• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

প্রহরশেষের রাঙা আলোয়

ধারাবাহিক উপন্যাস

কাল্পনিক চিত্র

তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

১৬.
সুরঞ্জনা

Advertisement

যেতে দাও যেতে দাও গেল যারা৷

Advertisement

একটি সুপ্রাচীন বিশাল দুর্গামণ্ডপ, তার উঁচু চাতালের উপর সাদা ফরাস বিছিয়ে শিল্পীদের বসার জায়গা৷ সামনে ফাঁকা মাঠে প্যান্ডেল বেঁধে শ্রোতাদের বসার জন্য চেয়ার পাতা৷ সব চেয়ার এর মধ্যে ভর্তি৷ অন্তত শ’সাতেক শ্রোতা৷ তিনদিকে আরও অনেকখানি ফাঁকা জায়গার উপর প্যান্ডেলের ছাউনি৷ সেখানেও অনেক শ্রোতা দাঁড়িয়ে৷

প্যান্ডেলের প্রবেশপথে বেশ বড়ো বড়ো করে লেখা, ‘বর্ষামঙ্গল’৷ অংশগ্রহণে সুরঞ্জনা বসু ও তমোনাশ গুপ্ত৷ বিকেল পাঁচটা বাজতে পাঁচ, আকাশের রং ধূসর৷ ছিটছিট বৃষ্টি৷ সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া৷

গাড়ি থেকে নেমে সুরঞ্জনা আগে, পিছনে তমোনাশের হাত ধরে নিয়ে আসছে সোমরূপ৷ তাদের দেখেই দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে শুরু হল মৃদু গুঞ্জন৷ সুরঞ্জনা লক্ষ্য করছিল তমোনাশের দিকেই সবার দৃষ্টি৷ দীর্ঘদেহী তমোনাশের সানগ্লাস পরা চেহারাটা নজর কেড়েছে দর্শক-শ্রোতাদের৷

গ্রিনরুমে ঢোকার আগে গায়ে দু-চার ফোঁটা বৃষ্টির জল লাগতে তমোনাশ উল্লসিত, বৃষ্টি পড়ছে।
সোমরূপ শুনতে পেয়ে বলল, সুরঞ্জনাদি, সত্যিই বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ আজ দুপুরেও রোদে পুড়ে যাচ্ছিল চারদিক৷ অনেকেই হাসাহাসি করছিল, ‘এই জ্যৈষ্ঠে বর্ষামঙ্গল’ তখন ভাবতেও পারিনি সুরঞ্জনাদির কথা এভাবে মিলে যাবে৷

সুরঞ্জনা বলল, শ্রোতার উপস্থিতি ভালোই৷
সোমরূপ বলল, আমরা সাতশো কার্ড বিক্রি করেছি, শুধু তাদের জন্য চেয়ার৷
একটা মফস্বল শহরে রবীন্দ্রসংগীত শুনতে এত মানুষের সমাগম দেখে সুরঞ্জনা বিস্মিত৷ তমোনাশকে বলতে তার মুখে ফুটে উঠল আলোর রেখা৷

মঞ্চে দুই শিল্পীর পাশে বসেছেন বাদ্যযন্ত্রের কুশীলবরা৷ তাঁদের সঙ্গে কিছু কথা বলে নিল সুরঞ্জনা৷ কী কী গান গাইবে, তার একটা রূপরেখা আলোচনা করে যথাযথ নির্দেশ দিল তাঁদের৷ তারপর সঞ্চালিকার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল শুরু করতে৷

এতক্ষণ ছিল ইলশেগুঁড়ির ধোঁয়া-ধোঁয়া ঝরন, এখন মাথার উপর ত্রিপল-ঢাকা আস্তরণের উপর আকারে বাড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা৷ যারা প্যান্ডেলের বাইরে দাঁড়িয়েছিল তারা অনেকেই ভিতরে ঢুকে আসছে৷ কেউ রুমাল দিয়ে ঢাকছে মাথা৷ কেউ আবার নির্বিকারভাবে ভিজছে, যেন এই দাবদাহের মরসুমে সামান্য বৃষ্টিতে ভেজাও আরামের৷

