‘এক দেশ এক নির্বাচন’, মোদির নতুন চালাকি

বিজেপির এই ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর ভগীরথ লালকৃষ্ণ আদবানি। তিনিই ১৯৯৫ সালে প্রথম এই প্রস্তাব পেড়েছিলেন।

Written by Shobhanlal Chakrabarty Pancha Sayar | July 8, 2019 2:04 pm

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Photo: IANS/MEA)

বিজেপি দলটি বর্তমানে রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘ। তাঁরা ধরে নিচ্ছেন যে দুর্দান্ত প্রচারে এবারের ভােটতরণী তারা নিজেদের তীরে ঠেলে তুললেন, তেমন প্রচার দিয়ে একই সঙ্গে লােকসভা ও বিধানসভা মিলিয়ে গােটা দেশ প্লাবিত করে ফেলতে পারবেন অদূর ভবিষ্যতেই, যদি তাঁরা সাথী হিসাবে পান ‘এক দেশ এক নির্বাচন’- এর নীতিটিকে।

লােকসভার ঢেউয়ে বিধানসভাগুলি ভেসে যাবে, এমনটাই ভেবে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কিনা সাংসদ ও বিধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটুকু যা বৈচিত্র্যের সম্ভাবনা ছিল, বুলডােজারের তলায় তাকে প্রায় নিশ্চিতভাবে গুঁড়িয়ে দিতে পারবে ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ প্রক্রিয়াটি।

দ্বিতীয় দফার মােদি সরকার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ঝুলি থেকে টেনে বার করে হইচই, সর্বদলীয় বৈঠক, কেন্দ্রীয় কমিটি সবেরই কারণ একটাই ‘আসমুদ্রকাশ্মীর বিজেপি’-তে পৌঁছনাে। এমনকী আগ বাড়িয়ে রাষ্ট্রপতি জানিয়ে দিলেন ভারতের থমকে থাকা উন্নয়ন ও প্রগতির সমাধান নাকি এই সংস্কারের মধ্যেই!

দৃষ্টিকটুভাবে সাংসদদের কাছে আবেদন জানালেন সংস্কার দ্রুত করে ফেলার। বিজেপির এই ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর ভগীরথ লালকৃষ্ণ আদবানি। তিনিই ১৯৯৫ সালে প্রথম এই প্রস্তাব পেড়েছিলেন। আজ বিজেপি যখন নিজের পায়ে শক্ত জমিতে দাঁড়িয়ে আছে, তখন উঠতে বসতে যে পশ্চিমি সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সংস্কারকে তাদের নেতারা ও পদসৈনিকেরা গালমন্দ করে যাবেন, সেই পশ্চিমি ধাঁচের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই আঁকড়ে ধরতে চলেছেন, স্রেফ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য।

এত বড় দেশে স্থানীয় ভােট স্থানীয় বিবেচনায় হবে, কেন্দ্রীয় শাসকের নির্বাচনে অন্য চিন্তা থাকবে– এই মৌলিক নীতির ভিত্তিতে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় শাসনের স্তরটা আলাদা রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে কেবল সুবিধার বিবেচনা ছিল না, ছিল আদর্শের ছায়া। সেই আদর্শ অনুযায়ী, এ দেশ যেমন একটি কেন্দ্রীয় শাসনের সুতােয় বাঁধা, তেমনি প্রদেশ ও অঞ্চলগুলির নিজস্ব সত্তা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বিবেচনা ইত্যাদি নিজ নিজ রকমের বলে সেই জায়গাটার বৈচিত্র্য রক্ষা করা উচিত এবং বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু বিজেপি চাইছে খরচের জিগিরে জনগণকে ভুলিয়ে কেন্দ্রীকরণ করতে। সংবিধান যেখানে বলে ভারত হল ‘গ্রুপ অফ স্টেটস’, বিজেপি সেখানে চাইছে যাবতীয় বৈচিত্র বিনাশ করে তাকে ‘গ্রুপ অফ প্রভিন্সেস’ বানাতে। যাতে গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী এর ফলে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে শাসিত দেশের প্রেসিডেন্টের মতাে বিপুল ক্ষমতাধারী হয়ে উঠবেন।

মােদিতন্ত্রের মনের গভীরে এই বাসনাই লুকিয়ে, বিজেপি তাই পারলে পুরাে সংবিধানই খারিজ করে দেয়। দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছতর করার জন্য শয়ে শয়ে প্রস্তাব জমা পড়ে আছে সরকারের কাছে, সেসব প্রস্তাব শিকেয় তুলে শুধু ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নিয়ে মেতে ওঠা মােদির আর একটি চালাকির নমুনা। কিন্তু চালাকির দ্বারা মহকার্য হয় কি?