আসন্ন বর্ষাকালে শহর কলকাতাকে জলজট থেকে রক্ষা করতে সোমবার কলকাতা পুরসভার সদর দপ্তরে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই যৌথ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভা, আবহাওয়া দপ্তর, সেচ দপ্তর, পূর্ত দপ্তর, কলকাতা পুলিশ, সিইএসসি এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
বৈঠক শেষে মেয়র জানান, ‘বর্ষার আগে একবার পুরো প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। শহরের যে সমস্ত খাল রয়েছে, সেগুলোর বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনা করা হয়েছে। বেশিরভাগ খালের পরিস্থিতি সন্তোষজনক।’ এছাড়াও, শহরের ফ্লাইওভারগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, কে এম ডি এ-র চলতি কাজ এবং বন্দর এলাকার অবস্থা নিয়েও বিস্তারে আলোচনা হয় এদিনের বৈঠকে।
মেয়র জানান, সিইএসসি-কে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যে কোনও পরিস্থিতিতে নজরদারি বাড়াতে। কলকাতা পুরসভার প্রধান দায়িত্বগুলির মধ্যে রয়েছে পাম্পিং স্টেশনগুলিকে সচল রাখা এবং লকগেটগুলির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ। শহরের বিভিন্ন নিকাশি নালা থেকে কয়েক লক্ষ টন পলি তুলে ফেলা হয়েছে বলেও তিনি জানান। তাঁর কথায়, ‘এখন এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে বর্ষার সময় কলকাতার কোথাও পাঁচ ঘণ্টার বেশি জল না দাঁড়ায়। গঙ্গার জল যখন ভাটায় থাকে, তখন বৃষ্টির জল সহজেই বেরিয়ে যায়। সমস্যা হয় যখন বৃষ্টি হয় জোয়ারের সময়।’
ফিরহাদ আরও বলেন, কলকাতা পুলিশ এবং পুরসভার কন্ট্রোল রুমের মধ্যে যোগাযোগ আরও নিবিড় করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেকোনও বিপর্যয়ের সময়, বিশেষ করে গাছ পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পুরসভার বিভিন্ন বোরো থেকে দ্রুত কর্মী পাঠানো হবে।
‘কলকাতা এনভারমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রজেক্ট’ -এর কাজ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। মেয়রের দাবি, এই প্রকল্পের আওতায় নিকাশি ও রাস্তা তৈরির কাজ চলেছে বিভিন্ন জায়গায়। এখনও অনেক জায়গায় কাজ শেষ হয়নি, বিশেষ করে সংযুক্ত এলাকায়। যেখানে কেইআইআইপির পক্ষে কাজ সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে কলকাতা পুরসভা নিজের উদ্যোগে কাজ করছে রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তায়। এই সমস্ত কাজ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে বৈঠকে সবচেয়ে বেশি অসন্তোষ ধরা পড়েছে বন্দর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে। মেয়র আরও বলেন, ‘পোর্ট ট্রাস্ট এলাকার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনও ডেসিল্টিং হয়নি। পুরসভাকেই অনেক রাস্তার কাজ করতে হয়েছে। আগে সেভাবে সহযোগিতা মেলেনি, ভবিষ্যতেও কতটা মিলবে সন্দেহ আছে। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
বর্ষার আগে শহরকে জলজটমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে এই সমন্বিত পদক্ষেপে আশার আলো দেখছেন শহরবাসী। প্রশাসনের নজরদারি এবং সমন্বয় থাকলে এ বছর পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।