সঞ্চালিকা রিমিকা চ্যাটার্জি স্থানীয় বাসিন্দা, সাতাশ-আঠাশের মতো বয়স, দেখতে বেশ সুন্দরী, সেজেও এসেছে খুব৷ অমনি মাইক্রোফোন টেনে নিয়ে বলতে শুরু করল, সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমরা শুরু করতে চলেছি আজকের অনুষ্ঠান ‘বর্ষামঙ্গল’৷ জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়ে ‘বর্ষামঙ্গল’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি শুনে অনেকেই প্রকাশ করেছিলেন ঘোর বিস্ময়৷ কিন্তু রবীন্দ্রসংগীতের কিংবদন্তী শিল্পী সুরঞ্জনা বসু আমাদের বলেছিলেন, তিনি বর্ষার গান গাইলে বৃষ্টি নামবেই৷ আমরাও কিন্তু বিশ্বাস করতে পারিনি তাঁর কথা৷ কিন্তু কথাটা এভাবে সত্য হয়ে উঠবে তা আমাদের ভাবনার বাইরে ছিল৷ এরকম একজন সংগীতশিল্পীকে আমাদের মধ্যে পেয়েছি, তা আমাদের সৌভাগ্য৷ তাঁর সঙ্গে যিনি এসেছেন, শিল্পী তমোনাশ গুপ্ত রবীন্দ্রসংগীতের একজন উদীয়মান শিল্পী, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর নাম সুবিদিত সারা রাজ্যে৷ এই দুই শিল্পী আজ আপনাদের শোনাবেন একের পর এক বর্ষার গান৷

রিমিকা দে মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিতে সুরঞ্জনা চালু করল তার সামনের মাইক্রোফোন৷ বলল, আপনারা জানেন, শান্তিনিকেতনে প্রতি বছর ‘বর্ষামঙ্গল’ উৎসব পালিত হত রবীন্দ্রগান দিয়ে৷ সেই উৎসবের জন্য প্রতি বছর নতুন-নতুন গান লিখে দিতেন কবি৷ বর্ষামঙ্গল উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের কলাভবন সাজিয়ে তোলা হত বর্ণময় করে৷ পদ্মপাতায় ও পদ্মফুলে সাজানো হত মঞ্চ৷ গোটা অঙ্গন সৌন্দর্যায়িত করা হত রকমারি আলপনা দিয়ে৷ সাদা খড়িমাটি-গোলা জলে কত রকমের ফুল, লতাপাতা এঁকে সুন্দর করে তুলত পরিবেশ৷ চারিদিক ভরিয়ে দেওয়া হত সুগন্ধি ধূপের ধোঁয়ায়৷ সন্ধের পর যখন আশ্রমবাসীরা আসতেন একে-একে, প্রত্যেকের কপালে দেওয়া হতো চন্দনের ফোঁটা, হাতে দেওয়া হতো একটি করে পদ্ম ও বর্ষার মাঙ্গলিক প্রতীক৷ সেই উৎসবে গাওয়া হতো এমন একটি বাউল সুরে ও দাদরা তালের গান দিয়ে শুরু করছি আমাদের অনুষ্ঠান :
পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে৷

কবির মনের এক উন্মত্ত প্রকাশ৷ যখন বৃষ্টিভেজা দিনে হাওয়া বইছে পাগলের মতো, তখন পাগল–পাগল করছে কবির মনও৷ চেনাশোনার বাইরে যেখানে কোনও পথ নেই সেখানেই কবির মন ছুটে চলেছে অকারণে৷
দু’কলি গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি ঘিরে ধরল চারপাশ৷ সুরঞ্জনার কণ্ঠেও তার প্রকাশ৷ যারা বাইরে ছুটে যাচ্ছে তারা আর কোনওদিনই ফিরবে না ঘরে৷ বরং যারা বন্ধ ঘরের দেওয়ালের মধ্যে আছে, তারা দেওয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসবে বাইরের দিকে৷ এই বৃষ্টিনেশা ভরা সন্ধ্যাকালে বলরামের শিষ্যদের মতো কবিও তাঁর মনের ইচ্ছেসঙ্গীদের নিয়ে মাতালদের মতোই নাচবেন তাঁর স্বপ্নকে ঘিরে৷ কবি আজ যা না-চাইবার তাকেই চাইছেন, আবার যা না-পাওয়ার তাকেই পাচ্ছেন৷ কবি উপলব্ধি করছেন, আজ অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটেও কিছু পাবেন না, তাই নিজেকে একাত্ম করছেন মাতাল হয়ে ওঠা আনন্দের সঙ্গে৷

