কলকাতা শহরের উড়ালপুল ও সেতুগুলোর নিচে যেসব খালি জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে দোকান বা বসতি তৈরি হয়েছে, সেগুলি এবার সরিয়ে ফেলা হবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে কেউ যেন আর সেই জায়গাগুলি দখল করতে না পারে, তা আটকাতে সেতুগুলির চারপাশ ঘিরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
শহরের বহু সেতু ও উড়ালপুলের নিচে বছরের পর বছর ধরে অনাধিকার বসবাস চলছে। কোথাও গৃহহীন মানুষজন আগুন জ্বালিয়ে রান্না করে, কোথাও আবার ছোট ছোট দোকান গজিয়ে উঠেছে। এইসব বসতি ও দোকানের কারণে উড়ালপুলের নিচ থেকে গঠনগত পরিদর্শন সম্ভব হয় না, ফলে সেতুর নীচের কাঠামোগত অবস্থা দেখা যায় না, যা বিপজ্জনক।
Advertisement
কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) ইতিমধ্যেই মা সারদামণি সেতুর নিচে ঘেরা দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও চেতলা ব্রিজ, চিংড়িঘাটা উড়ালপুল, বাগমারি সেতু, জীবনানন্দ সেতু, আম্বেদকর ব্রিজ ও ভিআইপি রোড থেকে বাইপাসে যাওয়া ব্রিজের নিচে থাকা অবৈধ কাঠামো ভাঙা ও ব্রিজ ঘেরার জন্য দরপত্র ডেকেছে কেএমডিএ।
Advertisement
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর নিউ আলিপুরের দুর্গাপুর সেতুর নিচে এক বস্তিতে আগুন লাগার পরেই টনক নড়ে প্রশাসনের। আগুনের তাপে সেতুর কংক্রিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, উড়ালপুল বা সেতুর নিচে বসবাস করতে দেওয়া হবে না।
কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি জানান, ‘সেতুগুলোর আয়ু দিন দিন কমে আসছে। নিচে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করার ফলে তাপের জন্য রডগুলো প্রসারিত হচ্ছে। এতে গঠন দুর্বল হয়ে পড়ছে। দুর্গাপুর ব্রিজের নিচে আগুন লাগার পর তার প্রভাব স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট তাপমাত্রার বেশি হলে কংক্রিট ও রড তাদের শক্তি হারিয়ে ফেলে। প্রতিদিন সেই তাপ লাগতে লাগতে এক সময়ে দুর্বল হয়ে পড়ে পুরো কাঠামো।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গাপুর সেতু মেরামত করতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে কেএমডিএ। সেই কাজের খরচও নেহাত কম নয় বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই আগুন সেতুর স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বড়সড় মেরামতের কাজ করতে হবে। অনেক টাকা লাগবে।’
প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট বার্তা, সেতুর গঠন ও শহরের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস নয়। সুরক্ষার স্বার্থে উড়ালপুলের নিচে সব অবৈধ দখল সরিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে।
Advertisement



