ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হবার আশায় চিন্তিত ভাঙডে়র বিধায়ক নওশাদ

Written by SNS April 3, 2024 1:42 pm

দেরি হয়ে যাচ্ছে, মিলবে না প্রচারের সময়

নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ২ এপ্রিল – ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ভাঙডে়র বিধায়ক আই এস এফ-এর নেতা ফুরফুরা শরীফের আওলাদ নওশাদ সিদ্দিকি ভীষণভাবে চিন্তিত৷ মঙ্গলবার বিকেলে অকপটে দৈনিক স্টেটসম্যানকে জানালেন, এখনো ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী কে হবে ঘোষণা হলো না৷ জোটের শরিকদের সম্মান জানিয়ে আই এস এফ দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারছে না৷ আরো দু একদিন দেরি হবে৷ শেষ পর্যন্ত জোট না হলে ডায়মন্ড হারবারে আই এস এফ প্রার্থী দেবেই৷ ভাঙডে়র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির কথায়, নিজের দলের কাছে ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছি৷ শেষ পর্যন্ত যদি দল অনুমোদন দেয় প্রাণপন লড়াই দেবো৷ তবে চিন্তা তো থাকছেই ডায়মন্ড হারবার লোকসভার সাতটি বিধানসভা এলাকার দু হাজার বুথ কভার করার সময় পাবো না৷ সেক্ষেত্রে অঞ্চল ভিত্তিক সভা করতে হবে৷ এই মুহূর্তে দলীয় শৃঙ্খলা রাখতে চুপ থাকা ছাড়া উপায় নেই৷

তাহলে কী ডায়মন্ড হারবারের দু বারের সাংসদ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে অদৃশ্য কোনও বোঝাপড়ায় সব দলই ওয়াক ওভার দিচ্ছে৷ এখনো পর্যন্ত একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস ইউ সি আই এর প্রার্থী রামকুমার মন্ডল ছাড়া আর কোনও নাম ঘোষণা হয়নি৷ এ বিষয়ে শাসকদলের জেলার এক পোড় খাওয়া নেতার কথায়, এস ইউ সি আই প্রার্থী দেওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের সুবিধা হল৷ ওদের নির্দিষ্ট ভোট ওদের ঝুলিতে গেলে, তৃণমূলের জয়ের ভোট অংক মেলানোর কাজ সহজ হবে৷

এমন ব্যাখ্যার উত্তরে এস ইউ সি আই এর জয়নগরের প্রাক্তন বিধায়ক অধ্যাপক তরুণ নস্কর দৈনিক স্টেটসম্যানকে জানালেন, এটা ওদের ব্যাখ্যা হতে পারে৷ আমরা আমাদের রাজনৈতিক লড়াই লড়ছি৷ এস ইউ সি আই তো এ রাজ্যের বিয়াল্লিশটা আসনেই প্রার্থী দিয়েছে৷ সারা ভারতবর্ষে ১৫১টা সিটে লড়ছে৷ বেশি মানুষ যে দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন তিনিই জিতবেন৷ সেই প্রার্থী যে কোনও দলেরই হতে পারে৷

ইতিমধ্যেই এস ইউ সি আই এর ঘোষিত ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী রামকুমার মন্ডল ডায়মন্ড হারবার লোকসভার বিধানসভা ধরে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন৷ প্রচারের ময়দান থেকেই মঙ্গলবার বিকেলে এস ইউ সি আই এর প্রার্থী রামকুমার মন্ডল দৈনিক স্টেটসম্যানকে জানালেন, ডায়মন্ড হারবার লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে থাকা সাতগাছিয়া, বজবজ ডায়মন্ড হারবার ও ফলতা বিধানসভার অনেকগুলি অঞ্চলে প্রচার করতে পেরেছেন৷ এছাড়াও জনসংযোগ করতে, বিষয় ভিত্তিক ইসু্যগুলি তুলে ধরে, জনবহুল রাস্তা বাজার বিভিন্ন মোডে় চলছে ছোট ছোট পথসভা৷ ভালো সাড়া পাচ্ছি৷ ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী রামকুমার মন্ডলের কথায়, এখনো পর্যন্ত সেভাবে কোথাও কোনও বাধা পাইনি৷ একমাত্র ফলতা বিধানসভার ফতেপুর ছাড়া৷ ফতেপুরে আমাদের আটকানো হয়েছিল৷ আমরা সে বাধা অতিক্রম করেই প্রচার করেছি৷ একমাত্র এই ফলতা অঞ্চলেই দেখলাম, সাধারণ মানুষ প্রচার পত্র হাতে নিতেও ভয় পাচ্ছেন৷ এই ভয়কে উপেক্ষা করেই এগিয়ে চলেছি৷ নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে এখনই কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি৷ আবার যদি বাধা দেয়, তখন নিশ্চয়ই জানাবো৷

আশ্চর্য জোট বাধারও কতো হিসেব নিকেষ৷ আই এস এফ-এর নেতা ভাঙডে়র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বলছেন, জোটের দিকে তাকিয়ে আছেন৷ উনি ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক৷ জোট বা তার দল অনুমতি দিলেই দাঁড়াবেন৷ এদিকে এ প্রসঙ্গে জোটের বড় শরিক সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, নওশাদ বাইরে বলে বেড়াচ্ছে ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হতে চায়৷ আমাদের দলের সামনে এসে বলুক৷ আমরা তো চাই বিজেপি তৃণমূলকে পরাস্ত করতে সব বিরোধী শক্তি এক জোট হোক৷ কেউ এগিয়ে না এলে বুধবারই হয়তো বামেরা তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেবে৷

রাজ্যের ছোট বড় বিরোধী দলগুলির রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে চর্চিত হাইভোল্টেজ ডায়মন্ড হারবার সিট নিয়ে কথোপকথন পাওয়া গেলেও, সত্যিকারের বড় বিরোধীদল বিজেপির প্রার্থী নিয়ে শুধুই জল্পনা৷ কাগুজে লড়াই৷ কাদা ছোঁড়াছুঁডি় নিজেদের মধ্যেই৷ কে আসনটি নেবে৷ ইতিমধ্যেই এক লড়াকু মহিলা প্রার্থীর নাম কল্পনা জল্পনার ঘরে এলেই শুরু হয়ে গেছে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ৷ তাঁর পোশাক শাডি় না লেগিন্স, কী হওয়া উচিত৷ মহিলাদের মা দুর্গা বলছেন, স্বয়ং দেশের বর্তমান কান্ডারী৷ আর সেই দলের চুনো সৈনিক দল মহিলাদের নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় চুলোচুলি করছেন অদ্ভুত ধরনের শব্দ বাণ নিক্ষেপ করে৷ এ যেন বান্দরের পিঠে ভাগের আসর৷ ডায়মন্ড হারবারের এবারের মোট ভোটার পনেরো লক্ষের কিছু বেশি৷ তার মধ্যে মহিলা ভোটার অর্ধেক৷ একজন মহিলা প্রার্থী বিজেপি দিলে লড়াই জমে যেত বলছেন বিজেপিরই একাংশ৷ শেষ পর্যন্ত কী হবে সময় বলবে৷ আঠেরো মাসে বছর প্রবাদ স্মরণ করে আলিপুরে জেলাশাসকের কার্যালয়ে আসা সুন্দরবনের মানুষের কথায়, বোধহয় ছোট রাজাবাবুকেই চায় বড় রাজাবাবু৷ তাই এত গডি়মসি! চার জুন হয়তো সবুজ আবির অনেক উড়বে৷ আপনারা লিখবেন হ্যাটট্রিক হবার খবর!