সুরঞ্জনা যেখানে শেষ করেছে, তারপর থেকে শুরু করল তমোনাশ, এই গানটি বাংলার বর্ষার এক শাশ্বত চিত্র৷ বৃষ্টির গান মানেই জীবনের এক চিরন্তন ছন্দ৷ আপনারা শুনছেন বাইরে রিমঝিমিঝিম বৃষ্টির ধারাপতনের ছন্দ৷ এরকম বৃষ্টির দিনেই এরকম গান গাওয়া ও শোনার আরাম৷ ইমন রাগের এই গানটি শুনুন:
‘নীলনবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে৷
ওগো আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে৷’
এখন জ্যৈষ্ঠ মাস, আষাঢ় নয়, তবু নববর্ষার মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ, এখনই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামছে, কেউ আর বাইরে বেরিয়ো না৷ ওই দেখো, বন্ধ হয়ে গেছে খেয়া পারাপারও৷ সূর্যাস্তের ঢের দেরি, তার আগেই নেমে এসেছে ঘোর আঁধার৷
তমোনাশের গান শেষ হলে সুরঞ্জনা:
‘বৃষ্টিশেষের হাওয়া কিসের খোঁজে বইছে ধীরে ধীরে…’
তমোনাশ গাইল: ‘ওগো সাঁওতালি ছেলে,
শ্যামল সঘন নববরষায় কিশোর দূত কি এলে…’
সুরঞ্জনার কণ্ঠে: ‘কদম্বেরই কানন ঘেরি আষাঢ় মেঘের…’
তমোনাশ গাইল: ‘বাদল মেঘে মাদল বাজে গুরু গুরু গগন–মাঝে’
তারপর সুরঞ্জনা আবার: এই গানটি গাওয়া হয়েছে ইমনকল্যাণ রাগে, তাল দাদরা৷ গানটি কবির প্রিয় ঋতু আষাঢ়ের, এই গানের রাগ কিন্তু মল্লার বা মেঘ নয়, ইমনকল্যাণ৷ ইমনের সঙ্গে মিষ্টি করে শুদ্ধ মধ্যম বা শুদ্ধ মা লাগিয়ে দিতে পারলে ইমনকল্যাণ হয়ে যায়৷ ইমনকল্যাণের স্পর্শসিক্ত এই গানটিতে শুদ্ধ মধ্যমের ব্যবহার এক গভীর নান্দনিক বোধ শক্তির প্রতিফলন৷
‘আষাঢ়সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, গেল রে দিন বয়ে
বাঁধন-হারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে৷৷

এই যে, এখন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে ঝিরঝির করে, দিনের শেষে ঘনিয়ে এসেছে সন্ধ্যা, বৃষ্টিধারা ঝরছে বাঁধনহীন৷ ঠিক এমন অমোঘ মুহূর্তে কবি একা বসে কী যেন ভাবছেন৷ বৃষ্টির ঝরনের মধ্যে কবির হৃদয় জুড়ে এক অদ্ভুত শূন্যতা৷ এই শূন্যতার মধ্যে বৃষ্টিভেজা বাতাস এসে কী যেন কথা বলে যাচ্ছে জুঁইফুলের বনে৷ তার ঢেউ হৃদয়ে এমন ধাক্কা দিচ্ছে যে, তার কুলকিনারা এখন অধরা৷ ভিজে জুঁইয়ের সৌরভে সিক্ত হয়ে উঠছে হৃদয়৷ এমন অঝোর বৃষ্টির দিনে আঁধার রাতের প্রহরগুলি কোন সুরে ভরিয়ে তোলা যায় আজ আকুল হয়ে তিনি খুঁজছেন তাঁর কোন ভুলে সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন।

আপনারা জানেন এই গানটি বহু বছর আগে রেকর্ড করেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়৷ তাই গানটি আমার গলায় না শুনে শুনুন তমোনাশ গুপ্তর কণ্ঠে৷

তমোনাশের গান শেষ হলে মাইক্রোফোন অন করল সুরঞ্জনা, বলল, এবার আমি গাইছি ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’৷ বর্ষা রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে প্রিয় ঋতু, এই সময়কালে কবি পরতেন গাঢ় নীল রঙের জোব্বা, আকাশে মেঘ দেখলে খুশি হয়ে উঠতেন শিশুর মতো৷ বলতেন, ‘বর্ষা হল সৃষ্টির সময়কাল, প্রকৃতিতে যেই আষাঢ় আসে, পুরাতন হৃদয়ে সঞ্চার হয় নতুনের৷ কালিদাসের মেঘদূতের সঙ্গে এই গানটির একটি যোগসূত্র আছে৷’ আষাঢ়স্য প্রথম দিবস এলেই তাই কবি পুলকিত হয়ে ওঠেন এক অসীম আনন্দে৷
বাইরে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে, ভিতরে শুধু বৃষ্টির গান৷ তমোনাশ আষাঢ় থেকে চলে গেল শ্রাবণে, গাইল: ‘আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে/ দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে’৷ পরের গান সুরঞ্জনার৷ পিলু রাগের ও কাহারবা তালের গানটি শান্তিনিকেতনের বর্ষামঙ্গলের৷
‘যেতে দাও যেতে দাও গেল যারা৷
তুমি যেয়ো না, তুমি যেয়ো না,
আমার বাদলের গান হয়নি সারা৷৷’

হে বৃষ্টির দেবতা, যারা চলে যেতে চাইছে, তারা চলে যাক, কিন্তু তুমি যেয়ো না৷ আমি এখন বৃষ্টির গান গাইছি, সেই গান এখনও তো শেষ হয়নি৷

