চৈত্র সংক্রান্তিতে বাংলার প্রচলিত লোক উৎসব গাজন

Written by SNS April 8, 2024 1:49 pm

অরিন্দম ভট্টাচার্য

বাংলার বহু লোক উৎসবের মধ্যে গাজন উৎসব আধুনিক যুগেও বিশেষ স্থান করে নিয়েছে৷ যদিও এটি প্রধানত গ্রামীণ বাংলায় পালিত হয়৷ হিন্দুরা প্রধানত চৈত্র মাসের শেষ দুই দিনে উৎসব পালন করে৷ সূর্য যখন মীন রাশিতে প্রবেশ করবে এই সময়টিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়৷ চৈত্র সংক্রান্তি প্রতি বছর ১৪ ই এপ্রিল শুরু হয়৷ লোকেরা এই সময়কালে তাদের ঈশ্বরের প্রতি আত্মনিবেদন করে উপবাস পালন করে৷ গাজন কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব৷ সাধারণভাবে বাংলা ভাষায় গাজন শব্দটি এসেছে উৎসবের সময় সন্ন্যাসীদের দ্বারা উৎপন্ন গর্জন শব্দ থেকে৷ আবার অনেকে মনে করেন যে ‘গা’ অর্থে গ্রাম এবং ‘জন’ মানুষ৷ যা মানুষের উৎসব নির্দেশ করে৷ গাজনের সঙ্গে কিছুটা বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়৷ দক্ষিণবঙ্গে গাজনের সময় চড়ক পুজো, নীল পুজো, ধর্মরাজের পুজো করা হয়৷ মূলত নিম্নশ্রেণীর মানুষরা এর সাথে যুক্ত হয়৷ এই পুজোর অঙ্গ হিসেবে সন্ন্যাসী ধারণ, সংসাজা, দন্ডিকাটা, বাণফোঁড়া, আগুনের উপর দিয়ে হাঁটা, কাটা ঝাঁপ, মৃত মানুষের মাথা নিয়ে নৃত্য (বর্ধমানের কুড়মুন গ্রামে৷ শিক্ষিত মানুষরা যার বিরোধী) ইত্যাদি যুক্ত৷ আবার উত্তরবঙ্গের অবিভক্ত মালদা, দুই দিনাজপুর ও জলপাইগুডি়তে হয় গম্ভীরা ও মুখোশ নৃত্য৷ গাজন প্রকৃতপক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সাথে যুক্ত৷ তারা ভালো বৃষ্টি এবং ভালো ফসলের জন্য প্রার্থনা করে৷ ভগবান শিব এই সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বলা হয়৷ গাজনের প্রত্যেক সন্ন্যাসীকে সাধারণ মানুষের ঊর্ধ্বে মনে করা হয়৷ গাজনের আরেকটি অঙ্গ ঢাকের বাজনা, শিবের নামে সন্ন্যাসীদের গর্জন ও গাজনের গান৷ গাজনকে কেন্দ্র করে এক সময় কলকাতা মেতে উঠত৷ তবে আজও গ্রাম বাংলার নানা জায়গায় গাজন নিয়ে চলে মাতামাতি৷ বসে মেলা, চলে নানান অনুষ্ঠান৷