• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

আইসক্রিম ও বুম্বার অভিযান

ছোটোদের ধারাবাহিক উপন্যাস (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

কাল্পনিক চিত্র

সুতপন চট্টোপাধ্যায়


গেটে দুপুরে প্রায় দশটি ইস্কুলের বাস আসে আরাত্রিকা আবাসনে।। সকালে ছাত্র তুলতে তুলতে চলে যায়, দুপুরে নামিয়ে ফিরে যায়। এই নিয়ম। নন্দিনী চাপা গলায় বলল, নিয়মমতো বুম্বা বাড়ি এসেছিল। দুপুরের খাবার খেয়ে পিঠে ব্যাগ ও একাটা জলের বোতল, একটা ছাতা ভরে বেরিয়ে গেছে। আসার সময় আশে পাশে পার্কেও দেখে এসেছি। তাই একটু দেরি হল।

Advertisement

থানার মধ্যে একটা দম বন্ধ করা পরিবেশ। পুলিশ, মহিলা পুলিশ নিঃশব্দে চলাফেরা করছে। থানার অফিসার হয়তো খেতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে অতনু ও নন্দিনীকে দেখে বল্লেন, কী ব্যাপার?

Advertisement

নন্দিনী তাঁকে বিস্তারিত ঘটনাটা বললে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বাড়ির আশেপাশে খুঁজেছেন? অনেক সময় কাছাকাছি পার্কে খেলা করতে যায়। বাচ্চা তো!

নন্দিনী বলল, সব পার্কে খুঁজেছি। কোথাও নেই। অফিসার বললেন, আর কোথায় যেতে পারে বলে আপনাদের ধারণা?

নন্দিনী বলল, কিছুই বুঝতে পারছি না। অনেক কিছুই মনে হচ্ছে। কিন্তু স্কুল থেকে ফিরে কোনোদিন কোথাও যায়নি। বিকেলে খেলতে যায় পাশের মাঠে। আজ সে যায়নি।
কোন বদ সঙ্গ?
অতনু বলল, না।
এই বয়সের বাচ্চারা খুব অ্যাডভেঞ্চার করতে ভালোবাসে। সেই মেন্টালিটির বাচ্চা নয় তো?
অতনু বলল, তেমন কিছু লক্ষ করিনি।
ছেলেটির ডাকনাম, ভালো নাম, ঠিকানা, বয়স একটা কাগজে লিখে দিন।
আর দাঁড়ান, ডায়েরিতে একজন

এফ-আই-আর ভাল করে লিখুন, যাতে আমাদের ইনভেস্টিগেশানে সুবিধে হয়। নন্দিনী লিখছিল। অফিসার সেই সময়ে মধ্যে দিল্লি স্টেশনে কাউকে ফোন করে বললেন, দশ-এগারো বছর বয়সের একটা ছেলেকে পাওযা যাচ্ছে না। মিসিং। স্টেশন চত্বরে খেয়াল রাখতে। মাইকে ঘোষণা করে দিতে অনুরোধ করছি। বলে নাম ও ঠিকানা দিয়ে দিলেন। অতনুর দিকে তাকিয়ে বললেন,

আমি সব থানায় মেসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছি। চেষ্টার কোনও খামতি হবে না। রিল্যাক্স। খুব একটা দূরে যেতে পারবে না এই অল্প সময়ে।

আরাত্রিকা আপার্টমেন্টের মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে সাতটা পার্ক। বাড়ি ফিরে একে একে সব পার্ক তন্নতন্ন করে আবার পবনকে খুঁজতে বলল অতনু। বাডির ভিতর আলো, বাতাস সব থম মেরে গেছে। দম বন্ধ করা অচেনা পরিবেশ। বাইরে কার্নিশে একটা কাক ক্যা ক্যা করে ডাকছে কারোর খেয়াল নেই। অন্য দিন হলে তাড়িয়ে দেয় অতনু। অতনুর মা গম্ভীর মুখে অসহায় অতনুর ও নন্দিনীর দিকে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পরে খবর পেয়ে অতনুর অফিস কলিগ সার্থক গোয়েল এসে হাজির। যদি কোনও দরকারে লাগে! পবন কিছুক্ষণ পরে ফিরে বলল, কোথাও নেই বিবিজী। আমি সব পার্ক খুঁজে এসেছি। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে নন্দিনী পবনকে বলল, চল আমার অফিসে চল। নন্দিনী পেশায় সাংবাদিক। অফিসের কার্ড দেখিয়ে তারা সব বাধা পেরিয়ে যে কোনও জায়গায় ঢুকে যেতে পারে।

