• facebook
  • twitter
Monday, 10 November, 2025

গুরু স্মরণে সুর-মুর্চ্ছনার অনুষ্ঠান

সুরমুর্চ্ছনার আয়োজনে গুরু পণ্ডিত এ কানন ও বিদুষী মালবিকা কানন মেমোরিয়াল মিউজিক ফেস্টিভাল ২০২৪ হয়ে গেল দক্ষিণ কলকাতার উত্তম মঞ্চে।

সুরমুর্চ্ছনার আয়োজনে গুরু পণ্ডিত এ কানন ও বিদুষী মালবিকা কানন মেমোরিয়াল মিউজিক ফেস্টিভাল ২০২৪ হয়ে গেল দক্ষিণ কলকাতার উত্তম মঞ্চে। উল্লেখ্য যে, অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল জুন মাসের ২২ তারিখে। কিন্ত হলের যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ওইদিন মঞ্চস্থ করা সম্ভবপর হয়নি। যে কারণে, এবার শীতের মরশুমে (গত ডিসেম্বরের ২১ তারিখ) করা হয়েছিল। তাঁর গুরুজী ও গুরুমার স্মরণে প্রতি বছর অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে থাকেন কিরানা ঘরের বিশিষ্ট কণ্ঠসংগীত শিল্পী ও সুর-মুর্চ্ছনা (কলকাতা ও ইউ এস এ) সংস্থার প্রাণপুরুষ পণ্ডিত সঞ্জয় ব্যানার্জি। বহু বছর ধরেই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। আর, ফিবছর গুরুমা ও গুরুজীর স্মরণে দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন; যার একটি করেন নিজ শহর কলকাতায়, অপরটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল গুরুজি ও গুরুমার প্রতিকৃতি এবং প্রয়াত ভুবনখ্যাত তবলাসম্রাট ওস্তাদ জাকির হোসেনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ। পণ্ডিত সঞ্জয় ছাড়াও সংস্থার অপর কর্মকর্তা শম্পা চন্দ্র, এদিনের গাইয়ে সুমৌলিকা সরকার প্রমুখজন এই কাজটি সম্পন্ন করেন। এরপর শুরু হয় গান-বাজনার অনুষ্ঠান।

পণ্ডিত সঞ্জয় ব্যানার্জির কাছে তালিম নেওয়া সুমৌলিকা সরকারের কন্ঠসংগীত দিয়ে শুরু হয় অপরাহ্নের অনুষ্ঠান। পরিবেশনে ছিল রাগ মধুবন্তী; বিলম্বিত ‘তোরে গুণ গান গাউ’ (একতাল), দ্রুত ‘কাহে মান করো সখীরি অব’ (ত্রিতাল)। শেষ করেন একটি বন্দিশী ঠুংরি (মিশ্র তিলং) ‘মন হরণ চাল তুমরি’ সহকারে। তরুণ এই শিল্পীর সহযোগিতায় ছিলেন— বিভাস সাংহাই (তবলা) ও অনির্বাণ চক্রবর্তী (হারমোনিয়াম)। এরপর ছিল ইমদাদখানি ঘরের বিশিষ্ট সেতার বাদক পণ্ডিত অসীম চৌধুরীর বাজনা। চয়ন করেছিলেন রাগ পটদীপ। তিনটি গত পরিবেশন করেন— বিলম্বিত (ঝাঁপতাল), মধ্যলয় (একতাল) ও দ্রুত (ত্রিতাল)। তবলায় ছিলেন শুভজ্যোতি গুহ। বিশিষ্ট কন্ঠসংগীত শিল্পী পণ্ডিত শান্তনু ভট্টাচার্যের শাস্ত্রীয় উপস্থাপনা ছিল এরপর। রাগ পুরিয়া-ধানেশ্রী আধারে ছিল তার উপস্থাপনা। বিলম্বিত— ‘চন্দ্রা জগদাভে’ (এটি তার গুরুমা বিদুষী মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা) (ঝুমরা), মধ্যলয় ‘সিমেরু তোরে হে মোরে প্রভু’ (রচনা-ইব্রাহিম) (ত্রিতাল), এবং ‘তুহী জগ পালন হারে’ (রচনা— গুরু পণ্ডিত প্রসূন ব্যানার্জী) (ত্রিতাল)। পরে শোনালেন ঠুংরি ‘দেখে বিনা বেচ্যেন’। অনুভবী এই পর্বের সহযোগিতায় ছিলেন— পরিমল চক্রবর্তী (তবলা) ও রূপশ্রী ভট্টাচার্য (হারমোনিয়াম)।

সেনিয়া-শাহজাহানপুর ঘরের বিশিষ্ট সরোদবাদক প্রত্যুষ ব্যানার্জীর বাজনা ছিল এরপর। অল্প আওচার, তারপর শোনালেন খেয়াল অঙ্গের বিলম্বিত ও দ্রুত গত, যা ছিল ত্রিতালে বাঁধা। পরে ছিল রাগ নন্দ আধারিত আরেকটি গত। অত্যন্ত সুখানুভূতি মিশ্রিত এই পর্বে তবলায় ছিলেন পণ্ডিত তন্ময় বোস। অনুষ্ঠানের সমাপন লগ্নের জন্য নির্ধারণ করা ছিল বেনারস ঘরের কিংবদন্তি তবলাবাদক পন্ডিত কুমার বোস ও ভ্রাতুষ্পুত্র রোহেন বোসের তবলাবাদন। বিলম্বিত ত্রিতালে পারম্পরিক উঠান দিয়ে শুরু করেন; আওচার, ছন্দ, কায়দা, রেলা, কিছু কম্পোজিশনস্ এবং শেষে উপজের কয়েকটি তেহাই। তাঁকে যথাযোগ্য সহযোগিতা করেন রেহান। হারমোনিয়ামে নগমা রাখেন হিরন্ময় মিত্র। এর আগে এবছরের পণ্ডিত এ কানন ও মালবিকা কানন মেমোরিয়াল পুরস্কার তুলে দেওয়া হল পণ্ডিত কুমার বোসের হাতে। শাস্ত্রীয় সংগীত জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কাজটি সুসস্পন্ন করেন পণ্ডিত সঞ্জয়। ব্যানার্জি।