নেতৃত্ব দিক রাহুলই

জয়ের মতাে পরাজয়ও নির্বাচনী যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাহুল গান্ধী এত হতাশ হয়ে পড়ছে কেন! তিনি যদি সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন, তাহলে কংগ্রেসের দুদিন বাড়বে বই কমবে না।

Written by Kajal Chatterjee Sodepur | June 17, 2019 4:52 pm

রাহুল গান্ধি (Photo: IANS)

জয়ের মতাে পরাজয়ও নির্বাচনী যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাহুল গান্ধী এত হতাশ হয়ে পড়ছে কেন! তিনি যদি সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন, তাহলে কংগ্রেসের দুদিন বাড়বে বই কমবে না।

রাহুলের মধ্যে যে কি বিশাল সম্ভাবনা লুক্কায়িত আছে, তা স্বয়ং তিনিই কি জানেন। ২০১৭ সালে পঞ্জাবে বিজেপি-শিরােমণি অকালী দল জোট সরকারকে রাহুলের কংগ্রেস ধরাশায়ী করেছিল। গােয়া ও মণিপুরে অনৈতিকভাবে পিছন দরজা দিয়ে বিজেপি সরকার গঠন করতেই পারে; কিন্তু নৈতিক জয়টা রাহুলেরই ছিল কারণ উক্ত দুই রাজ্যেই কংগ্রেসই আসন জয়ের নিরিখে প্রথম স্থানে ছিল।

আর কয়েক মাস আগে মধ্যপ্রদেশ-ছত্তিসগড়-রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচন তাে স্রেফ ইতিহাস! তিন রাজ্যেই বিজেপি সরকারকে ধরাশায়ী করে কংগ্রেসের জয়জয়কার। এই সমস্ত সাফল্য কি তুচ্ছ বিষয়।

আর এই লােকসভা নির্বাচনে পাঞ্জাবের ফলের কথাও ভুললে চলবে না। ২০০২ গুজরাত নরহত্যাকে উহ্য রেখে বিজেপি ১৯৮৪ সালের দিল্লির শিখ-বিরােধী হিংসার পুরনাে কাশুন্দি ঘেঁটেছিল পঞ্চাবের বুকে শিখ ভােটের লােভে। তার উপর শ্যাম পিত্রোদাও অবিবেচকের মতাে এক হৃদয়হীন মন্তব্য করে ফেলেছিল। তা সত্ত্বেও পঞ্জাব কিন্তু দু’হাত ভরে কংগ্রেসের পক্ষেই ভােটটা দিল শুধুমাত্র রাহুলের সততা ও কংগ্রেসের সেকুলার সত্তার প্রতি বিশ্বাস রেখে।

তাই রাহুল কেন এত পজিটিভ দিকগুলিকে নস্যাৎ করে শুধুমাত্র এই বার্তাটাই বড় করে দেখছেন ও যাবতীয় দায় নিজস্কন্ধে গ্রহণ করছে। উপরন্তু তিনি বিজেপি দ্বারা আবিস্তৃত ‘পরিবারতন্ত্র’ নামক ফাঁদটিতে পা-ই বা দিচ্ছেন কেন।

প্রথমত এই বিষয়ে বিজেপির রেকর্ড কি। হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিসগড়, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, অরুণাচল প্রদেশে বিজেপি পরিবারতন্ত্রকে সমর্থন করে না বা করেনি। পাঞ্জাব বা মহারাষ্ট্রের পরিবারতান্ত্রিক দলগুলির সঙ্গে বিজেপির ভালই তাে সখ্য। পরিবারতন্ত্রর বিরুদ্ধে কথা বলা হবে, অথচ পরিবারতন্ত্রকেই দিব্যি স্পন্সর করা হবে দল বা ভােটের স্বার্থে।

বােধ হয় বিজেপি নৈতিক অভিধান অনুসারী নেহরু-গান্ধিই হল দেশের একমাত্র পরিবারতন্ত্র। সুতরাং রাহুল এই নির্লজ্জ দ্বিচারিতাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন।

বিজেপি আসলে খুব ভালভাবেই ওয়াকিবহাল যে বর্তমান সময়ে রাহুলই তাদের সাফল্য রথের পথে প্রধান বা একমাত্র বাধা। তাই দলটির সকল নেতা-নেত্রীর প্রধান কর্মই হল ‘পাপ্প’ উপাধি প্রদান সহ যত রকমভাবে সম্ভব রাহুলের চরিত্রহনন করা। আর অবশ্যই স্নায়ুগতভাবে রাহুলকে দমিয়ে দেওয়া।

রাহুল যদি সত্যিই এতই ‘পাপ্প’ হয়, তাহলে বিজেপি তাঁকে উপেক্ষা প্রদর্শনের সাহস করে না কেন। রাহুলের উদ্দেশে তাদের নিরস্ত্র বিষােদগার এই প্রমাণ করে যে তিনি বিজেপির কাছে কত বড় এক আতঙ্কের বিষয়। তাই যে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে মিথ্যাচার, আশালীনতা, বর্বর কথাবার্তাই শেষ কথা বলে ও জনগণও এই অসভ্যতাকে দু’হাত ভরে ভােট দিয়ে পুরস্কৃত করে; সেই অন্ধকার সময়ে রাহুলের মতাে এক সভা ভদ্র মার্জিত রুচিশীল ব্যক্তিত্বের বড়ই প্রয়ােজন যিনি ভারতের সহিষ্ণু অংশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ও দেশকে অসহিষ্ণুতার করালগ্রাস থেকে রক্ষা করবেন।

তাই রাহুলের পদত্যাগ শুধু কংগ্রেস ও ভাররেতর ভবিষ্যতের পক্ষেই এক বড় আঘাত হয়ে অবতীর্ণ হবে না, উপরন্তু বিজেপির পক্ষেও দারুণ সুসংবাদ হয়ে দেখা দেবে।

আর গান্ধি পরিবারের বাইরে যেই সভাপতি হন না কেন, বিজেপি তাঁকে সােনিয়া-রাহুলের ‘কলের পুতুল’ বলেই আখ্যা দেবে ঠিক যেমন দশ বছরের প্রধানমন্ত্রী মনমােহন সিংহ সম্বন্ধে বলা হােত।

তাই এই সমস্ত অবান্তর প্রলাপকে গ্রাহ্য না করে রাহুলের সভাপতি অবশ্যই থাকা উচিত। নরহত্যা বা দুর্নীতির কোন কলঙ্ক রাহুলের নামের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাঁর মতাে এত পরিষ্কার প্রতিচ্ছবি ও সর্বভারতীয় পরিচিতির নেতা এই বিশাল দেশে দ্বিতীয় কে আছে।

তাই তাঁর মতাে ব্যক্তিত্ব যদি বিজেপির সংকীর্ণতাকে সম্মান দিয়ে সর্বোচ্চ পদ থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। তাই জনগণের উদ্দেশ্যে ‘All my love and Huge Hug’ প্রদান করে, দেশের সভ্য সংস্কৃতিবান সহিষ্ণু সেকুলার মানবিক অংশের নিঃশর্ত সমর্থন গ্রহণ করে রাহুল গান্ধি কংগ্রেস ও ভারতকে সাফল্যের পথে পুনরায় নেতৃত্ব দিয়ে আলাের দিশা দেখান— এই আমাদের একান্ত প্রার্থনা।