গাড়িতে উঠতে উঠতে নন্দিনী বলল, খোঁজ পেলে আমাকে ফোনে জানিও। পবন আমার সঙ্গে আছে, চিন্তা নেই। আমি অফিস থেকে স্টেশনে যাব।

গাড়িটি আবাসন থেকে চলে গেলে পাশাপাশি ফ্ল্যাটের লোকজন অতনুর ফ্ল্যাটের সামনে এসে হাজির হতে লাগল। জনে জনে জানতে চাইছে। বর্ণনা করতে ইচ্ছে করছে না অতনুর। তা সত্ত্বেও বলতে হচ্ছে। বুদ্ধি করে যে থানায় ডায়েরি করে এসেছে সেই খবরে সবাই খুব আশ্বস্ত। যেন খুব বুদ্ধিমানের কাজ। যেন দেখা যাবে বুম্বাকে পুলিশ হাত ধরে বাড়ি পৌঁছে দিতে আসছে এক ঘন্টার মধ্যে!

কাগজে, টেলিভিশনে এমন কত ঘটনার বিবরণ বেরোয়, কিন্তু আচম্বিতে তাঁর বাড়িতে ঘটে যাবে কল্পনার অগোচরে ছিল অতনুর। ঘটনাটা এমনি আচমকা যে, সে ভিতরে ভিতরে বিধ্বস্ত এখন। সে ঠিক বুঝতে পারছে না, কী করা উচিত। যদি কোথাও যেতে ইচ্ছে ছিল বুম্বা তো তাকে বা নন্দিনীকে বলতে পারত। মায়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। একবার মনে হচ্ছে, মায়ের সঙ্গে কি বুম্বার কোনও মতবিরোধ হয়েছে? রাগারাগি হয়েছে? তাই রাগ করে চলে গেছে? ভয় দেখাতে চাইছে? হয়ত ঘন্টা খানেক পরে ফিরে আসবে?

ইস্কুল থেকে ফেরার সময় তার পরনে ছিল ইস্কুলের পোশাক। আর পিঠে একটা বই, খাতা, টিফিনবাক্স ভর্তি ব্যাগ। ক্লাস সেভেনে পড়ে। ইস্কুলের লাইব্রেরি থেকে গল্পের বই এনেও পড়তে দেখেছে অতনু। সে যে প্রতিবছর ক্লাসে দারুণ রেজাল্ট করে তা নয়, তবে খারাপও করে না। অতনুর একটা বিশ্বাস আছে, পৃথিবীতে মাঝারি মাপের ট্যালেন্টরাই জীবনে বেশি উন্নতি করে। নন্দিনীর চাহিদা অন্য। সে চায় বুম্বা, যাই করুক নিখুত করুক। যাই শিখুক, নির্ভূল শিখুক। ফাঁকি দিতে আর মিথ্যে অজুহাত দিতে যেন না শেখে। তাতে সে রেসাল্ট ভাল না করলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু বুম্বা কী চায়, আমরা কি জানার চেষ্টা করেছি? কেন মনে হল এমন কথা অতনুর? কোনও খবর আসছে না। এর মধ্যে অতনুর অফিস থেকে সহকর্মী তিনজন এসে গেছে। তারাও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে করছে। একজন জিজ্ঞেস করল, স্যার, সম্প্রতি কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলেন?

(ক্রমশ)

Advertisement