বলেন, “শেষ দফায় নির্বাচন তো এই অঞ্চলে৷ এখনও আসেননি বাবুরা! ভোট চাইতে আসলে দুটো প্রশ্ন করবেন৷ এক, বিজেপির প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দাম জিজ্ঞেস করেছেন, এই নিয়ে আপনাদের প্রার্থীর অবস্থান কি? দুই, বিজেপি নেত্রী লক্ষীর ভান্ডার বন্ধ করবেন বলেছেন, এই নিয়ে আপনাদের অবস্থান কি?” পাশাপাশি ‘গায়ের জোরে’ বাংলার বকেয়া অর্থ আটকে রাখা নিয়েও এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন যুবরাজ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই বিজেপি সরকার আচ্ছে দিনের নামে কেবল জুমলাবাজি করে ১০ বছর আগে ক্ষমতায় এসেছিলো৷”
Advertisement
শুধু বিজেপিকে আক্রমণই নয়, জনসাধারণকে মঙ্গলবার্তাও দিয়েছেন যুবরাজ৷ নির্বাচন শেষে আগামী তিন মাসের মধ্যে ৩০ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অভিষেক৷ ভোটের দিন বিজেপির কেবল মদের বাজেট ৪০ কোটি! দাবি অভিষেকের৷ তবে কিভাবে? নিজ বক্তব্যের সমর্থনে সেই হিসেবও দিয়েছেন তিনি৷ অভিষেকের ভাষায়, “গঙ্গাধর কয়াল বলেছেন বিজেপির একটি বুথে মদ খাওয়ার খরচ পাঁচ হাজার টাকা৷ তাহলে বাংলার আশি হাজার বুথে তার খরচ ৪০ কোটি টাকা৷ গরিব মানুষের বাডি়র টাকা বন্ধ আর বিজেপির ভোটের দিন মদের বাজেট ৪০ কোটি! ভাবছেন, এত টাকার মদ কে খাবে? অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ এলাকায় কোনও ভাল লোক বিজেপি করে না৷ আর তাই জন্য মদের বাজেট এত৷”
জয়নগরের তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মন্ডলকে ৪ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতানোর আর্জি জানিয়েছেন অভিষেক৷ এর সাথেই করেছেন কেন্দ্র সরকার বদলের ভবিষ্যতবাণী৷ তাঁর ভাষায়, “১লা জুন যখন ভোট দিতে যাবেন, মাথায় রাখবেন তখন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মেয়াদ ৩ দিনের! ৪ তারিখে সরকার পরিবর্তন হবেই৷ আর তারপর তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্র থেকে বাংলার বকেয়া টাকা বাংলায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের৷” গত নির্বাচন গুলিতে ডায়মন্ড হারবার এবং জয়নগরে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, “এবারের নির্বাচনে লড়াইটা কেবল তৃণমূল আর বিজেপির নয়, এই জেলার (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) চারটি লোকসভা আসনে কার কত জয়ের ব্যবধান হবে, লড়াইটা তার৷ ডায়মন্ড হারবারের সাথে লড়াই জয়নগরের এবং মথুরাপুরের সাথে লড়াই যাদবপুরের৷” অভিষেকের আরও সংযোজন, “এই জেলার ভোট সবসময় শেষ দফায় হয় তার কারণ বিজেপির রফাদফাটা এই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা করে৷” ১লা জুন জোড়াফুলে ভোট দিয়ে এক কোপে ‘বাংলা বিরোধী’ দের বিদায় করার ডাক দিয়েছেন তৃণমূল সেনাপতি৷ এদিন সভা চলাকালীন সভাস্থল থেকেই শোনা যায় উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনির শব্দ৷
অভিষেক বলে ওঠেন, “মায়েরা উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি দিয়ে বরণ করছেন৷ এই ভালোবাসা কোথায় পাবেন? বিজেপির তো এতো টাকা আছে, করে দেখাক! এই ভালোবাসা অন্তর থেকে আসে৷ প্রথম পরিবর্তনের চাকা ঘুরিয়েছিল এই জয়নগর ২০০৮ সালে, আমি আপনাদের নতমস্তকে প্রণাম জানাই৷” এদিনের সভায় তৈরী জনপ্লাবন৷ অভিষেক বলেন, “আমি দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে স্যালুট জানাই৷ এই জেলা বিজেপির মিথ্যে কথায় পা দেয়নি৷ এই জেলা বাংলাকে পথ দেখিয়েছে৷” নিজ বক্তব্যের শেষে সভামঞ্চ থেকে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে মাথানত করে প্রণাম জানিয়ে অভিষেক বলেন, “মাথানত করতে হলে আমরা মায়েদের কাছে, সর্বশক্তিমানের কাছে, প্রবীণদের কাছে করবো, বাংলা বিরোধীদের কাছে করবো না৷ আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করে যাবো৷”
Advertisement



