শনিবার বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে ছোট ভাই প্রণয় দে-কে। তাঁকে সেখান থেকে এনআরএস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ট্যাংরার ‘দে’ পরিবারের দুই পুত্রবধূ ও নাবালিকা কন্যার রহস্য মৃত্যুর জট কাটাতে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। সেজন্য প্রণয় ও প্রসূনকে হেফাজতে পেতে চায় পুলিশ। দুই ভাইকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চান তদন্তকারী আধিকারিকরা। তার আগে তাঁদের শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা হবে। এর পরেই হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ইতিমধ্যে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বড় ভাই প্রসূনকে ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। রবিবার প্রসূনের বুকের সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। বক্ষ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে সোমবার ছেড়ে দেওয়া হবে। তাঁর সঙ্গে নাবালক পুত্র প্রতীপ দে-কেও ছাড়া হবে। দুজনকে নিয়ে যাওয়া হবে অন্যত্র।
প্রসঙ্গত পথ দুর্ঘটনার পর বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা চলছিল প্রণয়, প্রতীপ ও প্রসূনের। পরে তাঁদের অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শনিবার প্রণয়কে এনআরএস-এ স্থানান্তর করা হলেও থেকে যান প্রসূন এবং নাবালক পুত্র প্রতীপ। আর সোমবার এই দুইজনকে ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর নিয়ে যাওয়া হবে অন্য হাসপাতালে।
বুধবার ভোরে বাইপাসে অভিষিক্ত মোড়ে প্রসূন ও প্রণয়দের গাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন অভিষিক্তার মোড়ে মেট্রো রেলের পিলারে ধাক্কা মারে গাড়িটি। ঘটনায় নাবালক প্রতীপ সহ তিনজনে গুরুতর জখম হন। পুলিশ তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, ট্যাংরায় তাঁদের বাড়িতে আরও তিনজনের দেহ পড়ে রয়েছে। এরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই বধূ রোমি দে, সুদেষ্ণা দে ও প্রসূনের কন্যা প্রিয়ম্বদার মৃতদেহ উদ্ধার করে। পুলিশের জেরার মুখে প্রণয় ও প্রসূন দাবি করেন, তাঁরাও আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে ওই পিলারে গাড়ি সমেত ধাক্কা মারেন।
পরে তদন্তে জানা যায়, ট্যাংরায় ‘দে’ পরিবারের মৃত তিনজনকেই খুন করা হয়েছে। কিন্তু কে খুন করল, কেন করল এবং কীভাবে এই খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তা এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। সেই রহস্যের উন্মোচনে প্রণয় ও প্রসূনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে মরিয়া পুলিশ। কিন্তু গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ মেলেনি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া হলেই তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবে পুলিশ।
যত দিন গড়াচ্ছে, ট্যাংরার তিন মৃত্যু নিয়ে রহস্য ক্রমশ জটিল হচ্ছে। বাইপাসের দুর্ঘটনার পরে প্রসূন দাবি করেছিলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে একসঙ্গে পরিবারের ছয়জন সদস্য আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁদের পায়েসে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেয়েছিলেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুই বধূর হাত ও গলার শিরা কাটা হয়েছিল। এই বিষয়টি নিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। এই দাবি কতটা সত্যি, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে পুলিশের। কারণ, পরিবারের দুই বধূ সুদেষ্ণা দে ও রোমি দে এবং প্রসূনের নাবালিকা মেয়ে প্রিয়ম্বদাকে খুন করা হয়েছে বলেই তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান। নিহত তিনজনের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তদন্তকারীদের মাথায় নানা বিষয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ গাড়ি দুর্ঘটনায় অসুস্থ থাকার কারণে ওই পরিবারের জীবিত তিন সদস্যকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। তাঁরা মুখ খুললেই রহস্যের জট কাটবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
যদিও তদন্তকারীদের অনুমান, ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরের দিন দুই ভাই এবং কিশোর জেগে ওঠেন। কিশোরীর মৃত্যু হয়েছিল খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরেই। পরে ঘুমন্ত অবস্থায় হাতের শিরা ও গলার নলি কেটে দুই বধূর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এই খুনের ঘটনায় কার ভূমিকা কী ছিল, তা জানতে দুই ভাইকেই পূর্ণাঙ্গ জিজ্ঞাসাবাদের ভাবনা লালবাজারের।