• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

শেয়াল ও কাঁকড়ার গল্প

গর্তের থেকে কাঁকড়া শোনায়, ‘আমাদের গর্তে থাকাই ভালো। আমায় ভাল্লাগে না অমন চাঁদের আলো।’ —চাঁদের আলো ভালো লাগে না? এ কেমন কথা?

কাল্পনিক চিত্র

অমিয় আদক

বনের এক প্রান্তে খালের ধারে শেয়ালদের বাস। তারা ঝোপের আড়ালে থেকেই দিন কাটিয়ে দেয়। তারা আগে গাঁয়ের গেরস্থের হাঁস, মুরগি চুরি করেই খাবারের সমস্যা মিটিয়ে নিতো। এখন গাঁয়ের মানুষ হাঁস, মুরগির জন্য বেশ পাকাপোক্ত থাকার জায়গা বানায়। সেখান থেকে শেয়ালরা আর হাঁস-মুরগি চুরি করতে পারে না। দিনের আলোয় ভিটের আশেপাশে চরা মোরগ-মুরগি শিকার করাও খুব সমস্যার। সেই চেষ্টায় গিয়ে মারধোর খেয়ে বনে ফিরে আসতে বাধ্য। তাই শেয়ালরা আর গাঁয়ের দিকে দিনে রাতে কখনোই যায় না। এখন তারা বনের মধ্যেই ইঁদুর বুনো খরগোশ ইত্যাদি ধরে খায়। কাছাকাছি আখ চাষের বালাই নেই। তাই আখের রস খাওয়ার উপায়টাও নেই।

Advertisement

একটা শেয়াল খালের কিনারায় কাঁকড়ার গর্ত দেখতে পায়। কখনও এক দুটো কাঁকড়াকে গর্তের বাইরে দেখে। শেয়াল গর্তের কাছে আসার আগেই কাঁকড়ারা গর্তে লুকিয়ে পড়ে। একটা শেয়াল ভাবতে থাকে, কাঁকড়াদের কীভাবে গর্তের বাইরে আনা যায়? সে ঠিক করে কাঁকড়াকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে গর্তের বাইরে আনবে। তাই সেই শেয়াল গর্তের সামনে গিয়ে বলে, ‘ও কাঁকড়া সোনা, কেমন আছো? বাইরে এসো না। একটু গল্প করি। দেখো বাইরে কী সুন্দর চাঁদের আলো! কী মিষ্টি হাওয়া বইছে! এমন সময় কেউ গর্তের মধ্যে থাকে? তুমি এতো বোকা! তা কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’

Advertisement

গর্তের থেকে কাঁকড়া শোনায়, ‘আমাদের গর্তে থাকাই ভালো। আমায় ভাল্লাগে না অমন চাঁদের আলো।’
—চাঁদের আলো ভালো লাগে না? এ কেমন কথা?
—সবার সব ভালো লাগে না। তুমি চাঁদের আলোয় শুয়ে মিঠে হাওয়া খাও। কে তোমায় বারণ করেছে?
—দেখো বাপু কাঁকড়া, আমরা একই বনে থাকি। তুমি আমার প্রতিবেশী। তাই আমার ভালোলাগাটা তোমার সঙ্গে ভাগ করতে চাইছি।
—নাগো শেয়াল জেঠু, তুমি ভালোই বলেছো। কিন্তু আমার বেজায় জ্বর। ঠাণ্ডা হাওয়ায় আবার কাঁপুনি লাগবে। তাই বেরোতে ভরসা পাইনে। শরীরটাও বেজায় দুর্বল। শরীর ভালো হলে তখন নাহয় তোমার সঙ্গে গল্প করবো। এখন বড্ডো ঘুম পাচ্ছে। শুয়ে পড়েছি। একটু শান্তিতে ঘুমোতে দাও।
—না, আর ডাকাডাকি করবো না। তুমি ঘুমোও।

