মুখে ‘বাংলার গর্ব’ আর ‘বঙ্গ সংস্কৃতি’র জয়গান গাইলেও বাস্তবে উত্তর কলকাতার জেলা কমিটিতে বাঙালিদের জায়গা হলো না বললেই চলে। বিজেপির সদ্য ঘোষিত উত্তর কলকাতা জেলা কমিটির ৯১ জন সদস্যের মধ্যে ৬৮ জনই অবাঙালি— এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জলঘোলা।
জানা গিয়েছে, জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষের নেতৃত্বে গঠিত নতুন কমিটিতে কার্যকরী সদস্যদের মধ্যে ৯১ জনের মধ্যে ৬৮ জন অবাঙালি। পদাধিকারীদের তালিকাতেও একই ছবি— ২৬ জনের মধ্যে ১৬ জনই অবাঙালি। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির অন্দরের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ‘যে জেলায় ৬০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৮টিই বাঙালি অধ্যুষিত, সেখানে এমন অবাঙালি প্রাধান্য কেন?’
Advertisement
প্রসঙ্গত, এক সময় বিজেপিকে বড়বাজার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল বলে সমালোচনা করা হতো। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর সেই বদনাম ঘুচেছিল বলে দাবি করেছিল দল। কিন্তু উত্তর কলকাতার জেলা কমিটির নতুন গঠনে ফের সেই পুরনো সমালোচনা মাথাচাড়া দিয়েছে।
Advertisement
দলীয় সূত্রের খবর, কিষাণ ঝাঁওয়ারের ঘনিষ্ঠদেরও এই কমিটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আবার লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তাপস রায়ের বিরুদ্ধে যাঁরা সরব হয়েছিলেন, তাঁদেরও কমিটিতে রাখা হয়েছে। ফলে জেলা সংগঠনের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া, নতুন কমিটিতে জোড়াসাঁকো এবং শ্যামপুকুর এলাকার নেতাদের আধিপত্যও স্পষ্ট। উত্তর কলকাতার বনেদি বাঙালি পাড়াগুলিতে এই নিয়ে অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
জেলা কমিটির তালিকা প্রকাশ হতেই তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘বঙ্গ সংস্কৃতির কথা বলে ভোট চাওয়া হয়, আর দল চালান বড়বাজারের নেতারা। এটাই বিজেপির প্রকৃত রূপ।’
দলীয় সূত্রে খবর, নতুন কমিটিতে সুযোগ না পাওয়ায় অন্তত একজন প্রবীণ নেতা ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। অনেকেই প্রকাশ্যে কিছু না বললেও অন্দরে অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, উত্তর কলকাতার মতো বনেদি এলাকায় বিজেপির এই পদক্ষেপে সংগঠন দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এমন সিদ্ধান্ত বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘যে এলাকায় বাঙালির সংখ্যা এত বেশি, সেখানে অবাঙালি প্রাধান্য বাঙালি ভোটারদের বিরূপ করতে পারে। বিজেপির নেতৃত্বকে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
তবে দলের অন্দরে ক্ষোভ বাড়লেও, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এখনও এই নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
Advertisement



