কলকাতায় বাঘাযতীনের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আতঙ্কের সৃষ্টি হল ট্যাংরায়। বুধবার সকালে ১১/২ ক্রিস্টোফার রোডে একটি নির্মীয়মাণ চারতলা ফ্ল্যাট হেলে পড়ে পাশের বাড়ির দিকে। এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ও কলকাতা পুরসভার প্রতিনিধি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এবং দুপুরের মধ্যেই ওই বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার থেকে এই বহুতল ভাঙার কাজ শুরু হবে। নির্মীয়মাণ জি-প্লাস-ফাইভ বহুতলটি হেলে পড়লেও এখনও পর্যন্ত সেখানে কেউ না থাকার কারণে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে কী কারণে এই বহুতলটি হেলে পড়ল, তা এখনও নিশ্চিত নয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বহুতলটি পাশের একটি বাড়ির গায়ে প্রায় ঠেকে গিয়েছে, এবং দুই ভবনের মাঝে কোনও ফাঁক না থাকায় বিপদের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
Advertisement
কলকাতা পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, নতুন বাড়ি নির্মাণে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট (সিসি) থাকা বাধ্যতামূলক। বাড়ির মালিকরা দাবি করেছেন, তাঁদের সিসি রয়েছে। যদি তা সত্যি হয়, তাহলে বাড়ি ভাঙার পরে পুরসভা ক্ষতিপূরণ দেয় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গোটা বিষয়টি বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Advertisement
ঘটনায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, যখন কোনও বাড়ির প্ল্যান অনুমোদিত হয়, তখন এলবিএস বা ইঞ্জিনিয়াররা সেই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন। তিনি আরও বলেন, ‘কলকাতায় হেলে পড়া বাড়ির সংখ্যা ৩০। এতে এতটা আতঙ্কের কিছু নেই। ট্যাংরার যেটি হেলে গিয়েছে, সেটি ভেঙে ফেলা হবে। বেআইনি বাড়ি নিয়ে যে কড়াকড়ি নিয়ম আমি করেছি, তা আর কেউ করেনি। এটি কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়, বরং টেকনিক্যাল ভুল। কর্পোরেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, এ ধরনের ঘটনায় কাউন্সিলরদের কোনও দায়িত্ব নেই।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রোমোটাররা সস্তা উপকরণ ব্যবহার করে দ্রুত মুনাফার জন্য কাজ করছেন। বেশিরভাগ বহুতলই নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি। এদিকে, ট্যাংরা থানার তরফে এলাকাবাসীকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। হেলে পড়া বাড়িটির কারণে আতঙ্কিত বাসিন্দারা পুরসভার পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছেন। বাঘাযতীনের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ট্যাংরার ঘটনা সেই আতঙ্ক আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে, বাঘাযতীনে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় তৃণমূল কাউন্সিলর মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার কলকাতা পুরসভায় বিক্ষোভ দেখান বর্তমান ও প্রাক্তন বাম কাউন্সিলররা। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ঘরের বাইরে বিক্ষোভের পাশাপাশি তাঁরা একটি ডেপুটেশন জমা দেন।
বামফ্রন্ট অভিযোগ করেছে, জুন থেকে নভেম্বর মাসে ৫৫০টিরও বেশি বেআইনি নির্মাণ হয়েছে, যেখানে কাউন্সিলর, পুলিশ ও প্রোমোটাররা জড়িত। তারা মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। বামেদের দাবি, জলাভূমি ভরাট, গাছ কেটে নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে হেলে পড়া বাড়ির বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
মেয়র জানিয়েছেন, ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনায় দুই ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ নোটিস দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নবান্নে জমা দেওয়া রিপোর্ট অনুমোদিত হলে বেআইনি নির্মাণ কার্যকরভাবে বন্ধ করা হবে।
Advertisement