শেয়াল ভাবে, তার চালাকি কাঁকড়া ভালোই বুঝতে পেরেছে। তাই শরীর খারাপ শুনিয়ে গর্তে শুয়ে পড়েছে। আদপে সে বেরোতে ভয় পাচ্ছে। ভাবতে থাকে, কীভাবে কাঁকড়াকে গর্তের বাইরে আনা যায়।
পরের দিন সন্ধ্যায় শেয়াল আসে কাঁকড়ার গর্তের কাছে। কাঁকড়াকে ডাকাডাকি করে না। তার লেজটা কাঁকড়ার গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। শেয়ালের লেজ কাঁকড়ার গায়ে সুড়সুড়ি দেয়। কাঁকড়াও চুপচাপ শুয়ে থাকে। কোন শব্দও করে না। শেয়াল অনেকবার লেজ ঢোকায় এবং বের করে। তবুও কাঁকড়া কিছু বলে না। কোনও রাগ দেখায় না। শেয়াল তখন বেশ মিষ্টি করে বলে, ‘ও কাঁকড়া সোনা, আমি তোমার সঙ্গে খেলতে চাই। তুমি আমার লেজ ধরে উঠে এসো।’
—খেলতে চাইছো ভালো কথা। আমি তোমার লেজ কামড়ে উঠলে, তোমার লেজে ব্যাথা করবে। তাই আমি লেজ কামড়ে উঠতে চাই না।
—নাগো ব্যাথা করবে না। তুমি লেজের লোমে কামড় দাও আমি তোমায় ঠিক টেনে তুলে নেবো।
—ঠিক আছে। আমি তোমার লেজের লোমে কামড় দিচ্ছি। তুমি আমায় টেনে তুলে নাও।

কাঁকড়া লেজের লোমে কামড় দেয় তার সাঁড়াশির মতো দাঁড়া দিয়ে। তার সঙ্গে সেই দাঁড়াকে তার গর্তের দেওয়ালে খানিক ঢুকিয়ে দেয়। শেয়াল লেজ টানে। তার লেজের লোম কেটে যায়। কাঁকড়া আর উপরে ওঠে না। শেয়াল বুঝতে পারে, কাঁকড়া কিছু একটা কৌশলে তার লেজের লোম ছিঁড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। তবুও কাঁকড়া খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে না শেয়াল। আবার লেজ ঢোকায়। আবার একই ভাবে তার লেজের লোম কাটা পড়ে। লেজের টানাটানিতে তার বেশ কষ্ট লাগে। এমন কয়েকবার করার পরে তার লেজে বেশ যন্ত্রণা অনুভব করে। এবার সে কাঁকড়াকে বলে, ‘কী ব্যাপার বলো তো? তুমি উঠতে পারছো না কেন?’
—জানো শেয়াল জেঠু, আমি তো ক’দিন গর্তের বাইরে বেরোইনি। তাই বোধহয় গর্তের মুখটা খানিক ছোট হয়ে গিয়েছে। আমি আজ খেটেখুটে গর্তের মুখটা বাড়িয়ে নিই। নইলে জলেও নামতে পারবো না। আমার খুব খিদে পেয়েছে। আমি এখন গর্তের মুখ বড়ো করি। তুমি এখন এসো।
—ঠিক আছে। আমি আজ আসি। কাল আবার দেখা হবে।

পরের দিন শেয়াল আসে গর্তের সামনে। দেখে গর্তের মুখটা বেশ বড়ো। শেয়াল গর্তে উঁকি দেয়। দেখে গর্তের মধ্যে কাঁকড়া নেই। শেয়াল ভাবতে থাকে, চালাক কাঁকড়া নতুন গর্ত বানিয়ে সেখানে পালিয়েছে। কাঁকড়াটাকে খুঁজে বের করতেই হবে। সে খালের জলের কাছে যায়। তার তেষ্টা মেটানোর জন্য। গিয়ে দেখে, খালের জলের খানিক উপরে একটা গর্ত। খানিক জলপানের পর গর্তে উঁকি দেয়। দেখে কাঁকড়া গর্তের মধ্যে। শেয়াল জিজ্ঞাসা করে, ‘কীগো কাঁকড়া সোনা, কেমন আছো? বাইরে এসো। খানিক গল্প করি।’ কাঁকড়া কোনও উত্তর দেয় না। চুপচাপ বসে থাকে। আবার শেয়াল শুধোয়, ‘কী হয়েছে তোমার কাঁকড়া সোনা? তুমি বাইরে এসো। দুটো সুখ-দুঃখের কথা বলি।’

কাঁকড়া বলে, ‘শেয়াল জেঠু, কিছু মনে কোরো না। তুমি নিজেকে বেজায় চালাক ভাবো। ভেবেছো তোমার চালাকি আমরা বুঝতে পারি না? খুব বুঝতে পারি। বাইরে বেরোলেই অমনি কড়মড়িয়ে আমায় খেয়ে ফেলবো। অতো বোকা আমি নই।’
শেয়াল উত্তর না দিয়ে চুপিচুপি কেটে পড়ে।

Advertisement