কলকাতার বড়বাজার সংলগ্ন মেছুয়া বাজারের হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করল কলকাতা পুলিশ। ধৃতের নাম খুরশিদ আলম। তিনি কড়েয়ার বাসিন্দা। এই হোটেলে যে অবৈধ নির্মাণ হয়েছিল, খুরশিদ ছিলেন সেই কাজের ঠিকাদার। হোটেল কর্তৃপক্ষের বরাত পেয়ে তিনিই এই অবৈধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। এই নিয়ে মেছুয়া বাজার ফলপট্টির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর হোটেলের দুইজন মালিক পালিয়ে যান। ঘটনার দেড়দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার সকালে হোটেল মালিক আকাশ চাওলা এবং ম্যানেজার গৌরব কাপুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। ওই দিনই পরে ঠিকাদার খুরশিদ আলমকেও গ্রেপ্তার হয়। হোটেলের অপর মালিক অতুল চাওলার অবশ্য এখনও খোঁজ মেলেনি। তাঁর খোঁজে সম্ভাব্য সব এলাকায় তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত হোটেলটির ৪২টি ঘর মিলিয়ে প্রায় ৮৮জন গেস্ট ছিলেন। আগুন লাগতেই আতঙ্কে তাঁদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। গোটা এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। প্রাণ বাঁচাতে হোটেলের ছাদে উঠে অনেকে ঝাঁপ দেন। একতলার ঘরে থাকা লোকজন প্রাণভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। হোটেলের ঘরে আটকে পড়েন আরও অনেকে। হাইড্রোলিক ল্যাডারের সাহায্যে ছাদে ওঠা প্রায় ২৫জন ব্যক্তিকে নামিয়ে আনা হয়। অগ্নিনির্বাপণের পর দমকলকর্মীরা দেখেন, ওই হোটেলের সিঁড়িতে অচৈতন্য অবস্থায় অনেকেই পড়ে রয়েছেন। এভাবে তিনতলা, চারতলা এবং পাঁচতলার সিঁড়ি থেকে অচৈতন্য অবস্থায় অনেককেই উদ্ধার করা হয়। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই ১৩জন অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান। আরও একজন ছাদের উপর থেকে ঝাঁপ দেওয়ার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বড়বাজারের মদন মোহন মেছুয়াবাজার ফলপট্টির এই হোটেলে আচমকা আগুন লাগে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ জোড়াসাঁকোর চিৎপুর মোড়ের কাছে এই ছ’তলা হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে দমকলের ১১টি ইঞ্জিন। সেগুলির সাহায্যে দমকল বিভাগের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। কিন্তু হোটেলে অগ্নিনির্বাপণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, হোটেলের বাইরে থেকে ভিতরের দিকে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের পাইপলাইন থাকলেও সেগুলি কোনও জলাধারের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। গোটা বিল্ডিংয়ে থাকা পাইপলাইনে স্প্রিং কলার সহ অন্যান্য মেশিনারিও লাগানো নেই। স্বাভাবিকভাবেই অর্ধ-নির্মিত ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা বিপদের সময় কাজে আসেনি। সেজন্য দমকলবাহিনীকে অতিরিক্ত ইঞ্জিন এনে বাইরের জল দিয়ে আগুন নেভাতে হয়। তার জন্য দমকল বিভাগকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে পকেট ফায়ারগুলিতে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। এভাবে গোটা হোটেলে আগুন নেভাতে প্রায় ৮ ঘন্টা সময় লেগে যায়।