ট্যাংরা কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর বয়ান দিল কিশোর প্রতীপ দে। শিশু সুরক্ষা কমিশনের পরামর্শদাতা অনন্যা চক্রবর্তী এবং অন্য প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার এনআরএস হাসপাতালে প্রতীপের সঙ্গে দেখা করেন। কমিশনের সামনেই মা, কাকিমা এবং দিদির মৃত্যু নিয়ে মুখ খোলে প্রতীপ। ওই কিশোরের দাবি, ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খাওয়ার পরও কিছুই হয়নি তার। কাকা প্রসূন তাকে অন্য উপায়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন। তার মুখে বালিশ চেপে ধরেন কাকা। মরে যাওয়ার ভান করে বেশ কিছুক্ষণ পড়েছিল সে। সেই কারণেই প্রাণে বেঁচে গিয়েছে।
অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, প্রতীপ জানিয়েছে, ওর কাকাই মা, কাকিমা এবং দিদিকে খুন করেছেন। যেভাবে ওর মা ও কাকিমাকে মারা হয়েছে, সেভাবে ওকেও মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাকিদের মতো ওকেও ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খাওয়ানো হয়। পরে বালিশ চাপা দিয়ে প্রতীপকে মারার চেষ্টা করেন কাকা। শরীরচর্চা করায় প্রতীপের শক্তি বেশি ছিল। সে শ্বাস বন্ধ করে মড়ার ভান করে পড়েছিল। কাকা ভেবেছিলন প্রতীপ মারা গিয়েছে। তখন ওকে ছেড়ে দেন। যোগব্যায়ামের অভ্যাস থাকার কারণে শ্বাস বন্ধ করে রাখার পদ্ধতি ওই কিশোরের জানা ছিল।
এদিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর প্রতীপ কোথায় থাকবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি কমিশন। শিশু সুরক্ষা কমিশন চাইছে, হোমে না পাঠিয়ে নাবালককে কোনও আত্মীয়র কাছে রাখতে। কিন্তু তাতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। সূত্রের খবর, কোনও আত্মীয় তার দায়িত্ব নিতে চাননি। তবে ভদ্রেশ্বরের এক পরিবার তাকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে। প্রসূনের শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে নাবালককে রাখতে পারে কমিশন। সেক্ষেত্রে ওই নাবালক সাবালক হওয়া পর্যন্ত মাসোহারা পাবেন তাঁরা। সরকারের তরফেই টাকা দেওয়া হবে।
পারিবারিক ব্যবসায় যে মন্দা দেখা দিয়েছে, কয়েক মাস আগেই তা টের পেয়েছিল প্রতীপ। দাবা খেলায় পারদর্শী ছিল সে। তাই দাবা খেলেই পরিবারকে সাহায্য করার কথা ভেবেছিল। প্রতীপের দাবি, সপরিবার মৃত্যুর পরিকল্পনা তার কানে আসে। বাড়ির বড়রা এই নিয়ে কথাও বলেছিল। কিন্তু তাকে সেই ঘর থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। নাবালক জানিয়েছে, সেদিন সে ঘরে থাকলে অন্য কোনও রোজগারের উপায় নিয়ে পরামর্শ দিতে পারত।
অনন্যা বলেন, প্রতীপের বাবা এবং কাকা মিলে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মা-কাকিমা শেষ মুহূর্তে ছাদে যেতে রাজি হননি। তখন বাবা এবং কাকা মিলে জোর করে তাঁদের মেরেছেন। ট্যাংরার প্রতীপ, তার বাবা প্রণয় এবং কাকা প্রসূন এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আলাদা আলাদা কক্ষে পুলিশি প্রহরায় আছেন তাঁরা।
গত বুধবার ট্যাংরার অটল শূর রোডের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তিনটি মৃতদেহ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দে পরিবারের দুই বধূ রোমি দে, সুদেষ্ণা দে এবং কিশোরী প্রিয়ম্বদাকে খুন করা হয়েছে। ওই দিন ভোরেই বাইপাসের ধারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি গাড়ি। তাতে ছিলেন দে পরিবারের দুই ভাই প্রণয়, প্রসূন এবং কিশোর প্রতীপ। পুলিশ দুই ভাইকে জেরা করতেই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। প্রতীপের দাবি, তার কাকা প্রসূন পরিবারের তিন সদস্যকে খুন করেছেন। প্রণয় ও প্রসূন সুস্থ হলে তাঁদের জেরা করবে পুলিশ।