বহরমপুরে জনসভায় অধীরের সঙ্গে শুভেন্দুকে তুলোধোনা তৃণমূল নেতৃত্বের

রবিবার বহরমপুরে বসে একদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী উচ্চশিত প্রশংসা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং অধিকারী পরিবারের।

Written by SNS Berhampore | November 10, 2020 4:34 pm

শুভেন্দু অধিকারী এআইটিসি (@SuvenduAdhika20/Twitter)

রবিবার মুর্শিদাবাদে বসে একদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী উচ্চশিত প্রশংসা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং অধিকারী পরিবারের।

অন্যদিকে এদিনই জেলার খড়গ্রামে এক সভায় যােগ দিয়ে একেবারের জন্যও দল এবং দলনেত্রীর নাম মুখে না নিয়ে একের পর এক কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। চব্বিশ ঘন্টা না পেরােতেই সােমবার জেলার সদর শহর বহরমপুরে ভিড়ে ঠাসা প্রকাশ্য সভায় অধীর- শুভেন্দুকে তুলােধনা করলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।

বিজেপি বিরােধী প্রতিবাদ সভাটি ডেকেছিলেন বহরমপুর টাউন কংগ্রেসের সভাপতি নাড়ুগােপাল মুখােপাধ্যায়। সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সভাপতি তথা সাংসদ আবু তাহের খান, অন্যতম জেলা কো অর্ডিনেটর অশােক দাস, প্রাক্তন সংসদ মইনুল হাসান, প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর, জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অপূর্ব কুমার দত্ত, আব্দুল মাতিন প্রমুখ।

আর এই প্রকাশ্য জনসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে প্রথম থেকেই অধীর চৌধুরী এবং শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ছিলেন বর্ষিয়ান পােড় খাওয়া নেতা অশােক দাস। তিনি এদিন বলেন মুর্শিদাবাদ জেলায় বিজেপির ভােট নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। কারণ ওই জেলায় বিজেপির কোনও জায়গা নেই। এই জেলায় বড়াে বিপদের নাম শুভেন্দু অধিকারী। পার্টি ভাঙার ষড়যন্ত্রে সামিল হতে তিনি হঠাৎ উদয় হলেন জেলায়। পার্টি জানে না। পার্টির নেতৃত্ব জানে না। কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ পার্টির কেউ কিছু জানে না মানুষ কি মূর্খ। মানুষ কিছু বােঝে না। দলকে ভাঙার একটা ষড়যন্ত্র চলছে। এটা গেল একদিক।

আরেকদিকে আছে পালের গােদা অধীর চৌধুরী। যে একটা সময় সিপিএম পার্টির বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের কথা বলতেন। মানুষ মেনে নিয়েছিল তার কথা। মানুষ তাকে সমর্থন করেছিল। শক্তি জুগিয়েছিল। সেই অধীর চৌধুরী তার সমস্ত বিবেক বিসর্জন দিয়ে আজকে সিপিএমের পা ধরে চলছে। লজ্জা করে না। বেইমান। গতকাল শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। এ যেন ভূতের মুখে রামনাম। কয়েকদিন আগেও এরা দুজন দুজনের বাপ বাপন্ত করতে ছাড়েনি।

ক্ষোভ উগরে অশােক দাস আরও বলেন, এ জেলায় বিজেপিকে অক্সিজেন যােগাচ্ছে অধীর চৌধুরী। যে মানুষটি মুর্শিদাবাদে এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দল ভাঙার খেলায় মদত দিতে, সেই শুভেন্দু অধিকারী এখন অধীর চৌধুরীর কাছে মহান নেতা হয়ে গিয়েছে। আমরা দুজনকে ধিক্কার জানাচ্ছি।

শুভেন্দু অধিকারীকে উদ্দেশ্য করে এদিন অশােকবাবু বলেন, মুর্শিদাবাদে আমরা সবাই কোনও দাদার অনুগামী নই। আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী। কেউ কেউ তাকে ওভারটেক করতে চাইছে। কিন্তু জানেন তাে রাস্তায় ওভারটেক করতে গেলে কি অবস্থা হয়। ল্যাম্পপােস্টে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। মরে যায়। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওভারটেক করার পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে।

কেউ কেউ ভাবছে তাকে ওভারটেকের বিনিময়ে হিরাে হয়ে যাবে। হিরো নয় সে একটা বড়াে জিরােতে পরিণত হবে কারণ এই জেলায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমরা সবাই দিদির অনুগামী। আমরা অন্য কাউকে বুঝি না। অন্য কাউকে চিনি না। নেত্রীর নেতৃত্ব সিপিএমকে তাড়িয়েছি। কংগ্রেসকেও রুখে দিয়েছি। সিপিএম কংগ্রেস বিজেপি র তলায় তলায় জোট। মাঝখানে পালের গােদা শুভেন্দু অধিকারী। এই সমস্ত ষড়যন্ত্র গুছিয়ে দেবাে। এই বেইমানি আমরা বরদাস্ত করবাে না।

জনসভার পরে এক সাংবাদিক বৈঠকে আবু তাহের খান ও শুভেন্দু অধিকারী এবং অধীর চৌধুরীকে নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, উনি এখনও মন্ত্রিসভার সদস্য আছেন। আমি তাকে সম্মান করি। শ্রদ্ধা করি।

কিন্তু পার্টির বাইরে গিয়ে কিছু করলে সেটা বরদাস্ত করা যাবে না। তা সে যেই হন না কেনাে। মুর্শিদাবাদ জেলায় কেউ দল ভাঙতে এলে তৃণমূল কংগ্রেস কোনওমতে বরদাস্ত করবে না। আর অধীর চৌধুরী? উনি তাে ঘােলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন। কিছুদিন আগেই আমরা দেখেছি । অধীর চৌধুরী বিভিন্ন জনসভায় শুভেন্দু অধিকারীকে লােহা চোর বলে সম্বােধন করেছেন। এর মধ্যে কি এমন হয়ে গেল যে রাতারাতি শুভেন্দু অধিকারী এবং তার পরিবার তার কাছে মহান হয়ে গেল। আসলে তার সবই মিথ্যা। মুখে এক আর পিছনে আরেক। সেটা মানুষ ধরে ফেলেছে।