সমস্ত কুটিরের দরজা বন্ধ, নিভৃত রাত্রির অন্ধকারে অস্থির অতন্দ্র হাওয়ায় কেঁপে উঠছে বনের আঁচল৷ প্রদীপ নিবছে তা নিবুক, কিন্তু তোমার স্পর্শ যেন থাকে আঁধারের মধ্যেও৷ আমার গানের তালের সঙ্গে শব্দ হোক তোমার হাতের কঙ্কনের৷ যেমন নদীর ছলোছলো শব্দের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে শ্রাবণের ধারা৷
সুরঞ্জনার গান শেষ হলে এবার দ্বৈতকণ্ঠে গান:
মধুগন্ধে ভরা মৃদু-স্নিগ্ধছায়া নীপ কুঞ্জতলে৷

শেষ গানটি গাওয়া হলে তুমুল হাততালি৷ তমোনাশ আস্তে আস্তে বলল, সুরঞ্জনাদি, শ্রোতারা খুব উপভোগ করছেন মনে হচ্ছে৷

তখন বৃষ্টির ছাঁট কমে এসেছে৷ সোমরূপ তাদের দু’জনকে গাড়ি করে পৌঁছে দিল বাংলোর সামনে৷ বলল, বিষাদ আপনাদের ডিনার তৈরি করে রেখেছে৷ কাল সকালে ব্রেকফাস্টের পর এই গাড়ি আপনাদের পৌঁছে দেবে কলকাতায়৷

সোমরূপ চলে গেলে তমোনাশ বলল, সুরঞ্জনাদি, তুমি বলছিলে বাংলোর কাছেই ইছামতী নদী৷ চলো একবার ঘুরে আসি নদীর কাছে৷

রাত্রি তখন দশটার মতো৷ এই মুহূর্তে বৃষ্টির ধরন৷ সুরঞ্জনা তাকায় তমোনাশের দিকে৷ তার চোখে দৃষ্টি নেই, অথচ—৷ তমোনাশ বলল, তোমার চোখ দিয়ে দেখব, সুরঞ্জনাদি৷

বাতাসে ঠান্ডা হাওয়া৷ তমোনাশের হাত ধরে নিয়ে চলল অদূরে ইছামতীর দিকে৷ স্ট্রিট লাইটের সামান্য আলোয় পথ চলছে দু’জনে৷ এদিকটা এখন ঘোর নির্জন৷ আকাশ ঘন কালো৷ সামান্য মেঘ এখন ফুরসত খুঁজছে আরও একবার বৃষ্টির তুলি বুলিয়ে দেবে কি না৷ আকাশে চাঁদ বা তারা নেই, তবু ইছামতীর জল চিকচিক করছে হয়তো রাস্তার আলোর প্রতিফলনে৷

একটু পরে বাংলোয় ফিরে ডাইনিং টেবিলে বসে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়ার পর বিষাদ সব গুছিয়ে চলে গেল তার নির্দিষ্ট ঘরে৷

সুরঞ্জনা বলল, এবার তোমার ঘরে ঢুকে পড়ো৷ খুব টায়ার্ড লাগছে৷ সারাদিন যা গেল আজ!
বলে তার হাত ধরে নিয়ে গেল তমোনাশের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে৷ তমোনাশ বলল, আর একটু বোসো, সুরঞ্জনাদি৷
সুরঞ্জনা বলল, না, আর একটুও নয়৷ বিছানা করা আছে৷ এবার পোশাক বদলে শুয়ে পড়ো৷ এই নাও তোমার ব্যাগ৷

তমোনাশ ব্যাগ নিতে আগ্রহী হল না, হঠাৎ দুই হাতে সজোরে জড়িয়ে ধরল সুরঞ্জনাকে, তারপর ঝুঁকে পড়ল তার ঠোঁটের উপর৷

সুরঞ্জনা চেষ্টা করল ছাড়িয়ে নিতে, কিন্তু তমোনাশের গায়ে ভীষণ জোর, তবু কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে ছাড়িয়ে নিয়ে ঠেলে দিল তমোনাশকে, তমোনাশ গিয়ে পড়ল বিছানার উপর৷ একটু দূরে সরে এসে সুরঞ্জনা বলল, ছিঃ৷ তমোনাশ তখন বিছানায় উপর বসে হাঁপাচ্ছে৷

সুরঞ্জনা বলল, তমোনাশ, আমার এখন একজনই আরাধ্য, তিনি রবীন্দ্রনাথ৷ আমার মনপ্রাণ এখন সবই তাঁর কাছে সমর্পিত৷

(ক্রমশ)

অলঙ্করণ: সোময়েত্রী চট্টোপাধ্যায়

Advertisement