ছন্দ চায়
তনুজা চক্রবর্তী
কলমি শাকে রসুন ফোড়ন
জিভটা যেন বিজয় তোরণ!
খেজুর গুড়ে গরম রুটি
অঙ্ক থেকে পেতাম ছুটি।
মাঘের শীতে দুধের পুলি
শিশুর মুখে প্রথম বুলি।
ইলিশ ভাপা গরম ভাতে
মেঘের খেলা চাঁদনি রাতে।
এসব আর ভাবে না দাদু
ভাবছ কেউ করেছে জাদু?
কেবল আনে অতীত তুলে
স্মৃতির ঘরের আগল খুলে।
লোভটা আছে সতেরো আনা
কুয়োর বুকে কচুরিপানা।
লুকিয়ে কিনে খেতেই পারে
কে দেবে বাধা আটকে তারে?
চোখের দেখা দেখে সে খালি
এখন ওরা চোখের বালি।
মিষ্টি রোগী নন্দ রায়
বাঁচার মাঝে ছন্দ চায়।
বল তো দেখি
কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়
বল তো দেখি বর্ষা এলেই
কেন হবে বাঁধ সারাই?
ঘটনাটা বোঝার জন্য,
আয় ঘিলুটা আজ নাড়াই!
সারা বছর হচ্ছে হবে
গয়ংগচ্ছ ফাইল পাহাড়,
বন্যা এলেই তৎপরতা
বাঁধ বানালে লাভটা কার?
বাঁচবো কি আর ডুব-জলেতে!
তাদের ভাবার সময় কই?
যাচ্ছে জমে টাকার পাহাড়
গাছে তুলে কাড়ছে মই!
আমাদের সব কান্নাগুলি
বন্যার জল দিচ্ছে ঢেকে,
লুটতে হবে, খুশিতে তাই
মুখ, মুখোশে নিচ্ছে এঁকে!
বল তো তবে কী করা যায়?
এমনি করেই মরবো তবে!
মৃতদেহের উপর তখন,
ক্ষতিপূরণ মিটিং হবে?
রঙের মেলা
উৎপলকুমার ধারা
মাঠের মাঝে হলুদ পাখি
সর্ষেফুলে রঙ ভরেছে
সান্ধ্যকালে রাতজোনাকি
হলুদবনে উঠছে নেচে।
রঙ লেগেছে পলাশপুরে
রঙ ঝরে যায় নীল আকাশে
নাচছে রঙিন স্বপ্নজুড়ে
পেরজাপতি ফুলের কাছে।
মাখছে রে রঙ কাগজঘুড়ি
মেঘের ফাঁকে রঙের মেলায়
রঙিন কাপড় চরকাবুড়ি
বুনছে রে ওই সন্ধেবেলায়।
আর লাগে রঙ টুকটুকে লাল
কৃষ্ণচূড়া শিমূলফুলে
সবার মনে বসন্তকাল
রঙ ঢেলে দেয় আগল খুলে।
নতুন বছর নেই তো দূরে
আসছে নানান রঙিন সাজে
তাই বুঝি তাই মধুর সুরে
সবার ঘরে শঙ্খ বাজে।
আকাশের চিত্র
সঞ্জয় কর্মকার
লোকটা যখন দু’চোখ তুলে তাকায়
আকাশের ওই অনেকখানি ফাঁকায়
কী যে দেখে কেউ জানে না তাহা
মুগ্ধ হয়ে লোকটা বলে আহা!
আকাশে নীল রঙ দিল কে গুলে?
মেঘও একটা এসেছে পথ ভুলে!
পাখির ঝাঁকও উড়ছে ডানা মেলে
সবাই দেখো সমস্ত কাজ ফেলে!
সবাই বলে আমরা কেজো লোক
আছে কি আর তেমন দেখার চোখ!
তুমি হলে শিল্পী মানুষ, জানি
যা দেখে ওই তোমার দৃষ্টিখানি
তেমন দেখার চোখ আমাদের নেই
আকাশ থাকুক আকাশপারেতেই!
সবাই যখন এই কথাটা জানায়
লোকটা তখন চিত্র একটা বানায়
ভিড়টি জমায় সবাই একে একে
সবাই মিলে মুগ্ধ হয়ে দেখে!
নামতা শেখা
তীর্থঙ্কর সুমিত
স্যার বলেন, আয় কাছে আয়
ব্যাপারখানা শোন
নামতাগুলো ভীষণ সোজা
সঠিকভাবে গোণ।
একটু ভুল হলেই হবে
সব্বোনাশের কল
মাথার ঘিলু উল্টে খাবে
বাঁদরগুলোর দল।
ভূতের নাচন
বেণীমাধব সরকার
তালতলাতে ভূতের নাচন
নিশি রাতে চলে
ল্যাংড়া ভূতো খ্যাংরা ভূতো
নাচছে দলে দলে।
মামদো ভূতো হামদো ভূতো
স্কন্ধকাটা ভূতো
বাঁশের মতো লম্বা পায়ে
হঠাৎ মারে গুঁতো।
কাকতাড়ুয়ার মতোই আবার
পেত্নি নাচে সাথে
যায় দেখা তায় শনিবারের
অন্ধকারের রাতে।
শ্মশান ঘাটে মত্ত নাচে,
মাথায় আগুন জ্বলে,
হাতে ওদের হাড়ভোজালি
মুণ্ড মালা গলে।