জীবন্মৃত হয়েই বাঁচা

মানুষ বুঝে গেছেন প্রতিশ্রুতি শ্রুতিমধুর হলেও বেকারত্ব কমবে না, দুর্নীতি কমবে না, বাড়বে না ভেঙে পড়া রেল-ডাকঘর-ব্যাঙ্ক চিকিৎসা ব্যবস্থা।

Written by Sudarshan Nandi Midnapore | July 8, 2019 2:27 pm

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র (Photo: iStock)

ঘটনা এক : নব্বই বছরের সাধনা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন আগে স্টেট ব্যাঙ্কে পেনশন তুলতে গিয়ে দেখলেন হঠাৎ তার পেনশন অর্ধেক হয়ে গেছে, বয়স কমিয়ে দেখানাে হয়েছে। ছত্রিশ বছর কম। বাবুদের ভুলে বয়স কমলে ক্ষতি নেই, কিন্তু এই বয়সে পেনশনের টাকা কমে গেলে? আতঙ্কিত সাধনাদেবী শীর্ণ শরীরে একবার ব্যাঙ্ক, আরেকবার তাঁর পেনশন অফিস করেও কোনও সদুত্তর পেলেন না কেন এমনটি হল। এক অসহায় অবস্থা। স্বামী ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাস্টমস অফিসার। কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসের পেনশন নিয়ে নব্বই বছরের বৃদ্ধার যদি এই অমানবিক অবস্থা হয় তখন বােঝা যায় বক্তৃতায় শােনা সংস্কার দেশের কর্মসংস্কৃতি কোথায় ফিরিয়েছে।

ঘটনা দুই : দীনেশবাবু কদিন আগে ডাকঘরে গেছেন পেনশন তুলতে। বিশাল লাইন, কর্মী একজন। ঘণ্টা তিনেক লাইন দিয়ে যখন কাউন্টারে এসে শুনলেন লিঙ্ক নেই, সেদিন আরও দু’ঘণ্টা কাটিয়ে ঘরে ফিরলেন খালি হাতে। পরের দিন আবার গেলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য সেদিন সব ঠিক থাকলেও টাকা ছিল না ডাকঘরে, ফলে বৃদ্ধ বয়সে হা-হুতাশ করতে করতে বাড়ি ফিরলেন খালিহাতেই। বােঝা গেল অপ্রয়ােজনীয় বুলেট ট্রেন, মূর্তি বানানাের জন্য জনগণের করের টাকা খরচের ব্যবস্থা থাকলেও দেশের ডাক বিভাগের মতাে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলির পরিকাঠামাে নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা নেই। তা পরিষেবা তলানিতে পৌছলেও।

ঘটনা তিন : ভেলােরে ডাক্তার দেখাবেন বলে সুদীনবাবু বাবাকে নিয়ে ট্রেনে চাপবেন। স্লিপার ক্লাসে সংরক্ষিত আসন। স্টেশনে ট্রেন থামতে রােগী বাবাকে নিয়ে তাঁর সংরক্ষিত কামরায় উঠতে গিয়ে দেখেন পাদানি পর্যন্ত অসংরক্ষিত যাত্রীদের ভিড়। অনেক কষ্টে উঠে তিনি নিজের বার্থে পৌছলেন ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায়। দেখলেন তার সংরক্ষিত বার্থটিতে তিনজন বসে। কেউ উঠতে চাইল না। অনেক বলেকয়ে একটু বসার জায়গা হল। কিন্তু টয়লেটেও অনেকে জিনিস রাখার ফলে দেখা দিল এক বিভীষিকাময় অবস্থা। কামরায় টিটিই, রেল পুলিশ সব বরাদ্দ রয়েছে, কিন্তু এই ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা লাঘবে কেউ নেই। ভাবা যায় আজ সাধারণ মানুষ কত অসহায়। সাধারণ মানুষের কাছে এই হল সরকারের কাছে প্রাপ্য পরিষেবা। ফলে দৈনন্দিন জীবনে মানুষ নাজেহাল হচ্ছে। আর নেতামন্ত্রীরা জনগণের সেবায় প্রতিদিন নিজেদের বলিদানের ফিরিস্তি শােনাচ্ছেন।

মানুষ বুঝে গেছেন প্রতিশ্রুতি শ্রুতিমধুর হলেও বেকারত্ব কমবে না, দুর্নীতি কমবে না, বাড়বে না ভেঙে পড়া রেল-ডাকঘর-ব্যাঙ্ক চিকিৎসা ব্যবস্থা বা কোনও কিছুর পরিষেবার মান। কমবে জীবনের দাম, বাড়বে জিনিসের দাম, বাড়বে আতঙ্ক, অসহিষ্ণুত্তা, বিভেদ, উন্মাদনা।

আমরা কংগ্রেস সরকার দেখলাম, মিলিজুলি সরকার দেখেছি, দেখছি এখন বিজেপি সরকার। গণতান্ত্রিক নিয়মে আবার পাঁচ বছর তারা দেশ শাসন করবে। গত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, সাধারণ মানুষের কাছে পরিষেবা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থাকবে। মানুষ বেঁচে থাকবে জীবন্বত হয়ে। এর থেকে মুক্তি কতদূরে তা ব্রহ্ম-বিষ্ণু-মহেশ্ববরও বােধহয় জানেন না।